ফেরারির অপমান থেকেই জন্ম ল্যাম্বরগিনির

মুবিন আহমেদ

জানুয়ারি ১৪, ২০২৪, ০৬:২৮ পিএম

ফেরারির অপমান থেকেই জন্ম ল্যাম্বরগিনির

সংগৃহীত ছবি

“তুমি একজন ট্রাক্টর নির্মাতা তুমি স্পোর্টস কারের কী বুঝো!” এ কথাতেই কেল্লা ফতে! জন্ম নিল সুপার কার ল্যাম্বরগিনি। 

যারা একটু-আধটু গাড়ির খবরাখবর রাখেন, তাদের মধ্যে ল্যাম্বরগিনির নাম শুনেনি এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এককথায় স্পোর্টস কারের জগতে একটি অন্যতম আইকনিক নাম হলো ল্যাম্বরগিনি।

সন্ধ্যার আকাশে শুকতারা চিনতে যেমন কারও ভুল হয় না, তেমনি অসংখ্য গাড়ির ভিড়ে একটি ল্যাম্বরগিনিকে খুঁজে পেতেও কোনো গাড়িপ্রেমীর ভুল হওয়ার কথা নয়। এর কারণ হলো, যাত্রা শুরুর পর থেকে আজ পর্যন্ত স্টাইলিশ ডিজাইনের চোখ ধাঁধানো অসংখ্য গাড়ি তৈরির মাধ্যমে ল্যাম্বরগিনি গাড়িপ্রেমীদের মাঝে একটি স্বকীয় স্থান দখল করে নিয়েছে।  

প্রথম ল্যাম্বরগিনিটি ছিল একটি ট্রাক্টর এবং যা কিনা আজও তৈরি হয়! এই তথ্যটি অনেকেরই অজানা।

আবার ল্যাম্বরগিনি প্রতিষ্ঠার পিছনে ছিল আরেক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফেরারির ভূমিকা। বর্তমান সময়ের সবথেকে জনপ্রিয় এবং বিখ্যাত এই ব্র্যান্ডের অজানা সব তথ্য নিয়েই আজকের প্রতিবেদন।   

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইতালিয়ান বিমান বাহিনীতে ফেরুসিও ল্যাম্বরগিনি একজন মেকানিক হিসেবে কাজ করতেন। এ কাজের জন্য তাঁকে রোডস নামক একটি নির্জন দ্বীপে থাকতে হয়েছিল, সেখানে প্রচুর পরিমাণে যানবাহনের পরিত্যক্ত যন্ত্রাদি ছিল যা দিয়ে তাকে ধ্বংসপ্রাপ্ত যানবাহনগুলোকে মেরামত করতে হত।  


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফেরুসিও ল্যাম্বরগিনি মেকানিক হিসেবে যে অভিজ্ঞতা বানিয়েছিলেন তা যুদ্ধের পর বাড়ি ফিরে এসে কাজে লাগাতে শুরু করেন। যুদ্ধের পর তিনি নানা পরিত্যক্ত যানবাহনের নানা যন্ত্রাংশ জোগাড় করে শুরু করে দিলেন তার নামের ব্র্যান্ডের ট্রাক্টর বানানো। যা বাজারে তখনকার সময়ে প্রচুর নামডাক করে। আর অল্প সময়ের মধ্যেই ফেরুসিও ল্যাম্বরগিনির ভাগ্য খুলে যায়। শুরু হয় ল্যাম্বরগিনি ব্র্যান্ডের। 

আপনারা নিশ্চয়ই আইরন ম্যান সিনেমাটি দেখেছেন। আয়রন ম্যান সিনেমার টনি স্টার্কের সাথে ফেরাসিও ল্যাম্বরগিনির মিল, টনি স্টার্ক যেমন আয়রন ম্যান সিনেমায় কিডন্যাপ হয়ে গুহাতে থাকা অবস্থায় নিউক্লিয়ার রিয়েক্টর বানিয়ে ফেলেছিলেন যা কিনা কেবল মুভিতেই সম্ভব, তেমনি ল্যাম্বরগিনিও নির্জন দ্বীপে থাকা অবস্থায় গাড়ি নির্মাণে তার হাতে খড়ি করেছিলেন। 

তখনকার সময়ে বিখ্যাত ব্র্যান্ড ফেরারির ২৫০জিটি মডেলের একটি গাড়ির মালিক ছিলেন ফেরুসিও ল্যাম্বরগিনি। তাঁর গাড়িতে সমস্যা হওয়ায় সে একদিন তার গাড়িটিকে মেরামত করানোর উদ্দেশ্যে ফেরারির হেড কোয়ার্টারে নিয়ে যান। সেখান থেকে গাড়িটি মেরামত করে পাঠানোর পর তিনি দেখলেন যে তার গাড়িটিতে যে পার্টসটি বদলিয়ে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে তা তিনি নিজের কোম্পানির ট্রাক্টর বানাতে ব্যবহার করেন। 

এটা দেখে তিনি এঞ্জো ফেরারিকে পার্টসটি বদলিয়ে দেয়ার জন্য বলেন। এতে এঞ্জো ফেরারি ক্ষেপে যায় এবং ক্ষেপে গিয়ে তাকে বলে, “তুমি একজন ট্রাক্টর নির্মাতা, তুমি স্পোর্টস কার কী বুঝো!” এ কথাতেই কেল্লা ফতে! 

ফেরুসিও ল্যাম্বরগিনি এই অপমান মেনে নিতে পারেননি। বাড়িতে এসেই শুরু করলেন নিজের কোম্পানির জন্য স্পোর্টস কারের ডিজাইন। আর মাত্র চার মাসের মধ্যেই বানিয়ে ফেললেন নিজের কোম্পানির প্রথম স্পোর্টস কারটি। 

তার বানানো প্রথম ল্যাম্বরগিনি গাড়িটির মডেল ছিল “ল্যাম্বরগিনি৩৫০জিটিভি”।

প্রায় পাঁচ দশক আগে একজন ট্রাক্টর মেকানিকের হাত ধরে যাত্রা করা ল্যাম্বরগিনি নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজ গাড়ি-দুনিয়ার এক অন্যতম নামে পরিণত হয়েছে। ল্যাম্বরগিনির প্রতিষ্ঠার অবলম্বনে একটি সিনেমাও নির্মিত হয়েছে একটি সিনেমা। 

সে সিনেমার বিখ্যাত লাইন “You buy a Ferrari when you want to be someone. You buy a Lamborghini when you are someone.” 

কথাটির মতো ল্যাম্বরগিনিও হয়ে উঠেছে সুপার কার জগতের জায়ান্ট।

Link copied!