ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪, ০৬:০৬ পিএম
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পূর্বাচলের ২ নম্বর সেক্টরের লেক থেকে এবার সাইনুর রশিদ ওরফে কাব্য (১৬) নামে এক কিশোরের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত সাইনুর কাফরুল থানার কচুক্ষেত বউবাজার এলাকার হারুনুর রশিদের ছেলে। সে রাজধানীর আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। খবর সমকাল।
বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর সকালে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সহায়তায় পুলিশ সাইনুরের লাশটি উদ্ধার করে। লাশের সঙ্গে সাইনুরের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল পানি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাইকটি সাইনুরের বলে শনাক্ত করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার একই স্থান থেকে সুজানা আক্তার (১৭) নামে এক কিশোরীর লাশ উদ্ধার করা হয়। সুজানার লাশ উদ্ধারের সময় একটি হেলমেট ও ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছিল। সুজানা ও সাইনুর বন্ধু ছিল।
আজ দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার তার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে মোটরসাইকেলের ওভারস্পিডের কারণে দুর্ঘটনায় ওই কিশোর-কিশোরী নিহত হয়েছে। তবে আমরা সব কটি বিষয় মাথায় রেখেই তদন্ত চালাচ্ছি। আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে সুজানা ও সাইনুরের ময়নাতদন্ত হবে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।’
সহকারী পুলিশ সুপার ‘গ’ সার্কেল মেহেদী ইসলাম নিহতদের পরিবারের বরাত দিয়ে বলেন, সুজানা ও কাব্য ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হলেও একসঙ্গে কোচিং করার সুবাদে তাদের মাঝে বন্ধুত্ব হয়। সোমবার বিকেলে সুজানা বান্ধবীর বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে কাব্যর সঙ্গে পূর্বাচলে মোটরসাইকেলে করে বেড়াতে আসে। পরে সুজানা আর কাব্য বাড়িতে না ফিরলে পরিবারের লোকজন তাদের বিভিন্ন স্থানে খুঁজতে থাকে। মঙ্গলবার সকালে পূর্বাচলের ২ নং সেক্টরের ৪ নং ব্রিজের লেক থেকে শিক্ষার্থী সুজানার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আজ সকালে একই স্থান থেকে মোটরসাইকেলসহ কাব্যের লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পূর্বাচলে বেড়াতে এসে রাতের যে কোনো সময় অতিরিক্ত গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পূর্বাচলের লেকে পড়ে গিয়ে তাদের মৃত্যু হয়। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
নিহত কাব্যের বাবা হারুনুর রশীদ বলেন, সোমবার ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে সে বাড়ি থেকে বের হয়। এর পর থেকে কাব্য নিখোঁজ ছিল। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজির পর তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার সকালে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সুজানার লাশ উদ্ধারের সংবাদ প্রচারের পর জানতে পারি কাব্য সুজানার সঙ্গে পূর্বাচলে বেড়াতে গিয়েছিল। বুধবার সকালে একই জায়গা থেকে মোটরসাইকেলসহ কাব্যের লাশ উদ্ধার করা হয়। এটিকে প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনা বলে মনে হচ্ছে। বাকিটা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসলে জানা যাবে। এ ঘটনার পেছনে অন্য কোনো রহস্য আছে কিনা তা পুলিশকে খুঁজে বের করবে বলে আশা করছি।
এদিকে সুজানার মরদেহ নিতে আজ সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে আছেন সুজানার মা চম্পা বেগম, ভাই মেহেদী হাসানসহ স্বজনেরা। বেলা তিনটা পর্যন্ত ময়নাতদন্ত না হওয়ায় তারা হাসপাতালেই অপেক্ষা করছিলেন।
মেয়ের মৃত্যুশোকে কাতর চম্পা বেগম বলেন, মেয়ের বাইকে চড়ার শখ ছিল। প্রায়ই বন্ধুদের সঙ্গে বাইকে করে ঘুরতে বের হতো। সোমবার বিকেলে টিউশনির জন্য মেয়ে ঘর থেকে বের হয়। এরপর আর বাসায় ফেরেনি মেয়ে। রাত নয়টার দিকে মোবাইল ফোনে কল করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।