ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৪, ০৬:২১ পিএম
বাংলাদেশের টাঙ্গাইল শাড়ির স্বত্ব নিজেদের বলে দাবি করেছে ভারত। এ নিয়ে তোলপাড় দুটি দেশের গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যম। একই সময়ে সুন্দরবনের মধুর জিআই স্বীকৃতিও নিজেদের করে নিতে আবেদন করেছে দেশটি। এভাবে বাংলাদেশের বেশকিছু পণ্য ভারতের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। অন্যদিকে মাত্র ২১টি পণ্য যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের জিআই পণ্যের তালিকায়।
জিআই পণ্য
জিআই হলো ভৌগোলিক নির্দেশক চিহ্ন যা কোনো পণ্যের একটি নির্দিষ্ট উৎপত্তিস্থলের কারণে এর খ্যাতি বা গুণাবলী নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়। জিআইতে উৎপত্তিস্থলের নাম (শহর, অঞ্চল বা দেশ) অন্তর্ভুক্ত থাকে।
কোনো একটি দেশের মাটি, পানি, আবহাওয়া এবং ওই জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি যদি কোনো একটি পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তাহলে সেটিকে ওই দেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (জিআই) হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। অর্থাৎ সেই পণ্য শুধু ওই এলাকা ছাড়া অন্য কোথাও উৎপাদন করা সম্ভব নয়।
কোনো নির্দিষ্ট স্থানের কোনো পণ্য খুব নামকরা হলে এবং সেই নামের ওপর বিশ্বাস করেই পণ্যটি কেনা ও ব্যবহার করার গুরুত্ব দিতেই এই জিআই সনদ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশে প্রথম বারের মতো জিআই পণ্য হিসেবে ২০১৬ সালে স্বীকৃতি পেয়েছিল জামদানি শাড়ি। বিশ্বজুড়ে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি দিয়ে থাকে ওয়ার্ল্ড ইনটেলেকচুয়াল প্রোপার্টি অর্গানাইজেশন।
যেভাবে দেয়া হয় জিআই স্বীকৃতি
যে কোনো পণ্য জিআই স্বীকৃতির জন্য একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। পণ্যটির অন্তত ৫০ বছরের ঐতিহ্য থাকতে হয়, যে এলাকার পণ্য, তার স্বীকৃতি থাকতে হয়। পণ্যের ঐতিহাসিক দলিল-দস্তাবেজই শুধু নয়, প্রাচীন সাহিত্য-পুঁথি-ছড়ায় কোনো উল্লেখ থাকলেও প্রমাণ হিসেবে তা তুলে ধরতে হয়। যে জেলার পণ্য জিআই হবে, তার জেলা প্রশাসক বা সরকারি কোনো দপ্তরকে আবেদন করতে হয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্পনকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) এই স্বীকৃতি দিয়ে থাকে।
যে কারণে জিআইয়ের স্বীকৃতি প্রয়োজন
দিন যত যাচ্ছে, বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে তত বাড়ছে পণ্যের স্বত্বের গুরুত্ব। এ কারণেই জিআই পণ্য স্বীকৃতির বিষয়টি এত গুরুত্বপূর্ণ।
জিআই পণ্যের সবচেয়ে বড় বিষয় হলো- কোনো পণ্য জিআই সনদ পাওয়ার পর সে পণ্যটির মালিকানা শুধু ওই দেশের। অন্য কোনো দেশ বা অঞ্চল এর মালিকানা দাবি করতে পারবে না। বাণিজ্যিকভাবে পণ্যটি উৎপাদন করার অধিকার এবং আইনি সুরক্ষা পাওয়া যায়।
আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রেও জিআইয়ের স্বীকৃতি একটা বড় সুবিধা। কোনো পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেলে পণ্যগুলো বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডিং করা সহজ হয়।
জিআই পণ্য স্বীকৃতি পেলে এর মূল্য বৃদ্ধি পায় সাথে রপ্তানিও বেড়ে যায়। এছাড়াও এ শিল্পকে ঘিরে পর্যটন খাতের বিকাশের সম্ভাবনা থাকে।
জিআই বিষয়ক আইন
বাংলাদেশে ভৌগোলিক নির্দেশক অর্থাৎ জিআই পণ্যের ধারণা এখনো তেমন পরিচিত নয়। ২০১৩ সালে দেশে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন হয়। এরপর ২০১৫ সালে আইনের বিধিমালা তৈরির পর জিআই পণ্যের নিবন্ধন নিতে আহ্বান জানায় পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি)। ডব্লিউআইপিও নিয়ম মেনে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি ও সনদ দিয়ে থাকে ডিপিডিটি।
ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন ২০১৩-এর ২৯ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি জিআই পণ্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করলে বা মিথ্যাভাবে ব্যবহার করলে ছয় মাস থেকে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে।
তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি, আইন থাকা স্বত্ত্বেও বাংলাদেশ অনেক পণ্যের জিআই স্বীকৃতিই চলে গেছে ভারতের কাছে। নকশি কাঁথা, ফজলি আম, রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ অনেক পণ্য জিআই স্বীকৃতি এখন ভারতের। শেষ সংযোজন হলো টাঙ্গাইল শাড়ি ও সুন্দরবনের মধু।