যুক্তরাষ্ট্রকে ‘মানাতে’ ৬২৬ পণ্য আমদানিতে শুল্ক ছাড়

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ২, ২০২৫, ০৬:০৮ পিএম

যুক্তরাষ্ট্রকে ‘মানাতে’ ৬২৬ পণ্য আমদানিতে শুল্ক ছাড়

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ‘সংলাপের প্রস্তুতি ও পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনার’ অংশ হিসেবে ৬২৬টি পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়া হচ্ছে।

এর মধ্যে ১১০টি পণ্যের আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ।

সোমবার, ০২ জুন উত্থাপিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, “আমদানি পণ্যের শুল্ক-কর হার পর্যায়ক্রমে হ্রাস করা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সংলাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ১১০টি পণ্যের আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, ৬৫টি পণ্যের আমদানি শুল্ক হ্রাস, ৯টি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার এবং ৪৪২টি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক হ্রাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে।”

আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা পণ্যের তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সূতা, পারমাণবিক চুল্লি ও এর বিভিন্ন অংশ, বয়লার, হাইড্রলিক টার্বাইন, গ্যাস টার্বাইন, দুধ দোহনের যন্ত্র, মিল্কিং মেশিন ও দুগ্ধ খামারের যন্ত্র ও কিছু যন্ত্রাংশ, ওয়াইন-সেডার ও ফলের রস উৎপাদনের যন্ত্র, চিনি কলের যন্ত্র, হাঁস-মুরগির ডিম ফোটানোর যন্ত্র (ইনকিউবেটর) ও ব্রুডার এবং এগুলোর যন্ত্রাংশ, স্পিনিং মিল ও বেকারি যন্ত্র, এমআরআই যন্ত্র।

এছাড়া যুদ্ধাস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন ধরনের বন্দুক, হাওইটজার (এক ধরনের কামান), মর্টার ইত্যাদি। বিদায়ী অর্থবছরে এসব যুদ্ধাস্ত্রের আমদানি শুল্ক রয়েছে ৫ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে এই আমদানি শুল্ক শূন্য শতাংশ করা হয়েছে।

রকেট লাঞ্চার, ফ্লেইম থ্রোয়ারস, গ্রেনেড লাঞ্চার, টর্পেডো টিউব এবং এ ধরনের অস্ত্র আমদানির শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। অন্য অস্ত্রের ক্ষেত্রেও আমদানি শুল্ক শূন্য শতাংশ করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ৬ বিলিয়ন ডলারের মত। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করে, বাংলাদেশে তার চেয়ে ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি করে যুক্তরাষ্ট্রে।

গত ২ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নতুন ‘রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ’ নীতির অংশ হিসেবে শতাধিক দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের যে ঘোষণা দিয়েছেন, তাতে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় ৩৭ শতাংশ সম্পূরক শুল্কের মুখোমুখি হবে।

এতদিন বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার ছিল গড়ে ১৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশি পণ্যে এখন মোট শুল্ক দাঁড়াবে ৫২ শতাংশ।

পরে বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে সেই ৩৭ শতাংশ বাড়তি শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হলেও আগের ১৫ শতাংশ শুল্কের সঙ্গে বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্ক বাংলাদেশকে দিতেই হবে।

এই বাড়তি শুল্ক দেশের প্রধান রপ্তানি বাজার যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি সক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে বলে ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা।

বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৮৪০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে, যার মধ্যে তৈরি পোশাকের পারিমাণ ৭৩৪ কোটি ডলার।

এ অবস্থায় বাড়তি শুল্ক এড়াতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে হবে।

সেই লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরো ১০০ পণ্যকে শুল্কমুক্ত তালিকায় যুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে ৮ এপ্রিল জানিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী শেখ বশিরউদ্দীন।

তিনি বলেছেন, “এই চিঠির ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করি। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ট্রেড গ্যাপটা কমিয়ে আনা।”

উপদেষ্টা বলেছিলেন, “আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো। এখন কী কী পণ্য দিয়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে পারি সেটাই আমরা দেখছি।”

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বৈষম্য কমাতে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ১৯০টি পণ্যের শুল্কহার শূন্য রেখেছে।

Link copied!