ব্যবসার ক্ষেত্রে বড় বাঁধা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর- ব্যবসায়ীদের এমন অভিযোগের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন বৃটিশদের করা নিয়মকানুন পরিবর্তন না হলে এটা হতে থাকবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি (এনবিআর) বিপদের সময় সরকারকে অর্থের জোগান দেয়। এই অর্থ সংগ্রহের প্রক্রিয়া সব সময় যে আনন্দ নিয়ে করে, এমন নয়। অনেক সময় কষ্ট দিয়েই করে। তবে আমি বলব, এনবিআরের সমস্যাটা ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়, নিয়মকানুনকেন্দ্রিক।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘ব্রিটিশরা অনেক বাঁকা নিয়মকানুন তৈরি করে গেছে। পাকিস্তান আমলেও সেগুলো ছিল। আমরাও শুরুতে এসব বুঝতে পারিনি। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত এসব বাঁকা নিয়মকানুনের পরিবর্তন না হবে, ততক্ষণ সমস্যা থাকবে।’
শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশ চ্যাপ্টার আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান এসব কথা বলেন।
এর আগে অনুষ্ঠানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সমালোচনা করে অ্যামচেম সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের মতো এত অকার্যকর শুল্ক বিভাগ (কাস্টমস) বিশ্বের আর কোথাও নেই। ব্যবসার ক্ষেত্রে কেউ যদি প্রধান বাধা হয়, সেটা এনবিআর।
আইসিসিবির সহসভাপতি হামিম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এ কে আজাদ বলেন, তিনি মনে করেন যে প্রতিটি মন্ত্রণালয় এবং সরকারের প্রতিটি জায়গায় জবাবদিহি নিশ্চিত করা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
এ গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আইসিসিবি সভাপতি মাহবুবুর রহমান। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক মুস্তাফা কে মুজেরী, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক এম শামসুল হক।
মন্ত্রী মান্নান বলেন, বিদেশি সংস্থার কাছ থেকে কম ঋণ নিতে পরামর্শক নিয়োগসহ বিভিন্ন শর্ত মানতে হয়।
তিনি বলেন, "এটা অনেকটা বই কিনলে সঙ্গে নোটও নিতে হবে, এমন অবস্থা।"
মন্ত্রী আরও বলেন, এতে সময় ও অর্থের অপচয় হয়। তাদের শর্ত অনুসারে পরামর্শক না নিলে আবার ঋণও দেয় না।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রায়ই সময় ও অর্থের বড় ধরনের অপচয় হয়। তারপরও লেনদেনের শর্তের খাতিরে অনেক সময় বাধ্য হয়ে পরামর্শক নিতে হয়।
উদাহরণ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘অনেক সময় বই কিনলে নোটও কিনতে হয়। কারণ, নোট না নিলে বই দেবে না। তেমনি (ঋণ প্রদানকারী সংস্থা) ঋণ দেবে না, যদি ওই পরামর্শক না নিই। এটা লুকানোর কোনো বিষয় নয়। যেহেতু আমরা কম সুদে ঋণ নিই, এ জন্য ওই প্রক্রিয়ায় সেমিনার, ভিজিট, কনসালট্যান্ট, মিশনসহ বিভিন্ন ফাঁদ থাকে।’