ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪, ১২:৪৯ পিএম
জাতীয় নির্বাচন ২০২৫ সালের শুরুতে বা কৌশলগতভাবে বিলম্বিত করে ২০২৬ সালের দিকে নেয়ার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক ইঙ্গিত বিএনপির মধ্যে তুমুল মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।
যদিও কিছু নেতা সতর্কতার সঙ্গে দীর্ঘায়িত রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা অবসানের পদক্ষেপ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার সংকেতটিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে অন্যরা সংশয় প্রকাশ করে এটিকে ‘রোডম্যাপ ছাড়া একটি অসম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতি’ বলে অভিহিত করেছেন। খবর ইউএনবি।
বিএনপি সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, দ্রুত নির্বাচন অতি প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সমাধানের পথ তৈরি করতে পারে। আর বিলম্বিত নির্বাচন হতে পারে সময় কেনা এবং সরকারের প্রভাব বাড়ানোর কৌশলগত চেষ্টা।
বিএনপি নেতারা বলছেন, ‘সময়সীমা নিয়ে কয়েক মাসের অস্পষ্টতার পরে অবশেষে নির্বাচনের কথা শুনে ভাল লাগছে - তাড়াহুড়ো বা বিলম্বিত হোক না কেন - একটি কৌশলগত ভারসাম্যের কাজ বলে মনে হচ্ছে। সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ছাড়া আমরা সরকারের আসল উদ্দেশ্য অনুমান করতে পারছি।’
মিশ্র প্রতিক্রিয়া দলের মধ্যে আশা এবং সন্দেহ উভয়ই তুলে ধরে। বিএনপি নেতারা সম্ভাব্য আগাম শোডাউনের প্রস্তুতি বা দীর্ঘ অপেক্ষার জন্য প্রস্তুত হওয়ার চ্যালেঞ্জগুলো মূল্যায়ন করেন। এটি তাদের নিচের পর্যায়ে রাজনৈতিক ভিত্তি পরিবর্তন করতে পারে।
দলটির নেতারা বলেন, বিএনপি আগামী ৪-৫ মাসের মধ্যে নির্বাচনি সংস্কার কাজ শেষ করতে চায় এবং আগামী বছরের আগস্টের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। যাতে সরকারকে এক বছরের মেয়াদ পূর্ণ করার সুযোগ দেয়া হয়।
তারা আরও মনে করেন, ২০২৬ সালের শুরুর দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বলে প্রধান উপদেষ্টা যে উল্লেখ করেছেন, তা তার সরকারের মেয়াদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার কৌশলের অংশ হতে পারে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনে সরকার সম্মত হতে পারে।
তারা বলছেন, অন্য রাজনৈতিক দলগুলো এতটুকু সময় দিতে রাজি হলে বর্তমান সরকারকে আগামী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ দিতে পারেন তারা।
এর আগে সোমবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ২০২৫ সালের শেষের দিকে বা ২০২৬ সালের প্রথম দিকে ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে।
টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, ‘বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে, ২০২৫ সালের শেষ থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে।’ ড. ইউনূস নির্বাচনের আগেই সব ধরনের সংস্কার সম্পন্ন করার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে ভাষণে আগামী নির্বাচন সম্পর্কে যা বলেছেন তাতে আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট নই, কারণ তিনি কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বা রোডম্যাপ পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেননি। তবে আমরা কিছুটা স্বস্তি বোধ করছি এবং আশা করছি সরকার অন্তত নির্বাচন নিয়ে ভাবছে।’
তিনি বলেন, তাদের দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, সরকার আন্তরিক হলে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে। ‘আমরা আরও বিশ্বাস করি, সরকারের এক বছর মেয়াদ প্রয়োজনীয় নির্বাচনি ও অন্যান্য সংস্কার করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের একটি যৌক্তিক সময়সীমা। কিন্তু সরকারের ভেতরের কিছু লোক সংস্কারের নামে সময় কিনতে চায়, শুধু ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্য।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকারের গঠিত বিভিন্ন সংস্কার কমিশন চলতি মাসের শেষের দিকে তাদের প্রস্তাব নিয়ে আসতে পারে।
তিনি বলেন, ‘পরে সরকার এসব প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারে এবং ঐকমত্যের মাধ্যমে সংস্কারের একটি রূপরেখা তৈরি করতে পারে। যে রাজনৈতিক সরকার নির্বাচনে জনগণের ভোটে সরকার গঠন করতে পারবে, সেই রাজনৈতিক সরকার তখন সংসদে সংস্কার কাঠামো বাস্তবায়ন করবে। এটাই প্রক্রিয়া হওয়া উচিত, কিন্তু সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার অভিপ্রায়ে এটাকে জটিল করে তুলছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে শেখ হাসিনার শাসনবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে যেসব রাজনৈতিক দল তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে তাদের সঙ্গে তারা এখন কথা বলবেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে কথা বলব। খুব বেশি হলে নির্বাচনের জন্য আগামী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। আমরা মনে করি, সরকার চূড়ান্তভাবে আগামী বছরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনে সম্মত হতে পারে।’
তিনি বলেন, তাদের স্থায়ী কমিটি তাদের পরবর্তী বৈঠকে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করবে এবং তাদের পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে কাজ করবে।
যোগাযোগ করা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশন আন্তরিক হলে আগামী ডিসেম্বরের আগেই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব।
তিনি বলেন, সরকারের উচিত যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, কারণ সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে এবং বিদ্যমান সমস্যা থেকে উত্তরণের মাধ্যমে দেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে একটি নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন।
মোশাররফ বলেন, ‘নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করা হলে জনগণ নির্বাচনমুখী হয়ে উঠবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে থাকলে তারা ষড়যন্ত্র বরদাশত করবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বুঝতে হবে, আগাম নির্বাচন তাদের জন্য এবং দেশের জনগণের জন্য লাভজনক হবে।’
দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার পর সরকারের কার্যক্রম তারা সতর্কতার সঙ্গে তদারকি করবেন।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন আয়োজনে খুব বেশি সময় লাগার কথা নয়। সরকার আন্তরিক হলে জনগণের ইচ্ছার আলোকে দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব।’
খসরু বলেন, সরকার সংস্কারের রূপরেখা দিতে পারে। কিন্তু নির্বাচিত সরকারই সংসদের মাধ্যমে এসব সংস্কার বাস্তবায়ন করবে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমুন্নত রাখবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে শুধু নির্বাচনের সময় সম্পর্কে একটি ধারণা দিয়েছেন, ‘কোনো সুস্পষ্ট রোডম্যাপ নেই।’
সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য কত সময় প্রয়োজন তা তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) স্পষ্ট করেননি। ‘আমরা আশা করি, তিনি একটি রোডম্যাপ দেবেন, যেখানে সংস্কার ও নির্বাচন উভয়ের সময়সীমা নির্দিষ্ট থাকব।’