নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাধারণত আর্থিক প্রবাহ বৃদ্ধির পাশাপাশি বাজারে টাকার প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাকার প্রবাহ বাড়েনি। বরং উল্টো ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির পাশাপাশি মেগাপ্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে যাওয়া ও বেশ কয়েকটি দলের নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ফলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, আগস্টে বাজারে টাকার প্রবাহের স্থিতি ছিল ১৮ লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকার কিছুটা কম। সেপ্টেম্বরে তা খুব সামান্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকা। বৃদ্ধির হার প্রায় শূন্য। তবে সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে বেড়েছে মাত্র ০. ২৭ শতাংশ। অর্থাৎ ৫ হাজার কোটি টাকা বেড়ে অক্টোবরে টাকার প্রবাহের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকায়। একই সময়ে ব্যাংক থেকে মানুষের হাতে যাওয়া টাকার পরিমাণ কমেছে। অর্থাৎ গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা ব্যাংকে এসেছে বেশি!
আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে ব্যাংকবহির্ভূত মুদ্রা কমেছিল ১ দশমিক ৫৫ শতাংশ। অক্টোবরে তা আরও কমেছে ৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে ব্যাংকবহির্ভূত মুদ্রা ছিল ২ লাখ ৫৪ কোটি টাকা। অক্টোবরে তা কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকায়।
এবারের নির্বাচনে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো অংশ নিচ্ছে না। যে কারণে অনেক আসনেই নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ হচ্ছে না। ফলে প্রার্থীদের অনেকেই স্বস্তিতে রয়েছেন। যে কারণে সার্বিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় এর কোনো প্রভাব নেই।
সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সব দলের অংশগ্রহণে ২০০৮ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২৯ ডিসেম্বর। বৈশ্বিক মন্দার ফলে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ছিল তখনও। ওই বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে টাকার প্রবাহ বেড়েছিল ১.৮৭ শতাংশ। একইভাবে ব্যাংকবহির্ভূত মুদ্রা বেড়েছিল ৪.০৩ শতাংশ।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নির্বাচনের আগে আর্থিক প্রবাহ বাড়ে। যদিও কালো টাকার ব্যবহারের প্রবণতা থাকে। তবে বর্তমানে হয়তো অনেকেই এটাকে প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ ভাবছে না। অনেক প্রার্থী হয়তো রাজনৈতিক অবস্থান অক্ষুণ্ণ রাখতে নির্বাচনে আসছে। ফলে যে পরিমাণ খরচ করার কথা সেগুলো হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, অতীতে দেখা যায় গড়ে প্রার্থী কোটি টাকাও খরচ করেছে। যেগুলো ব্যাংক বহির্ভূত লেনদেনের ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পেরেছি। এবার সেগুলো কম।
২০১৪ সালের নির্বাচন হয়েছিল ৫ জানুয়ারি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ওই সময়ে নির্বাচনের আগে আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে টাকার প্রবাহ বেড়েছিল ১.১৩ শতাংশ। ওই মাসে স্থিতি ছিল ৬ লাখ ২৭ হাজার টাকা। অক্টোবরে বেড়েছে ২.০৭ শতাংশ। স্থিতি ছিল ৬ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। নভেম্বরে স্থিতি ছিল ৬ লাখ ৪৩ হাজার কোটি টাকা। বৃদ্ধির হার ছিল ০.৪৭ শতাংশ। ডিসেম্বরে তা আরও বেড়ে স্থিতি দাঁড়ায় ৬ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকায়। বৃদ্ধির হার ছিল ১.৭১ শতাংশ। ডিসেম্বরে আবার ব্যাংকবহির্ভূত মুদ্রা বেড়ে যায় ১ দশমিক ৪২ শতাংশ। ওই সময়ে স্থিতি ছিল ৭২ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকায়।
২০১৮ সালের নির্বাচন হয়েছিল ৩০ ডিসেম্বর। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ওই নির্বাচনের সময় সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে বেড়েছিল শূন্য দশমিক ৬৩ শতাংশ। অর্থাৎ ১১ লাখ ১৯ হাজার কোটি থেকে বেড়ে টাকা সরবরাহের স্থিতি দাঁড়ায় ১১ লাখ ২৬ হাজার কোটিতে। একইভাবে নভেম্বরে এর প্রবাহ বেড়েছিল শূন্য দশমিক ৫৩ শতাংশ। ওই সময়ে স্থিতি বেড়ে দাঁড়ায় ১১ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকায়। নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে বেড়েছিল ২.০৩ শতাংশ। ওই সময় স্থিতি বেড়ে দাঁড়ায় ১১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকায়।
বিগত নির্বাচনগুলোর মতোই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীরা সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা খরচ করতে পারবেন। প্রার্থীর এ অর্থ খরচ করতে যে কোনো ব্যাংকে একটি হিসাব খুলতে হবে। ওই হিসাবে টাকা জমা করে খরচ করতে হবে। নির্বাচনের পর ওই হিসাবের জমা ও খরচের বিবরণী নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হবে।