এক বছরে চালের দাম বাড়লো কেজিতে ১০-১২ টাকা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪, ০৬:২৩ পিএম

এক বছরে চালের দাম বাড়লো কেজিতে ১০-১২ টাকা

ছবি: সংগৃহীত

সরু চালের বৃহত্তম মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭২ থেকে ৭৪ টাকা কেজি দরে। বছরের শুরুতে এই চালের দামই সরকার নির্ধারিত ৬২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন মিলাররা।

অটোরাইস মিল মালিক এবং পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের মতে, বছরের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা। খবর ডেইলি স্টার।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরপরই চালের দাম বাড়াতে থাকেন কুষ্টিয়ার চালকল মালিক সিন্ডিকেট। পরিস্থিতি সামাল দিতে ২২ জানুয়ারি মিলারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা।

ওই সভায় চালকল মালিক, পাইকারি-খুচরা বিক্রেতা, ভোক্তা, বাজার মনিটরিংয়ে নিয়োজিত বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান ও গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে জনপ্রিয় মিনিকেট চালের দাম সর্বোচ্চ ৬২ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এই দামেই দীর্ঘদিন চাল বিক্রি করেন মিলাররা। সে সময় তাদের আশ্বাস ছিল—নতুন ধান উঠলে কমে যাবে চালের দাম।

ওই সভার ১০ মাস ২৭ দিনের মাথায় আবারও চালকল মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন কুষ্টিয়া বর্তমান জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান। এদিন ব্যবসায়ীরা জানান, মিনিকেট চাল তারা বিক্রি করছেন ৭০ থেকে ৭২ টাকা কেজি দরে।

জেলা প্রশাসনের অনুরোধে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতি কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন প্রধান ঘোষণা দেন, সব ধরনের চালের দাম কেজিতে এক টাকা কমানো হবে। কিন্তু পাঁচ দিনের মাথায় কমানোর পরিবর্তে প্রতি কেজিতে বেড়েছে তিন থেকে চার টাকা।

মিলগেটেই মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭২ থেকে ৭৪ টাকা কেজি দরে।

চালের দাম কমার বদলে বৃদ্ধির বিষয়ে জয়নাল আবেদিন বলেন, আলোচনা সাপেক্ষে যে দাম নির্ধারণ হয়েছে, তার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি দুঃখজনক। আমরা অনেকেই এক টাকা কমে বিক্রি করছি। কিছু ব্যবসায়ী কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই দাম বাড়াচ্ছেন।

গত ২৩ ডিসেম্বর বিকেলে জাফর ফুড প্রডাক্টস ও অটোরাইচ মিলের বিক্রয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, মূল্য তালিকায় স্পেশাল মিনিকেট চালের ২৫ কেজির বস্তার দাম এক হাজার ৮৮০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজি চালের দাম ৭৫ টাকা ২০ পয়সা।

দেশের শীর্ষস্থানীয় চাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রশিদ এগ্রো ফুড প্রডাক্টস লিমিটেডের মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি বস্তা এক হাজার ৮৫০ টাকা দরে। শহরতলী বটতৈল মোড় এলাকায় একটি চালের দোকানে এই দর জানান প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয়কর্মী।

এদিন আরেকটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান মেসার্স দাদা অটো রাইচ মিলের বিক্রয় কেন্দ্রে দেখা যায়, ২৫ কেজির বস্তা এক হাজার ৮১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে দাম পড়ছে ৭২ টাকা ৪০ পয়সা।

জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন এই প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী আরশাদ আলী। তিনি বলেন, ‘এখন যে অর্ডার নেওয়া হচ্ছে তার ডেলিভারি হবে প্রায় সপ্তাহখানেক পরে। ধানের বাজারমূল্যও প্রতিদিন বাড়ছে। এখন প্রতি মণ মিনিকেট ধানের দাম এক হাজার ৯৫০ টাকা। এত দামের ধান থেকে চাল উৎপাদন করে আমাদের পোষাচ্ছে না।’

আগামী দুয়েক সপ্তাহে চালের দাম আরও বাড়তে পারে—এমন ইঙ্গিত দেন এই ব্যবসায়ী।

এদিকে গত মঙ্গলবার কুষ্টিয়া শহরের পৌরবাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৭৬ টাকা কেজি দরে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেশিরভাগ মিল থেকেই তাদের চাল কিনতে হচ্ছে ৭৪ টাকা কেজি দরে।

সোনাউল্লাহ এন্টারপ্রাইজের কামরুল হক বিপ্লব গত সোমবার এই সংবাদদাতাকে জাফর অটো রাইচ মিল থেকে সংগ্রহ করা চালের ভাউচার দেখান। সেখানে ২৫ কেজি প্রতি বস্তার দর লেখা ছিল এক হাজার ৮৭৫ টাকা।

কামরুল হক বলেন, গত এক মাস ধরে প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে চালের দাম। ৭৪ থেকে ৭৫ টাকা কেজিতে চাল কিনে বিক্রি করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। মিলাররা বলছেন এক রকম কিন্তু আমরা কিনতে গেলে পাচ্ছি বাড়তি দাম।

মেসার্স মা ট্রেডার্সের আহমেদ মনজুরুল রিপনও বলেছেন, চালের দাম রেকর্ড পর্যায়ে চলে গেছে। মিলগেট থেকে তাদের চাল কিনতে হচ্ছে ৭৪ টাকা কেজি দরে।

একই ধরনের চাল কম দামে বিক্রিও হচ্ছে দুয়েকটি মিলে। এর মধ্যে কুষ্টিয়ার খাজানগরের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান দেশ এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ তাদের মিনিকেট চাল মিলগেটে বিক্রি করছে ৭০ টাকা কেজি দরে।

এই প্রতিষ্ঠানের মালিকদের একজন সাব্বির খালেক। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, দেশের সংকটকালে চেষ্টা করছি যতটুকু সম্ভব কম দামে চাল দেওয়ার। তা ছাড়া, জেলা প্রশাসক যে দাম নির্ধারণ করেছেন, তাতে মুনাফা কিছু কম হলেও আমরা সেই দাম ঠিক রাখার চেষ্টা করছি।‍‍`

মিয়া ভাই অটোরাইস মিলের স্বত্বাধিকারী জয়নাল আবেদিন প্রধান বলেন, আমরা ৭১ টাকা কেজি দরে মিনিকেট চাল বিক্রি করছি।

ব্যবসায়ী তুলন স্থানীয় বাজার ও যশোর অঞ্চল থেকে ধান কিনে খাজানগর অঞ্চলের চালকলে সরবরাহ করে থাকেন। এই ব্যবসায়ী বললেন, ‘যশোর অঞ্চলে এখনো মিনিকেট ধান এক হাজার ৭৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। মৌসুমের শুরুতে এই ধানের দাম ছিল এক হাজার ৩৫০ টাকা।’

অথচ চালকল মালিকদের দাবি, মিনিকেট ধানের বর্তমান দাম এক হাজার ৯৫০ টাকা।

তুলন বলেন, ‘বর্তমানে বাজারে মিনিকেট ধান আছে, তবে তার পরিমাণ খুব বেশি না। চালকল মালিকদের গোডাউনে অনেক ধান থাকতে পারে বলে অনুমান করা যায়।’

এই দাবির সঙ্গে দ্বিমত করেননি চালকল মালিকরাও।

দেশ এগ্রোর মালিক আব্দুল খালেক বলেন, বাজারের ভারসাম্য রক্ষা করতে আমাদের ধান কিনে রাখতে হয়। কারণ মিনিকেট ধান বছরে একবারই পাওয়া যায়।

চালের দাম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে স্থানীয় ক্রেতাদের। শীতের সবজি ও মাছের দাম কমে যাওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে জনমনে। তবে বছরের ব্যবধানে ৫০ কেজির এক বস্তা চালের দর ৫০০ টাকা বেড়ে যাওয়ায় অস্বস্তি সৃষ্টি হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান বলেন, ৭৪ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে সব ব্যবসায়ী চাল বিক্রি করছেন না। অনেকেই নির্ধারিত দামেও বিক্রি করছেন। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যেই বাজার মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে।

Link copied!