১৮ বছর পর প্রথমবার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন কোহলিরা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ৪, ২০২৫, ০১:৫২ এএম

১৮ বছর পর প্রথমবার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন কোহলিরা

ছবি: সংগৃহীত

একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে আইপিএলের শুরু থেকে একই দলের হয়ে খেলছেন যিনি, মৌসুমের পর মৌসুম ব্যাট হাতে অতিমানবীয় ধারাবাহিকতা যার, টুর্নামেন্টটির ইতিহাসের সফলতম ব্যাটসম্যান ভিরাট কোহলি ১৮ বারের চেষ্টায় অবশেষে পেলেন শিরোপার স্বাদ, দীর্ঘ অপেক্ষা ঘুচল বেঙ্গালুরুর। পাঞ্জাব কিংসের অপেক্ষা বাড়িয়ে প্রথমবারের মতো আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হলো তারা। 

আহমেদাবাদে মঙ্গলবার অষ্টাদশ আসরের ফাইনালে বেঙ্গালুরুর জয় ৬ রানে। 

ম্যাচ শেষ হতেই হাঁটু গেঁড়ে মাটিতে বসে পড়েন কোহলি, দুই হাতে মুখ ঢেকে বসে থাকেন মাথা নিচু করে। একটু পর তাকে ঘিরেই উদযাপনে মেতে ওঠে বেঙ্গালুরুর অন্য ক্রিকেটাররা। বেঙ্গালুরুর সাবেক ব্যাটসম্যান, দক্ষিণ আফ্রিকান গ্রেট এবি ডি ভিলিয়ার্স মাঠে নেমে জড়িয়ে ধরেন বন্ধু কোহলিকে। 

এই মাঠেই একদিন আগে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে ২০৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় জিতেছিল পাঞ্জাব। শিরোপা লড়াইয়ে বেঙ্গালুরুর ইনিংস ১৯০ রানে থামল যখন, তাদের নিয়ে বাজি ধরার লোক হয়তো খুব বেশি ছিল না। ‘২০-২৫ রান’ কমে হয়ে গেছে বলেই আলোচনা হচ্ছিল বেশি। উইকেটও ব্যাটিংয়ের জন্য ছিল ভালো। 

শেষ পর্যন্ত ফাইনালের চাপটাই হয়তো নিতে পারল না পাঞ্জাব। ম্যাচের শেষ চার বলে শাশাঙ্ক সিংয়ের তিনটি ছক্কা ও একটি চারের পরও ১৮৪ রানে আটকে গেল শ্রেয়াস আইয়ারের নেতৃত্বাধীন দল। 

বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে প্রথম কোয়ালিফায়ারে ১০১ রানে গুটিয়ে হারের পর ফাইনালেও পরাজয়ের যন্ত্রণা সঙ্গী হলো পাঞ্জাবের। প্রথম শিরোপার অপেক্ষা আরও বাড়ল ফ্র্যাঞ্চাইজিটির। 

বেঙ্গালুরুর ইনিংসে ব্যক্তিগত ফিফটি যেমন নেই, তেমনি নেই কোনো পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটিও। ৩ চারে কোহলির ৩৫ বলে ৪৩ রান তাদের সর্বোচ্চ। 

দলটির হয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেন হার্দিক পান্ডিয়ার ভাই ক্রুনাল পান্ডিয়া। ৪ ওভারে স্রেফ ১৭ রান দিয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ দুটি উইকেট নেন ৩৪ বছর বয়সী বাঁহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার। ম্যাচ-সেরার পুরস্কার জেতেন তিনিই। 

রাহুল দ্রাবিড়, অনিল কুম্বলে, কেভিন পিটারসেন, শেন ওয়াটসন, ড্যানিয়েল ভেটোরি, কোহলি, ফাফ দু প্লেসি- বড় বড় সব তারকা নেতৃত্ব দিয়ে যেখানে বেঙ্গালুরুরকে আইপিএল জেতাতে পারেননি, সেখানে দলটির অধিনায়কত্ব পেয়ে প্রথম আসরেই বাজিমাত করলেন রাজাত পাতিদার, যিনি বড় কোনো নাম নন ভারতীয় ক্রিকেটে। 

শেষের মতো ফাইনালের শুরুটাও ভালো করে বেঙ্গালুরু। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারে আর্শদিপ সিংকে একটি করে চার ও ছক্কা মারেন ফিল সল্ট। পরের ওভারে কাইল জেমিসনকে আরেকটি চার মারার এক বল পরই অবশ্য ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ইংলিশ ওপেনার।

একটি ছক্কা ও দুটি চারে শুরুটা ভালো করলেও, ইনিংস টেনে নিতে পারেননি মায়াঙ্ক আগারওয়ালও। তৃতীয় উইকেটে কোহলির সঙ্গে জুটি বেঁধে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নেন পাতিদার। একাদশ ওভারে জেমিসনকে একটি ছক্কা মারার এক বল পর এলবিডব্লিউ হয়ে যান বেঙ্গালুরু অধিনায়ক (১৬ বলে ২৬)। ২৭ বলে ৪০ রানের এই জুটি শেষ পর্যন্ত হয়ে থাকে ইনিংসের সর্বোচ্চ। 

একপ্রান্ত আগলে রেখে এগিয়ে যাওয়া কোহলি এ দিন তার সেরা চেহারায় ছিলেন না। পঞ্চদশ ওভারে আজমাতউল্লাহ ওমারজাইয়ের শর্ট বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ভারতের ব্যাটিং গ্রেট বিদায় নেন ফিফটি থেকে সাত রান দূরে থাকতে। 

আসর শেষ করলেন তিনি ১৫ ম্যাচে ৮ ফিফটিতে দলের সর্বোচ্চ ও আসরের তৃতীয় সর্বোচ্চ ৬৫৭ রান করে। 

২ ছক্কায় ১৫ বলে ২৫ রান করে ফেরেন লিয়াম লিভিংস্টোন। ২টি করে চার ও ছক্কায় জিতেশ শার্মার ব্যাট থেকে আসে ১০ বলে ২৪ রান।  

শেষ দিকে প্রত্যাশিত ঝড় তুলতে পারেননি কেউ। শেষ তিন ওভারে ২২ রান তুলতে ৪ উইকেট হারায় বেঙ্গালুরু। শেষ ওভারে মাত্র ৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন আর্শদিপ। 

লক্ষ্য তাড়ায় ইনিংসের প্রথম বলে ভুবনেশ্বর কুমারকে চার মেরে শুরু করেন প্রিয়ানশ আরিয়া। ওভারের শেষ বলে ছক্কা মারেন প্রাভসিমরান সিং। তৃতীয় ওভারে উইকেট পেতে পারতেন জশ হেইজেলউড, কিন্তু প্রাভসিমরানের ক্যাচ ফেলেন রোমারিও শেফার্ড। 

হেইজেলউডের পরের ওভারে বাউন্ডারিতে সল্টের দারুণ ক্যাচে আরিয়ার বিদায়ে ভাঙে ৪৩ রানের শুরুর জুটি। নবম ওভারে প্রাভসিমরানকে ফেরান ক্রুনাল পান্ডিয়া। 

আগের ম্যাচে ৪১ বলে অপরাজিত ৮৭ রানের অতিমানবীয় ইনিংসে দলকে জেতানো শ্রেয়াস এবার ১ রানেই ফেরেন শেফার্ডের বলে আলগা শট খেলে। 

চমৎকার ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন জশ ইংলিস। বিপজ্জনক হয়ে ওঠা অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দলে স্বস্তি ফেরান ক্রুনাল পান্ডিয়া। ৪ ছক্কা ও এক চারে ২৩ বল ৩৯ রান করেন ইংলিস। 

এরপর চেষ্টা করে যান শাশাঙ্ক ও নেহাল ওয়াধেরা। জয়ের জন্য শেষ চার ওভারে পাঞ্জাবের দরকার ছিল ৫৫ রান। 

সপ্তদশ ওভারে ওয়াধেরাকে ফিরিয়ে মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠা জুটি ভাঙেন ভুবনেশ্বর। মুখোমুখি প্রথম বলে দারুণ শটে ছক্কার পরের বলেই ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন মার্কাস স্টয়নিস। এই ওভারে ৮ রানে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচের লাগাম নিজেদের দিকে টেনে নেন অভিজ্ঞ ভারতীয় পেসার ভুবনেশ্বর। 

পরের ওভারে ওমারজাইকে ফিরিয়ে দেন ইয়াশ দায়াল। শেষ ওভারে ২৯ রানের সমীকরণে প্রথম দুই বলে কোনো রান না দিয়ে দলের জয় প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেন হেইজেলউড। শেষ চার বলে শাশাঙ্কের ২২ রানে ব্যবধানই কমে শুধু। ৬ ছক্কা ও ৩ চারে ৩০ বলে ৬১ রান করেও মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। 

এই ম্যাচে খুব একটা ভালো করতে না পারলেও, আসরজুড়ে চমৎকার বোলিং করেন হেইজেলউড। চোটের কারণে মাঝে কয়েকটি ম্যাচ খেলতে না পারার পরও, ১২ ম্যাচে ওভারপ্রতি ৮.৭৭ করে রান দিয়ে দলের সর্বোচ্চ ও আসরের তৃতীয় সর্বোচ্চ ২২ উইকেট নেন অস্ট্রেলিয়ান পেসার। সব শেষে মিলল শিরোপার স্বাদও! 

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু: ২০ ওভারে ১৯০/৯ (সল্ট ১৬, কোহলি ৪৩, আগারওয়াল ২৪, পাতিদার ২৬, লিভিংস্টোন ২৫, জিতেশ ২৪, শেফার্ড ১৭, ক্রুনাল পান্ডিয়া ৪, ভুবনেশ্বর ১, দায়াল ১*; আর্শদিপ ৪-০-৪০-৩, জেমিসন ৪-০-৪৮-৩, ওমারজাই ৪-০-৩৫-১, ভিজায়কুমার ৪-০-৩০-১, চেহেল ৪-০-৩৭-১) 

পাঞ্জাব কিংস: ২০ ওভারে ১৮৪/৭ (আরিয়া ২৪, প্রাভসিমরান ২৬, ইংলিস ৩৯, শ্রেয়াস ১, ওয়াধেরা ১৫, শাশাঙ্ক ৬১*, স্টয়নিস ৬, ওমারজাই ১, জেমিসন ০*; ভুবনেশ্বর ৪-০-৩৮-২, দায়াল ৩-০-১৮-১, হেইজেলউড ৪-০-৫৪-১, ক্রুনাল পান্ডিয়া ৪-০-১৭-২, সুয়াশ ২-০-১৯-০, শেফার্ড ৩-০-৩০-১) 

ফল: বেঙ্গালুরু ৬ রানে জিতে চ্যাম্পিয়ন  

ম্যান অব দা ম্যাচ: ক্রুনাল পান্ডিয়া 

ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট: সুরিয়াকুমার ইয়াদাভ 

Link copied!