বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই পাকিস্তান থেকে নৌপথে যোগাযোগ ছিলো সম্পূর্ণ বন্ধ। তবে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গত নভেম্বরের করাচি বন্দর থেকে প্রথমবারের মতো আসে চট্টগ্রামে ভেড়ে কন্টেইনারবাহী জাহাজ। আর এতে ব্যাপক শোরগোল পড়ে যায়।
এই শোরগোল যতোটা হয়েছে বাংলাদেশে, তারচেয়ে বেশি হয়েছে ভারতের সংবাদমাধ্যমে। চট্টগ্রাম বন্দরে ভেড়া সেই জাহাজে কনটেইনারভর্তি কি কি পণ্য ছিলো, তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে ভারতের মিডিয়া।
যদিও বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে যেসব খবর প্রকাশিত হয়, তার সঙ্গে মেলেনি ভারতীয় সাংবাদিকদের অনুমান। এবার ভারতের মাথাব্যথার কারণ হয়ে আবারও করাচি বন্দর থেকে চট্টগ্রাম আসছে কন্টেইনারবাহী সেই একই জাহাজ ‘এমভি ইউয়ান জিয়াং ফা ঝং।
আগের তুলনায় এবার সেই জাহাজ দ্বিগুণেরও বেশি কনটেইনার বোঝাই করে আনা হচ্ছে বলে বন্দর সূত্রে জানা গেছে। আগামী শুক্রবার চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় পৌঁছানোর কথা এমভি ইউয়ান জিয়াং ফা ঝং-এর। এবার জাহাজটিতে ৮২৫টির মতো কনটেইনার রয়েছে।
এসব কনটেইনার নামানোর পর, চট্টগ্রাম প্রায় ১২০০ কনটেইনার নেওয়ার পরিকল্পনা করছে জাহাজটি। স্বাধীন বাংলাদেশে পাকিস্তানের সরাসরি কনটেইনার জাহাজ যোগাযোগ চালু হয় গত ১৩ নভেম্বর। প্রথমবার ৩৭০ একক কনটেইনার আনা হয়।
এর মধ্যে পাকিস্তান থেকে আসে ২৯৭টি একক কনটেইনার, বাকিগুলো সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। এদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের দ্বার উন্মুক্ত হওয়া এবং চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ ভেড়ার ঘটনা নিয়ে একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ফলেন পরিসি।
সেই প্রতিবেদনের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশে ভারতের ভাগ্যের পরিবর্তন। প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, পাঁচ দশকের বিরতির পর, গত মাসে একটি পাকিস্তানি পণ্যবাহী জাহাজ বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রামে নোঙর করে।
জাহাজটি আসার মাধ্যমে পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়, যা ১৯৭১ সালে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ঢাকা, ইসলামাবাদ থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহও বাড়িয়েছে এবং পাকিস্তানি আমদানির সম্পূর্ণ শুল্ক পরিদর্শনের কড়াকড়ির অভ্যাসও ত্যাগ করেছে।
ফরেন পলিসির বিশ্লেষণে আরও বলা হয়েছে, ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে হাসিনার বিদায় ভারতকে অন্ধ করে দেয়। আর প্রধান রাজনৈতিক বিরোধী দল বিএনপির সাথে তাদের সম্পর্ক ছিলো শীতল।
আরও পড়ুন: ভারতের আকাশে বাংলাদেশি ড্রোন: মেঘালয়ের উপ-মুখ্যমন্ত্রী
ফলস্বরূপ, নয়াদিল্লি এখন বাংলাদেশে খুব কম মিত্র খুঁজে পাচ্ছে। যদিও ইউনূস ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার আগ্রহ পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
তবে বাংলাদেশের সাথে ভারতের নিজস্ব সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে, ভারতের সন্দেহের কারণেই পাকিস্তানের প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মনোভাব স্পষ্টতই প্রকট হচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।