জুন ১৫, ২০২৩, ০২:৫৭ এএম
বহুল আলোচিত ডিজিটাল ব্যাংক নীতিমালা বাংলাদেশ ব্যাংক বোর্ডের বুধবার (১৪ জুন) অনুষ্ঠিত সভায় অনুমোদন পেয়েছে। ক্যাশলেস এ ব্যাংক চলবে বাংলাদেশ পেমেন্ট এন্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেম রেগুলেশন ২০১৪ ও ব্যাংক কোম্পানী আইন ১৯৯১ অনুযায়ী। লেনদেনের জন্য এ ব্যাংকের স্পর্শযোগ্য বা ফিজিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট (টাকা বা কার্ড বা হাতে ধরা যায় এমন কোনও বিনিময় মাধ্যম) থাকবে না।
প্রস্তাবিত এ ব্যাংকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা (Artificial Intelligence-AI) প্রযুক্তির ব্যবহার করে লেনদেন বিষয়ক যাবতীয় বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্হা রাখতে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে লাইসেন্স দিতে আগ্রহীদের কাছ থেকে আবেদন চাইবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূখপত্র (দায়িত্বপ্রাপ্ত) আবুল বশর দি রিপোর্ট ডট লাইভ কে বুধবার সন্ধ্যায় জানান, এ সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। তিনি আগ্রহী সকলকে বাংলাদেশ ব্যাংক ওয়েবসাইট (bb.org.bd) তে নজর রাখতে অনুরোধ করেন।
দেশে প্রথম ক্যাশলেস অনলাইন ব্যাংকের প্রচলন শুরু করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেয়া `ডিজিটাল ব্যাংক` উদ্যোগটির নীতিমালা প্রনয়নের কাজ শুরু হয় ২০২২ সালের প্রথমদিকে।
সর্বশেষ বুধবার (১৪ জুন) অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় এটি অনুমোদিত হলো। সভায় সভাপতিত্ব করেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
গত ২ জুন বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে প্রথমবারের মতো দেশে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, "ক্যাশলেস সোসাইটি তৈরির লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। অচিরেই আসছে ডিজিটাল ব্যাংক।"
অনুমোদিত ডিজিটাল ব্যাংক নীতিমালা ২০২৩ অনুযায়ী, ব্যাংক কোম্পানী আইন ১৯৯১ এর ধারা ৩১ এর আওতায় ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে বাংলাদেশ ব্যাংক হতে লাইসেন্স নিতে হবে। ন্যুনতম ১২৫ কোটি টাকা নিয়ে ডিজিটাল ব্যাংকের ব্যবসা শুরু করা যাবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সময়ে সময়ে এটি পূনঃনির্ধারণ করতে পারবে। এই ১২৫ কোটি টাকা আদায়কৃত মূলধন সাধারণ শেয়ার দ্বারা সৃষ্ট হবে এবং আবেদনকারী, উদ্যোক্তা ও স্পন্সরগণ এ মূলধন সরবরাহ করবেন।
প্রত্যেক স্পন্সরের শেয়ার ধারনের পরিমাণ হবে ন্যুনতম ৫০ (পঞ্চাশ) লাখ টাকা। ব্যাংক কোম্পানী আইন ১৯৯১ অনুযায়ী নির্ধারিত সর্বোচ্চ শেয়ারধারনের পরিমান সরকারের সাথে পরামর্শক্রমে প্রয়োজনে শিথিল করা যেতে পারে।
কোনও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ঋণখেলাপী কোনও প্রতিষ্ঠান, কোম্পানী, ব্যাক্তি বা তার পরিবারের কোন সদস্য স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার হিসেবে আবেদন করার যোগ্য হবে না।
ডিজিটাল ব্যাংক ব্যবসা শুরুর পর তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোক্তাগণের শেয়ার হস্তান্তরের অনুমোদন প্রদান করবে না। এছাড়াও পাঁচ বছরের মধ্যে শেয়ার হস্তান্তরের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমতি নিতে হবে।
এছাড়াও, এ ব্যাংক লাইসেন্স প্রাপ্তির পাঁচ বছরের মধ্যে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও ইস্যুর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হবে।
প্রধান নির্বাহী কমকর্তা (সিইও) নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। এ ধরনের ব্যাংকে সিইও হতে কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং তন্মধ্যে অবশ্যই পাঁচ বছর প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং, রেগুলেশন ও নির্দেশনা সম্পর্কে অভিজ্ঞ হতে হবে।
একই পরিবার থেকে ব্যাংক কোম্পানী আইন ১৯৯১ এর অনুসরনে ব্যাাংকে পরিচালক নিয়োগের সংখ্যা মেনে চলতে হবে। ব্যাংকের পর্ষদে কমপক্ষে অর্ধেক সদস্যকে প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং, উদীয়মান প্রযুক্তি, সাইবার সংক্রান্ত আইন ও রেগুলেশন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হতে হবে। বাকীদের ই-কমার্স, ব্যাংকিং আইন ও রেগুলেশন সম্পর্কিত জ্ঞানসম্পন্ন হতে হবে।
এ ব্যাংক ওটিসি বা সরাসরি কাউন্টারে সেবা প্রদান করবে না। এর কোন শাখা, উপশাখা, উইন্ডো, এজেন্ট বা নিজস্ব কোনও এটিএম, সিডিএম বা সিআরএম থাকবে না।
এ ধরনের ব্যাংকে শক্তিশালী, পরিশীলিত ও পরিচালনযোগ্য আইসিটি এবং আ্যাপ্লিকেশন সিস্টেম থাকতে হবে। এ ব্যবস্হায় কমপক্ষে টিয়ার থ্রী ডাটা সেন্টার (ডিসি) ও ভিন্ন সিসমিক জোনে ডিজাস্টার রিকভারী সাইট (ডিআরএস) থাকতে হবে।
ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে সম্পত্তি জামানত রেজিস্ট্রি (Movable property collateral registry) তে অন্তর্ভুক্ত সম্পত্তি গ্রাহকের সহায়ক জামানত হিসেবে গ্রহন করতে পারবে।
এ ব্যাংক বৈদেশিক বাণিজ্য ঋণ, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পে ঋণদান ব্যতীত অন্যান্য খাতে অর্থায়ন বা ঋণ প্রদান করতে পারবে।
গ্রাহকের ঋণের ঝুঁকি নিরুপনের ও বিশ্লেষণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সময়ে সময়ে দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী কৃত্রিম বুদ্ধিৃত্তা ভিত্তিক বিকল্প ঋণ স্কোরিং (Alternative Credit Scoring) অনুসরন করতে হবে।
দৈনন্দিন লেনদেনে অনলাইন প্রযুক্তিনির্ভর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং, ব্লকচেইন এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অন্যান্য অগ্রসরমান প্রযুক্তি ব্যবহার করবে।
গ্রাহক অবহিত করুক বা না করুক লেনদেনে দৈনন্দিন বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিনির্ভর একটি স্বয়ংক্রিয় বিবাদ মীমাংসা ব্যবস্হা সর্বদা সক্রিয় রাখতে হবে।