জুন ৩, ২০২৫, ০৬:১০ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
একটি পাকা খুঁটির সঙ্গে এক যুবককে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা। হাত-পা বাঁধা ওই যুবকের চারদিকে উৎসুক মানুষের জটলা। গ্রামবাসী যুবককে চুরির অভিযোগে ধরে এনে এভাবে বেঁধে রেখেছেন। এ সময় তাকে মারধরও করা হচ্ছিল। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও লোকজনের কাছে চুরির দায় স্বীকার করে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান ওই যুবক। এ রকম একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে (ভাইরাল)।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের সাধেরখলা গ্রামে গত রোববার এ ঘটনা ঘটে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই যুবকের নাম ইছা মিয়া (৩৫)। তিনি সাধেরখলা গ্রামের সায়েদ আলীর ছেলে ও ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। খবর প্রথম আলো।
ভিডিওতে দেখা যায়, ইছা মিয়া খুঁটির সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় ঘিরে থাকা মানুষদের হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে বলছেন, ‘আমার ঘরও মালটি আছে। মালটি আইন্যা দেই। আমারে একুট পানি খাওয়াও। তোমরা যা কও, আমি তা–ই রাজি। আমারে তোমরা আর মাইরো না, অত্যাচারটা কইরো না...।’ তখন কেউ তার কাছে চুরি যাওয়া মুঠোফোনের সিম চাইছিলেন। আবার কেউ মসজিদের চুরি যাওয়া জিনিসপত্র কোথায়, সেটি জিজ্ঞাসা করছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সাধেরখলা হাজী এম এ জাহের উচ্চবিদ্যালয়–সংলগ্ন রহিম মিয়ার দোকানে গত শনিবার রাতে চুরির ঘটনা ঘটে। পরদিন রোববার সকালে অনেক খোঁজাখুঁজির পর চোর সন্দেহে ইছা মিয়াকে ধরে আনেন গ্রামের লোকজন। তাকে রহিমের দোকানঘরের খুঁটিতে বেঁধে মারধর করা হয়। তখন ইছা মিয়া চুরির ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন। এরপর তার কাছ থেকে চুরি হওয়া কিছু মাল উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় লোকজন ইছা মিয়ার পরিবারকে খবর দিলে তারা কেউ আসেননি। এরপর স্থানীয় ইউপি সদস্য রোপণ মিয়াসহ আরও কয়েকজন মুরব্বিকে ডেকে আনা হয়। ইছা মিয়া আর চুরির করবেন না মুচলেকায় পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
একই এলাকার আমতইল গ্রামের নুর আলম অভিযোগ করেন, তার বাড়ি থেকেও ইছা মিয়া চুরি করে টাকাপয়সা নিয়ে গেছেন। এলাকার অনেক বাড়িঘর ও মসজিদে চুরি করেছেন। এলাকার সবাই তার কারণে অতিষ্ঠ।
দক্ষিণ বড়দল ইউপির সদস্য রোপন মিয়া বলেন, ইছা মিয়ার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই চুরির অভিযোগ আছে। গ্রামের রহিম মিয়ার দোকানে চুরির ঘটনায় এলাকার যুবকেরা তাকে ধরে এনে বেঁধে রাখেন। পরে তিনি চুরির কথা স্বীকার করেন এবং কিছু মালামাল বের করে দেন। এরপর গ্রামের লোকজনের মতামতের ভিত্তিতে কাগজে মুচলেকা রেখে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইছা মিয়ার সাংগঠনিক পরিচয় নিশ্চিতের জন্য দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলামকে ফোন দিলে তিনি ফোন ধরেননি। সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুক মিয়া বলেন, ‘আমি ২০২০ সালে দল থেকে পদত্যাগ করেছি। এখন কে আছে আর কে নেই, জানি না।’
বিষয়টি নজরে আনা হলে তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, তাকে কেউ বিষয়টি জানায়নি বা চুরির বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। তবে চোর সন্দেহে কাউকে এভাবে ধরে এনে শাস্তি দেওয়া বেআইনি। বিষয়টি কেউ থানায় অবগত করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।