ক্রেতা নেই শেয়ারবাজারে, সংকটে বিনিয়োগকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

এপ্রিল ১৮, ২০২২, ১০:০৪ পিএম

ক্রেতা নেই শেয়ারবাজারে, সংকটে বিনিয়োগকারীরা

গত ১১ কার্যদিবসে শেয়ারবাজারের প্রায় ৩০০ পয়েন্ট উধাও হয়ে গেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে ক্রেতা সংকটের কোম্পানির সংখ্যা। দিন দিন বাজারের অবস্থা এতোটাই অবনতি হচ্ছে যে, লেনদেনের শুরুতেই শতাধিক কোম্পানির ক্রেতা নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে। সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার লেনদেনের ৯১ শতাংশ কোম্পানি বা সাড়ে তিন’শ কোম্পানির দরপতন হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় অর্ধেক সংখ্যক কোম্পানিই ছিল দিনভর ক্রেতাশুন্য।

আপন গতিতে ঠিক হবে শেয়ারবাজার

শেয়ারবাজারের অবস্থা এমন মারাত্মক হলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিশ্চুপ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন, বাজারে পতন ফেরাতে তারা আর নতুন করে উদ্যোগ নেবেন না। তাদের মতে, বাজার নিজের শক্তিতে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ঘুরে দাঁড়াবে। আপন গতিতে বাজারকে চলতে দিতে হবে। যে কারণে রোজার আগে সামান্য পতনেও প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের যতোটা সক্রিয়তা দেখা গিয়েছিল, এখন বিপর্যয়েও তার ধারেকাছে নেই। 

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ধারাবাহিক পতনে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের এর আগে নানা উদ্যোগ নিয়ে দৌড়ঝাপ দেখা গিয়েছিল। তারা সব সময়ে চেয়েছেন বাজারে যেন অস্বাভাবিক কিছু না ঘটে। সেই ধাররাবাহিকতায় রোজার আগে তাদেরকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে পতন ঠেকাতে দফায় দফায় সভা করতে দেখা গেছে। কিন্তু সেসব সভার কোন পজিটিভ রেজাল্ট না পাওয়াতে তাঁরা এখন রীতিমত ক্ষুব্দ। অসহায়ত্বের কারণে তারা এখন অভিমানে রয়েছেন। যে কারণে তাঁরা এখন নিশ্চুপ।

এদিকে, ধারবাহিক পতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পুঁজি হারানোর হাহাকার আর তীব্র হয়ে উঠছে। তারা প্রতিদিনই ভালো কিছুর প্রত্যাশা নিয়ে বাজারে আসছেন, কিন্তু দিনশেষে রক্তক্ষরণ আরও বাড়িয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। দিন যতই যাচেছ, তাদের অনিশ্চতয়তা ও রক্তক্ষরণ আরও বাড়ছে। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, তাদের এখন রাস্তায় জায়গা নেওয়া ছাড়া আর কোন গত্যন্তর নেই।

সোমবারের শেয়ারবাজার

আগের কার্যদিবসের মতো আজ সোমবার আরও বড় পতন হয়েছে শেয়ারবাজারে। এদিন শেয়ারবাজারের সব সূচকের বড় পতন হয়েছে। একই সাথে টাকার পরিমাণে লেনদেন আর অধিকাংশ সিকিউরিটিজের দরও কমেছে।

প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেয়া ৯১ শতাংশ কোম্পানিরই শেয়ারদর কমছে। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭২.৪৯ পয়েন্ট বা ১.১০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪৮২.৩৮ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১৩.৫৪ পয়েন্ট বা ০.৯৩ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ২৫.৩১ পয়েন্ট বা ১.০৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৪২৮.৬৭ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ৪০৯.৬৮ পয়েন্টে।

ডিএসইতে আজ টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৩৯০ কোটি ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা কম। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয়েছিল ৩৯৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকার। ডিএসইতে আজ ৩৮০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪টির বা ৩.৬৮ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ৩৪৭টির বা ৯১.৩২ শতাংশের এবং ১৯টি বা ৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ১৭৬.৮৭ পয়েন্ট বা ০.৯১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ১২৫.৬৪ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৬৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ২৩টির, কমেছে ২২৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৯টির দর। আজ সিএসইতে ৩৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।

Link copied!