‘টাঙ্গাইল শাড়ি’ বাংলাদেশে বহুল পরিচিত একটি ঐতিহ্য। ঢাকার কাছে টাঙ্গাইল জেলার সাথে এর নাম জড়িয়ে আছে। কিন্তু সম্প্রতি ভারত দাবি করেছে ‘টাঙ্গাইল শাড়ি’ তাদের পণ্য। ব্যাপারটিতে বাংলাদেশে অনেক বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার তাঁতিদের হাতে বোনা শাড়ি জেলার নামেই নামকরণ হয়ে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে গিয়েছে। টাঙ্গাইলের তাঁতিদের শাড়িগুলোকে ‘টাঙ্গাইল শাড়ি’ হিসেবে সবাই এক নামে চেনে। হঠাৎই টাঙ্গাইল শাড়ি হয়ে গেল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পণ্য, যা স্বীকৃতিও পেয়ে গেছে ভারতের জিআই পণ্য হিসেবে। সম্প্রতি এর ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই স্বত্ব) নিয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
দেশটির সরকারি দপ্তরের এমন দাবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড় তুলেছে, মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের এই ধরনের বিবৃতির সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর, টাঙ্গাইল থেকে অনেক তাঁতি ভারতে চলে যান, পশ্চিমবঙ্গের নবদ্বীপ, ফুলিয়া, সমুদ্রগড়, শ্রীরামপুর এবং নসরতপুর এলাকায় বসতি স্থাপন করে। তারা ভারতীয়দের টাঙ্গাইল শাড়ি বুননের শিল্প শেখাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। বর্তমানে, টাঙ্গাইলের শাড়ি ভারতে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।
কোনো একটা দেশের মাটি, পানি, আবহাওয়া ও মানুষের সৃজনশীলতা মিলে কোনো পণ্য তৈরি হলে তাকে বলা হয় সেই দেশের ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন বা জিআই পণ্য। সর্বশেষ ২০২৩ সালে নিবন্ধিত জি-আই পণ্য হলো কুষ্টিয়ার তিলের খাজা। পণ্য জিআই হতে গেলে পণ্যের অন্তত ৫০ বছরের ঐতিহ্য থাকতে হয়, যে এলাকার পণ্য, তার স্বীকৃতি থাকতে হয়। ঐতিহাসিক দলিল-দস্তাবেজই শুধু নয়, প্রাচীন সাহিত্য-পুঁথি-ছড়ায় কোনো উল্লেখ থাকলেও প্রমাণ হিসেবে তা তুলে ধরা হয়। কোন পণ্য জি-আই স্বীকৃতি পেলে পণ্যগুলো বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডিং করা সহজ হয়। এই পণ্যগুলোর আলাদা কদর থাকে। ওই অঞ্চল বাণিজ্যিকভাবে পণ্যটি উৎপাদন করার অধিকার এবং আইনি সুরক্ষা পায়।
২০১২ সালের দিকে জামদানি শাড়ি, আম ও ইলিশকে জিআই পণ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেয় ভারত। অথচ এসব পণ্য বাংলাদেশেও আছে। কিন্তু পণ্য জিআই করার জন্য দেশে তখন কোনো আইন ছিল না। বেশ দ্রুততার সঙ্গে ২০১৩ সালে সেই আইন হলো। আর প্রথম জিআই পণ্য হিসেবে নথিভুক্ত হলো জামদানি শাড়ি। বাংলাদেশের পণ্য হিসেবেই নথিভুক্ত হলো এই শাড়ি। ভারতও জামদানিকে জিআই পণ্য হিসেবে নথিভুক্ত করল, তবে ‘উপাধা জামদানি’ নামে।
বাংলাদেশে এরপর একে একে স্বীকৃতি পায় ২০১৭ সালে ইলিশ, চাপাইনবাবগঞ্জের ক্ষীরশাপাতি আম, কালিজিরা চাল, বিজয়পুরের সাদা মাটি, রাজশাহীর সিল্ক, দিনাজপুরের কাটারিভোগ চাল, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম, ২০১৮ সালে স্বীকৃতি পায় ঢাকাই মসলিন, ২০১৯ সালে বাগদা চিংড়ি, বগুড়ার দই, নাটরের কাঁচাগোল্লা, ২০২৩ সালে সনদ পায় টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম, কুমিল্লার রসমালাই।