মে ৩০, ২০২৩, ০৭:৪৮ পিএম
নিজেদেরকে শ্রমিক দাবী করে বাংলাদেশের অ্যাপস্-ভিত্তিক রাইড পরিষেবা প্রদানকারীরা (বাইক, কার ও সিএনজি চালকরা) ১৪ দফা দাবীতে জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গনে বৃহস্পতিবার (৩১ মে) এক সমাবেশের ডাক দিয়েছে।
একই সময়ে চট্রগ্রাম ও সিলেটেও এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে অ্যাপ-বেইজড্ ওয়ার্কারস্ ফেডারেশন অব বাংলাদেশ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।
তাদের দাবীর মধ্যে রয়েছে আ্যাপস অপারেটরদের কমিশন ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা, দূর্ঘটনায় অঙ্গহানি হলে ক্ষতিপূরণ, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জ্বালানী গ্রহনের সুযোগ, পার্কিং ও টয়লেট সুবিধা সৃষ্টি, সর্বনিন্ম ভাড়া কার এর ক্ষেত্রে ২৫০ টাকা, সিএনজিচালিত থ্রি হুইলারের ক্ষেত্রে ২০০ টাকা ও মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে ১৫০ টাকা নির্ধারণ ও যত্রতত্র থামিয়ে গাড়ির পেপার পরীক্ষার নামে প্রশাসনিক হয়রানি বন্ধ করা।
অ্যাপ-বেইজড্ ওয়ার্কারস্ ফেডারেশন অব বাংলাদেশ এর যুগ্ন আহবায়ক এম এইচ টুটুল অভিযোগ করেন যে অ্যাপ-ভিত্তিক কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার ফলে তালিকাভূক্ত চালকদেরকে নিঃস্ব করে পথে বসিয়ে ছাড়ছে। অ্যাপসের মাধ্যমে শুধুমাত্র যোগাযোগ স্থাপন করেই কষ্টার্জিত আয় থেকে ২৫ শতাংশ কমিশন কেড়ে নেয়া হচ্ছে। এর ফলে উর্ধ্বমুখী দ্রব্যমূল্যের সাথে তারা আয় দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না।
এদিকে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এর হিসেব অনুযায়ী মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত দেশে মোট ৪০ লাখ ৯০ হাজার ১৪৩ মোটর সাইকেল নিবন্ধিত। এর মধ্যে শুধু ঢাকা মহানগরী তে ১০ লাখ ৩৬ হাজার ৬২৫ টি।
করোনার সংক্রমনের পর দেশে নতুন মোটর সাইকেল যুক্ত হয়েছে ১২ লাখ ৭৫ হাজার ৫০৬ টি। এর আগে এ সংখ্যা ছিলো ২৮ লাখ ১৪ হাজার ৬৩৭ টি।
ঢাকায় করোনার পর ২০২০ থেকে মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত নতুন মোটর সাইকেল যোগ হয়েছে ৩ লাখ ১৯ হাজার ৯৮০ টি। ২০১৯ সাল পর্যন্ত এ সংখ্যা ঢাকায় ছিলো ৭ লাখ ১৬ হাজার ৬৪৫ টি।
গত তিন বছরে দেশে মোটর সাইকেলের সংখ্যা বেড়েছে ২০১৯ সালের মোট হিসাবের ৩০ শতাংশের বেশী। এদের বেশীরভাগই এসব বানিজ্যিক রাইড শেয়ার সেবায় নিয়োজিত। এছাড়াও, ব্যক্তিগত গাড়ী ও সিএনজি চালিত অটোরিকশাও এ রাইড শেয়ার আ্যাপস এ যুক্ত হয়ে সেবা দিচ্ছেন।
বাংলাদেশে অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা হিসেবে উবার যাত্রা শুরু করে ২০১৬ সালে। ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি প্রথম চালু হয়।
এতে নিবন্ধিত হয়ে মোটর বাইকারদের অনেকে বিকল্প কর্মসংস্থান খুঁজে পায়৷ কিন্ত আ্যাপ এ ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট এ বিলম্ব ও অন্যান্য জটিলতার কারনে আ্যাপ বন্ধ রেখে যাত্রীদের সাথে সরাসরি কন্টাক্ট করে বাইকার রা সার্ভিস দিতে শুরু করে। চাহিদা থাকায় ক্রমেই এ দলে যোগ দেয় পুরনো ও নতুন বাইকাররা।
রাইড শেয়ারে নিয়োজিতরা অভিযোগ করেন, ভাড়ার ২৫ ভাগ আ্যাপস মালিককে দিতে হয়। ফুয়েল এর দাম বৃদ্ধির পরও উবার কর্তৃপক্ষ কমিশন না কমানোয় বাইকাররা পর্যায়ক্রমে ফ্রিল্যান্স রাইড শেয়ারিং শুরু করে।
এদিকে প্রায় প্রতিদিন বাইক দূর্ঘটনার শিকার হয়ে যাত্রী ও বাইকারসহ অনেক তাজা প্রাণ অকালে ঝরে যাচ্ছে। তবুও চলছে জীবিকার তাগিদে বাইকে রাইড শেয়ারিং। কারন এরা কর্মহীন। চাকুরী হারিয়েছেন বা চাকুরির চেষ্টা বারবার করেও ব্যর্থ হয়েছেন।
একজন জানালেন, তিনি সারাদিন এ কাজ করেন এবং তার টার্গেট প্রতিদিন খাওয়া খরচ ও ফুয়েল ব্যয় বাদে এক হাজার টাকা আয় করা।
আরেকজন জানান, তিনি একটি ফুলটাইম জব করেন এবং অফিস থেকে বের হয়ে ২-৪ ঘন্টা রাইড শেয়ার করেন। এতে তার ৫শ থেকে ৭শ টাকা আয় হয়।
জানা যায়, রেজিস্ট্রিকৃত বাইকের সংখ্যার চাইতেও বেশী বাইকার এখন ঢাকায় রাইড শেয়ার করেন। তারা নিজ জেলায় রেজিষ্ট্রেশন নিয়েছেন টবং ঢাকায় এসে রাইড শেয়ার করছেন। থাকছেন মেসে বা আত্মীয় স্বজনের বাসায়।
লক্ষ্য একটাই। বেকার বসে না থেকে আয় রোজগারের চেষ্টা করা।