ডিসেম্বর ৯, ২০২৩, ০৩:১০ পিএম
বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া ও করোনা মহামারী পরবর্তী প্রভাবের কারণে ২০২২ সালে বাংলাদেশে গরিব মানুষের সংখ্যা আরও অন্তত ২৭ লাখ ৫১ হাজার বেড়েছে বলে ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (আইএফপিআরআই) গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে।
জাতীয় পর্যায়ে দেশের দারিদ্র্যের হার ১৮ দশমিক সাত শতাংশ। এটি গ্রামাঞ্চলে ২০ দশমিক পাঁচ শতাংশ ও শহরাঞ্চলে ১৪ দশমিক সাত শতাংশ। খাদ্যের আয় ও ব্যয় জরিপ (এইচআইইএস) ২০২২ সালের তথ্য অনুসারে জানা যায়।
শুক্রবার ( ৮ ডিসেম্বর ) ঢাকায় বিআইডিএস সম্মেলনে ভার্চুয়াল বক্তব্যে আইএফপিআরআইয়ের ফোরসাইট অ্যান্ড পলিসি মডেলিং ইউনিটের জ্যেষ্ঠ গবেষক আঙ্গা প্রদেশা বলেন, “করোনা ছিল বাংলাদেশের উচ্চ দারিদ্র্যের মূল কারণ। কিন্তু, ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক পরিবারের জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে গেছে।”
গবেষণায় সতর্ক হিসেবে বলা হয়, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক মন্দায় বাংলাদেশে দারিদ্র্য পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে তবে এই দারিদ্র্যের মধ্যে পড়ে যাওয়া বেশিরভাগ মানুষই গ্রামে থাকেন।
গবেষণায় আরও বলা হয়, বাংলাদেশ যখন ক্রমবর্ধমান খাদ্যমূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে লড়াই করছে, তখন দেশের নানা এলাকায় সরকারের ভর্তুকি দামে খাদ্যপণ্য কিনতে বিপুল সংখ্যক মানুষকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, গত আগস্টে দেশে খাদ্যমূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। ২০১১ সালের অক্টোবরের পর এটি সর্বোচ্চ। গত নভেম্বরে দেশে খাদ্যমূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশে।
বাংলাদেশে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের মানুষের দারিদ্র্য পরিস্থিতি বিশ্লেষণে এই আইএফপিআরআই কর্মকর্তা সেকেন্ডারি ডেটা ব্যবহার করে করোনা ও ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক মূল্যসহ ২০২০ সাল থেকে বড় বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব তুলে ধরেছেন।
তার মতে, ‘করোনা মহামারি ২০২০ সালে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির প্রবণতাকে বদলে দিয়েছে। ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম বাড়ার সাথে সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি ধীর হয়ে যায়।’
২০২২ সালে এই পরিস্থিতি গবেষণায় নেওয়া ১৭ দেশের অপুষ্টির চিত্রকে আরও খারাপ করে তুলেছে। এসব দেশের তালিকায় আছে—বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, ইথিওপিয়া, ঘানা, কেনিয়া ও নেপাল।
তিনি আরও বলেন, ‘২০২৩ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার আরও দেরি হতে পারে।’
গবেষক আঙ্গা প্রদেশা বলেন, ‘বিশ্বে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি জিডিপির তুলনায় ক্ষুধার জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। করোনার কারণে মানুষের আয় কমে গেছে। অন্যদিকে বৈশ্বিক মূল্যবৃদ্ধি সরাসরি খাদ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে এবং পরিবারগুলোর খাবার কমিয়ে দিয়েছে।’
গবেষণায় আরও বলা হয়, ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় মানুষ, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ কম খরচ করছেন।দারিদ্র্যের হারের মতো বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলেও ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে।
এইচআইইএসের তথ্যে জানা গেছে, বাংলাদেশে সামগ্রিক চরম দারিদ্র্যের হার পাঁচ দশমিক ছয় শতাংশ। এটি গ্রামাঞ্চলে ছয় দশমিক পাঁচ শতাংশ ও শহরাঞ্চলে তিন দশমিক আট শতাংশ।
অলাভজনক প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮ সালে একই জনগোষ্ঠীর পরিবারের সাক্ষাৎকার নিয়ে দেখে যে তাদের মধ্যে ২১ দশমিক ছয় শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে ছিল।
২০২০ সালের শেষের দিকে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) দেখেছিল যে দেশব্যাপী জরিপে যোগ দেওয়া পাঁচ হাজার ৫৭৭ পরিবারের মধ্যে ৪২ শতাংশ করোনার প্রভাবের কারণে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে।
২০২১ সালে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) গবেষণায় দেখা গেছে, এক বছরে বাংলাদেশে দুই কোটি ৪৫ লাখ মানুষ বা জনসংখ্যার ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ দারিদ্র্যের মুখে পড়েছে।
২০২১ সালের মার্চে গ্রাম ও শহরের বস্তিতে বসবাসকারী ছয় হাজারেরও বেশি মানুষের ওপর র্যাপিড রেসপন্স রিসার্চ (আরআরআর) পরিচালিত হয়।
বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন মনে করেন, ‘করোনা-পরবর্তী সময়ে অর্থনীতির অনেকটা পুনরুদ্ধার করা হলেও এই পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াটি ভঙ্গুর।’
ফলে, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান খরচ ও মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা মানুষের কষ্ট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।