ঈদকে কেন্দ্র করে জাকাতের অর্থনীতি চাঙ্গা হলেও করোনা পরিস্থিতিতে বিগত বছরর ন্যায় এবারও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। দেশে ঈদুল ফিতরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার জাকাত সংক্রান্ত লেনদেন হয়। তবে চলতি ঈদে পুরো আর্থিক খাতে জাকাতের অর্থনীতির প্রবাহ কমে গিয়েছে।
দেশে যাকাতের পরিমান কত?
নিউ ওরলেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবির হোসেনের মতে , দেশে জাকাতের অর্থনীতি প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। যেটা পুরোটাই বেসরকারিভাবে নিয়ন্ত্রিত ও বিতরণ করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের জিডিপির প্রায় ১.৬৩ শতাংশ আসে এই জাকাতের অর্থনীতি থেকে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের জিডিপির আকার ছিল প্রায় ২৭ লাখ কোটি টাকা। সে হিসেবে দেশের জাকাতের অর্থনীতির পরিমান প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এর বিপরীতি সরকারি জাকাতের ফান্ডে মাত্র ৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা জমা হয়েছে।
ইসলামী ফাউন্ডেশনের জাকাত বোর্ডের পরিচালক মো. হারুনর রশিদ বলেন, দেশে জাকাত দেয়ার প্রবণতা অনেক। কিন্তু তারা বেশিরভাগই স্ব উদ্যোগে দিয়ে থাকে বিধায় এটা এখনও কাগজে কলমে হিসেব রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
বিক্রি নেই জাকাত পণ্যের
দেশের জাকাত দেয়ার ক্ষেত্রে শাড়ি, লুঙ্গি ও পাঞ্জাবি বেশি দেয়া হয়। করোনার ফলে সামাজিক দুরত্ব রেখে এই পণ্য দেয়াটা দুঃস্কর বিধায় অনেকেই গণজমায়েতের মাধ্যমে জাকাত দিচ্ছে না। এদিকে আর্থিক সাহায্য দেয়ায় টাকার প্রবাহ একমুখী হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে জাকাত পণ্যের বিক্রেতারা বিপাকে পড়েছে। রাজধানীর শাড়ির বাজার ইসলামপুর ও পাঞ্জবির বাজার উর্দু রোডে পাইকারি বিক্রেতারা হতাশার কথা বলেছেন।
দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ও এফবিসিসিআইর সাবেক সহসভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, বাস্তবিকভাবে শুধু জাকাতের পণ্যই কেনা হত ৪০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু চলতি বছরে ১ হাজার কোটি টাকারও পণ্য বিক্রি হয়নি। এদিকে আর্থিক সাহায্য,বিভিন্ন উপঢৌকন ইত্যাদি মিলিয়ে যাকাতের অর্থনীতির পরিসর আরও বড় ছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে সব হিসেব পাল্টে গেছে।
রাজনৈতিক নেতাদের তৎপরতা কম
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণের বাইরেও ঈদে রাজনৈতিক নেতাদের কর্মসূচি থাকে। ঈদ শুভেচ্ছায় তারা কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় করেন। এসব নেতাকর্মীর ঈদ শুভেচ্ছার ডিজিটাল ব্যানার, পোস্টার, বোর্ড গুরুত্বপূর্ণ স্থানে টানানো হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারনে স্ব স্ব স্থানে থাকার নির্দেশনা মান্য করে এই ধরনের কর্মসূচীতে অনেকেই অংশগ্রহণ করতে পারছে। না।
রেমিটেন্সই একমাত্র ইতিবাচক
চলতি অর্থবছরের এপ্রিল মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই দশমিক শূন্য সাত বিলিয়ন ডলারে। যা গত বছরের এপ্রিল মাসের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। গত বছরের এপ্রিল মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১.০৯ বিলিয়ন ডলার। তবে, চলতি অর্থবছরের এপ্রিলে এসে এই রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২.০৭ বিলিয়ন ডলারে।