বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হচ্ছেন ড. এইচ মনসুর

জাতীয় ডেস্ক

আগস্ট ১৩, ২০২৪, ০৪:২৯ পিএম

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হচ্ছেন ড. এইচ মনসুর

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরবর্তী গভর্নর হতে যাচ্ছেন অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর। তবে তাকে গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশের পরিবর্তন করতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ জন্য আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। 

আহসান এইচ মনসুর বর্তমানে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক। এর আগে, তিনি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।

তবে, আহসান এইচ মনসুরকে গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ সংশোধন করতে হবে সরকারকে। আদেশ অনুযায়ী, সর্বোচ্চ ৬৭ বছর বয়সী কোনও ব্যক্তিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নিয়োগ করা যায়। কিন্তু আহসান এইচ মনসুরের বর্তমান বয়স ৭২ বছর ৮ মাস। সে কারণে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গভর্নর নিয়োগে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার বিবেচনার জন্য পাঠানো হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন পাওয়া গেলে তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতি এই প্রস্তাব অনুমোদন করলে অধ্যাদেশ আকারে তা জারি করা হবে।

মঙ্গলবার এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে বলে কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে।

এর আগেও, গভর্নর নিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ সংশোধন করা হয়েছিল। সাবেক গভর্নর ফজলে কবিরকে আবার নিয়োগ দিতে সংশোধন করা হয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ, যা ছিল দেশের ইতিহাসে প্রথম ঘটনা। আদেশ সংশোধনের পর গভর্নর হিসেবে ২০২০ সালের জুলাই মাসে তাকে দুই বছরের জন্য পুনরায় নিয়োগ দেওয়া হয়।

রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমান পদত্যাগ করলে পরদিনই সাবেক অর্থসচিব  ফজলে কবিরকে চার বছরের জন্য গভর্নর নিয়োগ দিয়েছিল সরকার। তিনি দায়িত্ব নেন ২০ মার্চ। সে হিসেবে তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ১৯ মার্চ। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩৪ দিন আগে ওই বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি গভর্নর হিসেবে ফজলে কবিরের মেয়াদ ৩ মাস ১৩ দিনের জন্য বাড়িয়ে দেয় সরকার। তখন বলা হয়, আইন অনুযায়ী ৬৫ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তিনি গভর্নর থাকবেন। ফজলে কবিরের ৬৫ বছর পূর্ণ হয় ২০২০ সালের ৩ জুলাই। কিন্তু তাঁকে পুনরায় নিয়োগ দিতে আদেশ সংশোধন করে গভর্নর নিয়োগের সর্বোচ্চ বয়স ৬৭ করা হয়।

উল্লেখ্য, শুক্রবার (৯ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার স্ব পদ থেকে পদত্যাগ করেন। শুক্রবার বিকেল তিনটার দিকে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। এর আগে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে যাচ্ছিলেন না গভর্নর আব্দুর রউফ।

এর আগে গত বুধবার একদল কর্মকর্তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, ৪ ডেপুটি গভর্নর, উপদেষ্টা ও আর্থিক গোয়েন্দা দপ্তর প্রধানের পদ ত্যাগের দাবিতে মিছিল করেন। এ ছাড়া তারা একজন ডেপুটি গভর্নরকে সাদা কাগজে সই করতে বাধ্য করেন এবং শীর্ষ আরও ৪ কর্মকর্তাকে ‘পদত্যাগে রাজি’ করান। ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জানান, কোনও সরকার পরিবর্তনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এমন ঘটনা এর আগে কখনও ঘটেনি।

তারা আরও জানান, ব্যাংক খাতের ভঙ্গুরতার কারণে দেশে অর্থনীতির আজ এই খারাপ অবস্থা তৈরি হয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য মানুষ কষ্টে আছে। এখন শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে তারা সহমত পোষণ করে অবিলম্বে তাদের বিচারের মুখোমুখি করারও দাবি জানান তারা।

ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা দাবি করেন, গভর্নরসহ বিভিন্ন অনিয়মে দায়ী কর্মকর্তারা যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন, সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া অনিয়মে যেসব নির্বাহী পরিচালক সহায়তা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রাথমিকভাবে তাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে হবে।

২০২২ সালের ১১ জুন গভর্নর হিসেবে ৪ বছর মেয়াদে নিয়োগ পান আব্দুর রউফ তালুকদার। তবে তিনি ওই বছরের ১২ জুলাই যোগ দিয়েছিলেন। গভর্নর হিসেবে যোগদানের আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব ছিলেন তিনি। দেশের রাজনৈতিক পালাবদলের আগে বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হন সদ্যপদত্যাগকারী আব্দুর রউফ তালুকদার।

Link copied!