করোনার টিকা গ্রহনের ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউভুক্ত দেশসমূহে স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। ফলে সেসব দেশের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রয়াদেশ বাড়িয়ে দিয়েছে। হঠাৎ ক্রয়াদেশ বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের পোশাকখাত, চামড়া শিল্পের কারখানাগুলোতে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়েছে। উৎপাদন সক্ষমতার চেয়েও বেশি আদেশ থাকায় নতুন নিয়োগসহ নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। কিন্তু রপ্তানিখাত চাঙ্গা করতে এই সমস্যাকে সুযোগ হিসেবে দেখছেন দেশের উদ্যোক্তারা।
২০ শতাংশ বেশে অর্ডার পোশাক খাতে
আগামী গ্রীষ্ম ও বসন্ত মৌসুমের জন্য মহামারী পূর্ববর্তী সময়ের চেয়ে ১৫-২০ শতাংশ বেশি অর্ডার এসেছে। যা রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন সক্ষমতার চেয়েও বেশি। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি বাড়ছেই।
এ বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, মিয়ানমারে সেনাশাসনের কারণে কিছু ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হয়েছে। তার আগেই চীন থেকে কিছু ক্রয়াদেশ বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে স্থানান্তর করে আসছেন ইউরোপ-আমেরিকার ক্রেতারা। যার ফলে বাংলাদেশেল ক্রয়াদেশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন,হঠাৎ ক্রয়াদেশ বেড়ে যাওয়ায় অনেক কারখানায় সাময়িক সমস্যা হলেও এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। আশা করছি শীঘ্রই সমস্যা সম্পত্তিতে পরিণত হবে।
মৌসুমী অর্ডারের চাপ
আগামী ৩১ অক্টোবর হ্যালুইন উৎসব, এছাড়া শীতকালীন পোশাক ও বড়দিনের জন্য ক্রয়াদেশ রয়েছে। এরপরপরই রয়েছে থার্টি ফার্স্ট নাইট। সব মিলিয়ে প্রায় দুই বছর পর এই উৎসব গুলো পালন করার সুযোগ পাচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো। এরই ফলে ক্রয়াদেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু পোশাক খাতই নয় দেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের ক্রয়াদেশের পরিমানও বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানায় বাংলাদেশ চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য প্রক্রিয়া ও রপ্তানিকারক সংগঠন।
নতুন ১৭১ টি গার্মেন্টস চালু
মহামারী করোনাভাইরাসের প্রথম ঢেউয়ে গত বছর একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হওয়ায় পোশাক রফতানি ব্যবসা বড় ধরনের হুমকির মধ্যে পড়ে যায়। বছরের শেষ দিকে ব্যবসা আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। করোনাকালে কমপক্ষে ১৭১টি নতুন পোশাক কারখানা উৎপাদনে এসেছে। তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্যানুযায়ী, গত বছরের জুন থেকে গত মাস পর্যন্ত ৯৬টি নতুন কারখানা তাদের সদস্যপদ নিয়েছে। বর্তমানে সব কটিই উৎপাদনে রয়েছে। অন্যদিকে নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ জানায়, গত বছর ৩৩টি কারখানা সদস্যপদ নিয়েছে।
ঘাটতি রয়েছে প্রায় ৩ লাখ শ্রমিকের
হঠাৎ ক্রয়াদেশ বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন পোশাক খাতেই প্রায় ৩ লাখ বাড়তি শ্রমিকের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। তবে স্বল্প সময়ের মধ্যে এত দক্ষ শ্রমিক পাওয়া যাবেনা বিধায় আক্ষেপ করেছেন পোশাক শিল্প মালিকরা।
বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, ক্রেতাদের ক্রমবর্ধমান পোশাক চাহিদা পূরণে পোশাক শিল্পে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ কর্মীর প্রয়োজন দেখা দিয়েছে, সংখ্যায় যা প্রায় ৩ লাখ হতে পারে। তিনি বলেন, অতিরিক্ত কার্যাদেশ পূরণে গার্মেন্টস শিল্পে দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন, তবে আমাদের দেশে দক্ষ ও অদক্ষ পোশাক শ্রমিক তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অভাব রয়েছে। সরকার দক্ষতা উন্নয়নে মনোনিবেশ করলে তা পোশাক শিল্পে আরও কর্মসংস্থান তৈরিতে সহায়ক হবে।
সমস্যার মধ্যে বড় সম্ভাবনা রয়েছে
বাড়তি চাপের আগেই সামগ্রিকভাবে পোশাক শিল্পের উৎপাদন সক্ষমতা বেড়েছে।নতুন আসা কারখানার মধ্যে অধিকাংশই ক্ষুদ্র ও মাঝারি। ভবিষ্যতে এই কারখানাগুলোর মধ্যেই কিছু বড় কারর পাশাপাশি নতুন কারখানা স্থাপনের পাশাপাশি ব্যবসাও সম্প্রসারণ করছে অনেক প্রতিষ্ঠান। পোশাকের পাশাপাশি বস্ত্র খাতেও নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে।
বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন জানিয়েছে, ২০২৩ সালের মধ্যে খাতটিতে বিনিয়োগ ২৫০ কোটি মার্কিন ডলার বা ২১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা হবে। গত নবেম্বর থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে ১০টি নতুন বস্ত্রকল সংগঠনটির সদস্যপদ নেয়ার জন্য আবেদন করেছে। তার মধ্যে রয়েছে সুতা ও কাপড় উৎপাদনকারী কারখানা। কারখানাগুলো আগামী দুই বছরে উৎপাদনে আসবে। এসব কারখানায় বিনিয়োগ হচ্ছে ৪ হাজার ৬০ কোটি টাকা। যার ফলে রপ্তানির এই বাড়তি চাপের সমস্যাটার মাধ্যমে সম্ভাবনা খুচে নিতে হবে বলে জানায় ব্যবসায়ীরা।
সেপ্টেম্বর মাসে রেকর্ড পোশাক রফতানি
করোনা মহামারীর মধ্যেই গত মাসে দেশের উদ্যোক্তারা মোট ৪১৭ কোটি ডলার বা প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকার পণ্য রফতানি করেছেন। যার মধ্যে সাড়ে ৮২ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। অতীতে আর কোন মাসেই এত বিপুল পরিমাণ পণ্য রফতানি হয়নি। এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে সর্বোচ্চ ৩৯১ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছিল বাংলাদেশ। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি বাড়ছেই। গত ৫ অক্টোবর প্রকাশিত ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল এ্যান্ড এ্যাপারেলস (অটেক্সা) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৪৩২ কোটি ১০ লাখ ৯৪ হাজার ডলারের পোশাক আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি গত বছরের একই সময়ে আমদানি করে ৩৪৮ কোটি ৪৯ লাখ ৪০ হাজার ডলারের পোশাক। এ হিসাবে আমদানি বেড়েছে ২৪ দশমিক ১১ শতাংশ। বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি করা পোশাকের অধিকাংশই কটনভিত্তিক।