বাংলাদেশ ব্যাংকে তথ্যের নৈরাজ্য চলছিল, এখন অপঘাত চলছে বলে জানিয়েছেন বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
মঙ্গলবার (৭ মে) রাজধানীর নয়াপল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেনের স্মরণে ‘মোয়াজ্জেম হোসেন স্মারক বক্তৃতা’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন তুলেছেন, “এটা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। অথচ সাংবাদিকদের সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তথ্য প্রকাশ হলে কি বড় ধরনের নাশকতা হবে? অর্থনৈতিক সাংবাদিকরা কি নাশকতাকারী?”
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আপনারা গুরুত্বপূর্ণ মানুষ, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে তথ্য-উপাত্তের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়েছে, এর মধ্য দিয়ে আপনাদের সম্মান জানানো হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। এর মানে, তা কী বার্তা দিচ্ছে। এখন ওখানে এমন কিছু ঘটছে তা যদি জনসমক্ষে প্রকাশ পায় তাহলে বড় ধরনের নাশকতা হয়ে যাবে। এই নাশকতাকারীরা হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিটের সাংবাদিকরা।”
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “আমাদের একটা গর্ব ছিল, বিদেশি ঋণ নিয়ে কখনও খেলাপি হইনি আমরা। কিন্তু সম্প্রতি তেল আমদানি করে আমরা অর্থ পরিশোধ করতে পারছি না। বিদেশিরা মুনাফা নিতে পারছে না, এয়ারলাইন্স ব্যবসায়ীরা অর্থ পাচ্ছে না।”
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “তার মানে গর্বের জায়গায় ফাটল ধরিয়ে দিয়েছে। এসব তথ্য-উপাত্ত বাংলাদেশ ব্যাংক দেয়। সেখানে প্রবেশ নিষেধ। তার মানে সেখানে ‘ডাল মে কুচ কালা হে’। এখন এটা কি মসুর ডাল না কি মুগ ডাল নাকি সব জায়গায় ডাল; এটাই এখন বোঝার বিষয়। দেশ এখন এলডিসির দিকে যাচ্ছে। সরকার ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশ বলছে। এই সময় তথ্যের নৈরাজ্য সম্পূর্ণভাবে সাংঘর্ষিক।”
অনুষ্ঠানে জনপ্রতিনিধিদেরও তথ্য দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “জনপ্রতিনিধিরাও তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রাধিকার পান না। সাংবাদিকদের চেয়ে তাদের দুঃখও কম নয়। জনপ্রতিনিধিদের যেহেতু দুর্বলতা আছে, সেহেতু আমলাদের সামনে বড়গলায় কথা বলতে পারেন না তারা।”
দেশের নীতি-নেতৃত্ব দুর্বল হয়ে গেছে বলেও মনে করছেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, “নীতি ব্যাখ্যা করার জন্য কাউকে পাওয়া যায় না।”
এ সময় দেশে নীতি সমন্বয়ের অভাব আছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি মন্তব্য করেন, “এই সমন্বয়হীনতা মোকাবিলার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক শক্তির দুর্বলতা আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দেশনা দেওয়ার পরও একটি ব্যাংকের মালিকানা বদল হয়ে গেল কেন?”
ইআরএফ সম্পাদক আবুল কাশেমের পরিচালনায় ও সংগঠনের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইংরেজি দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ।