ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারদের আয়ই সবচেয়ে বেশি

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক

জানুয়ারি ৫, ২০২৪, ১২:৪১ এএম

ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারদের আয়ই সবচেয়ে বেশি

ফাইল ছবি

শিশুদের ‘এইম ইন লাইফ’ বা ‘জীবনের লক্ষ্য’ জানতে চাওয়া হলে উত্তরে ‘ডাক্তার’ বা ‘ইঞ্জিনিয়ার’ শুনতেই বেশি আশা করে সবাই। বাবা-মাও ছোটবেলা থেকেই সন্তানকে বুঝাতে শুরু করেন চিকিৎসা ও প্রকৌশলবিদ্যায় আগ্রহী করার জন্য। সামাজিক-অর্থনৈতিক মর্যাদার কথা বিবেচনা করেই এই ভবিষ্যৎ ভাবনা চলে আসে। 

এবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপ জানালো চিকিৎসক ও প্রকৌশলীরা আয়ের দিক থেকে অন্যান্য পেশাজীবীদের থেকে এগিয়ে আছেন।

বিবিএসের খানা আয় ও ব্যয় জরিপের তথ্যানুযায়ী, চিকিৎসক পরিবারের সদস্যদের মাসিক মাথাপিছু আয় সবচেয়ে বেশি। পরিবারের কর্তা একজন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হলে সেই পরিবারের উপার্জন বেড়ে যায়। পরিবারভিত্তিক মাসিক মাথাপিছু আয়ও তুলনামূলকভাবে বেশি হয়ে থাকে। 

বিবিএসের তথ্যউপাত্ত বলছে, কোনো পরিবারের প্রধান একজন পুরুষ ডাক্তার হলে ওই পরিবারের সদস্যদের মাসিক মাথাপিছু গড় আয় হয় ৪৬ হাজার ৯৩৮ টাকা। পরিবারের প্রধান একজন নারী ডাক্তার হলে সদস্যদের গড় আয় আরেকটু বেশি। সে ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের গড় আয় হয় ৪৮ হাজার ৪৮৪ টাকা।

বর্তমানে দেশে প্রতি পরিবারে গড় সদস্য সংখ্যা ৪ দশমিক ২৬। সেই হিসাবে, একটি চিকিৎসক পরিবারের মাসিক আয় দাঁড়ায় ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯৫৫ টাকা থেকে ২ লাখ ৬ হাজার ৫৪১ টাকা। সারা দেশে বর্তমানে এক লাখের মতো চিকিৎসক আছেন, যাঁদের বেশির ভাগই শহর অঞ্চলে বাস করেন।

এবার দেখা যাক, প্রকৌশলী বা ইঞ্জিনিয়ারদের পরিবারে আয় কেমন। যেসব পরিবারের প্রধান একজন পুরুষ প্রকৌশলী, সেসব পরিবারের সদস্যদের মাসিক গড় আয় ৪৩ হাজার ৪৩৯ টাকা। সেই হিসাবে প্রতি মাসে একটি প্রকৌশলী পরিবারের গড় আয় ১ লাখ ৮৫ হাজার ৫০ টাকা। তবে পরিবারের প্রধান নারী এবং পেশায় প্রকৌশলী-এমন পরিবারের আয়ের হিসাব দেয়নি বিবিএস।

তবে বিবিএস বলেছে, এই জরিপটিতে ডাক্তার ও প্রকৌশলীদের নমুনাসংখ্যা কম। তাই আয়ের এই হিসাব পরিসংখ্যানগতভাবে খুব বেশি উল্লেখযোগ্য নয়। 

অন্যদিকে এই হিসাবে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের কোনো ক্লাসেই পাস করেননি এমন পুরুষ কর্তার পরিবারের সদস্যদের গড় আয় ৫ হাজার ৩২৭ টাকা। এই শ্রেণিতে নারী পরিবার প্রধান হলে সদস্যদের গড় আয় দাঁড়ায় কিছুটা কম, ৪ হাজার ২১৩ টাকা। কোনো ধরনের শিক্ষার সুযোগ পাননি—এমন পুরুষ পরিবারের কর্তা হলে সদস্যদের মাসে গড় আয় ৫ হাজার ৪৩৪ টাকা; আর নারী হলে সদস্যদের গড় আয় ৪ হাজার ৯৫২ টাকা।

প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন পুরুষ পরিবারের প্রধান হলে ওই পরিবারের সদস্যদের গড় আয় ৫ হাজার ৫৫৩ টাকা; আর পরিবারের মূল উপার্জনকারী নারী হলে সদস্যদের গড় আয় ৬ হাজার ৮৩০ টাকা।

অন্যদিকে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন, এমন পুরুষ যদি পরিবারপ্রধান হন, তাহলে ওই পরিবারের সদস্যদের গড় আয় ৬ হাজার ৭৬৩ টাকা এবং পরিবারের কর্তা নারী হলে সদস্যপ্রতি আয়ের পরিমাণ ৮ হাজার ৩১৩ টাকা।

এসএসসি এবং এইচএসসি ডিগ্রি আছে এমন পুরুষকর্তার পরিবারের সদস্যদের গড় আয় ১০ হাজার ৯৯ টাকা। এই শ্রেণিতে পরিবার প্রধান নারী হলে সদস্যদের গড় আয় কিছুটা বেড়ে হয় ১১ হাজার ৮৪৮ টাকা।

স্নাতক ডিগ্রি আছে এমন পুরুষ যদি পরিবারের প্রধান হন, তাহলে ওই ধরনের পরিবারের সদস্যদের গড় আয় ১৩ হাজার ৬১ টাকা এবং পরিবারের কর্তা নারী হলে সদস্যপ্রতি আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় গড়ে ৩৪ হাজার ৪৯৯ টাকা।

বিবিএসের জরিপে দেখা গেছে, স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী কর্তার পরিবারের প্রধান পুরুষ হলে সেই পরিবারের সদস্যদের গড় আয় দাঁড়ায় ২০ হাজার ২২৭ টাকা, আর পরিবারের কর্তা নারী হলে সদস্যপ্রতি আয়ের পরিমাণ গড়ে ১২ হাজার ৫৫৭ টাকা।

ডিপ্লোমা ও কারিগরি শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন একজন পুরুষ পরিবারপ্রধান হলে সেই পরিবারের সদস্যদের গড় আয় ৯ হাজার ৬৪৪ টাকা; আর পরিবারপ্রধান উপার্জনকারী নারী হলে সদস্যদের গড় আয় ৮ হাজার ৩১৭ টাকা।

মূলত পরিবারের কর্তার শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী একটি পরিবারের সদস্যদের গড় আয় কত, তার একটি হিসাব দেওয়া হয়েছে বিবিএসের এই সর্বশেষ খানা আয় ও ব্যয় জরিপে। তবে একটি পরিবারে বৃদ্ধ, শিশু কিংবা উপার্জন করতে পারেন না, এমন সদস্যও থাকেন। তাই হিসাবটিতে প্রতিটি পরিবারের উপার্জনক্ষম সদস্যদের মোট আয়কে সব সদস্যের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। জরিপে ১১টি শ্রেণিতে ভাগ করে পরিবারের মাথাপিছু আয়ের হিসাব করা হয়েছে। তবে পুরুষপ্রধান ও নারীপ্রধান পরিবারে সদস্যদের গড় আয়ের এই পার্থক্য কেন, সে সম্পর্কে জরিপে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।

Link copied!