দুধ অত্যন্ত সুষম একটি খাবার। এতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, স্নেহ, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানির মতো ছয়টি উপাদান। প্রকৃতি থেকে যতগুলো খাদ্য পাওয়া যায়, তারমধ্যে সম্পূর্ণ খাবার হচ্ছে এই দুধ। সেই সুপ্রাচীনকাল থেকেই এটি মানুষের অন্যতম প্রধান খাদ্য হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।
শিশু থেকে বৃদ্ধ- সব বয়সের মানুষের দেহের প্রয়োজনীয় প্রায় সব পুষ্টির প্রধান একটি উৎস দুধ। মানবদেহকে সুস্থ রাখতেও এটি অতুলনীয়।
অঞ্চলভেদে বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর দুধ খান মানুষেরা। গরুর দুধ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। তবে ছাগল, মহিষ, ভেড়া, উট –এমনকি কোনো কোনো অঞ্চলে ঘোড়ার দুধও পান করেন অনেকে।
কিন্তু এবার শোনা গেলো নতুন এক তথ্য। আর তা হলো- মাছ থেকে তৈরি করা হচ্ছে দুধ। আর সেই দুধ পান করবে মানুষ। একটু তাজ্জব মনে হলেও ঘটনা কিন্তু সত্য।
বিশ্বের অন্যতম জনবহুল দেশ ইন্দোনেশিয়া। জনসংখ্যার দিক দিয়ে এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশও। কিন্তু সেখানে দেখা দিয়েছে গরুর সংকট। আর সেই সংকট মোকাবিলা করতেই মাছ থেকে দুধ তৈরি করা হচ্ছে।
যদিও মাছের দুধের গুনাবলি এখনো বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়। তবুও ইন্দোনেশিয়ানরা এই ধরনের দুধ উৎপাদনের ধারা চালু রেখেছেন। তবে এই দুধ কোনো মাছকে দোহন করে বানানো হচ্ছে না। তৈরি করা হচ্ছে সামুদ্রিক পনিফিশ থেকে। মাছ শিকারের পর সেই মাছের ফিলেট করা হয়। সেটা আবার পিষে গুঁড়ো করে বানানো হয় পাউডার দুধ।
ভৌগোলিকভাবে ইন্দোনেশিয়ার অবস্থা ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝে। ১৭ হাজার দ্বীপ নিয়ে গঠিত এই দেশটির প্রায় চারপাশই সমুদ্র পরিবেষ্টিত। তাই এখানে সামুদ্রিক মাছের অভাব নেই। দেশটির উপকূলীয় পানিতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় পনিফিশ। সেই মাছ ধরে দুধ তৈরির উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মাছের তৈরি এই ধরনের পাউডার প্রোটিন সমৃদ্ধ।
মাছে থাকে আঁশটে গন্ধ। সেই গন্ধ যেনো দুধে না থাকে, সেজন্য বিজ্ঞানীদের সহায়তা নেয়া হয়। মাছ থেকে পাউডার দুধ বানানোর সময় যোগ করা হয় এক ধরনের মিষ্টি। এর ফলে পানি মিশিয়ে তরল দুধ খাওয়ার আঁশটে গন্ধ আর মাথায় আসে না।
এই দুধ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত একটি কোম্পানি হলো বেরিকান প্রোটিন ইনিশিয়েটিভ। গত এক বছর ধরে তারা বাজারজাত করছে মাছের দুধ। কোম্পানিটির ম্যানেজার মাফাতিহুল খোইরি বলেন, এটির স্বাদ সাধারণ দুধের মতোই, অন্তত আমার কাছে তাই মনে হয়।
এদিকে ইন্দোনেশিয়ার শিশুদের স্কুল মিলেও এই দুধ সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে দেশটির সরকার। যদিও পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা নতুন এই খাদ্য পানীয়টি নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান। তাদের মতে, পণ্যটি অতিপ্রক্রিয়াজাত হওয়ায় শরীরের জন্য বিশেষ কোনো সুবিধা বয়ে আনে না। এছাড়া দুধ উৎপাদনে কৃত্রিম মিষ্টি ব্যবহার করাটাও পছন্দ করেন না পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা।
আবার মাছের দুধ তৈরির পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও খুঁজছেন অনেকে। তারা বলছেন, দেশে হয় গরু পালন বাড়াতে হবে, না হয় প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়া থেকে দুধ অথবা গরু আমদানি করতে হবে। মাছের পাউডারে দুধ তৈরির আগে অনেক বিকল্পই ভাবা যেতে পারে বলেও মনে করেন তারা।