বিশ্বব্যাংকের ঋণ জুনের আগে রিজার্ভ পরিস্থিতির কোনও উন্নতি করবে কি?

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মে ৩, ২০২৩, ০৪:০৭ এএম

বিশ্বব্যাংকের ঋণ জুনের আগে রিজার্ভ পরিস্থিতির কোনও উন্নতি করবে কি?

বিশ্বব্যাংকের বরাদ্দকৃত ঋণ বাংলাদেশে চলমান বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতিকে সামান্য স্বস্তি দেবে বলে দেশের বিশিষ্ট দুই অর্থনীতিবিদ মন্তব্য করেছেন।

তবে, তারা এও বলেন যে, তাতে আন্তর্জাতিক মূদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর বেঁধে দেয়া শর্ত পূরনে যথেষ্ট হবে না। অর্থাৎ চলমান সংকটজনক পরিস্হিতির খুব বেশি উন্নতি হবে না। কারণ হিসেবে তারা বলেন, প্রতিমাসে নতুন আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার ব্যয় তো রয়েছেই; এর মধ্যে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন (এসিইউ) এর বাল্ক আমদানি ব্যয়ের বকেয়াও পরিশোধ করার তাগিদ আছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক মঙ্গলবার রাতে দি রিপোর্ট ডট লাইভ কে জানান, সর্বশেষ রিজার্ভের পরিমান ছিলো ৩০ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন বা তিন হাজার নয়শ আশি কোটি মার্কিন ডলার। তিনি জানান, এসিইউ পেমেন্ট টা সামনে করা হবে। আর কোনও মন্তব্য তিনি করতে রাজী হননি।

তবে, গত ২৫ এপ্রিল আইএমএফ এর প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈঠক করার পর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেছিলেন, বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। একইসাথে তিনি বলেছিলেন, রিজার্ভের বাইরে দেশের ব্যাংকগুলোর কাছে প্রায় সাড়ে তিন বিলিয়ন (৩৫০ কোটি) ডলার জমা আছে।

আমদানী ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় গত জুলাই-সেপ্টেম্বর থেকে শুরু বৈদেশিক মূদ্রার চাপ সামলাতে বাংলাদেশ ব্যাংক হিমসিম খাচ্ছে। তড়িঘড়ি করে আমদানি ব্যয় সংকোচন নীতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে কয়লা ও জ্বালানিসহ বিলাস সামগ্রীর এলসি বন্ধ করে দেয়া হয়। ব্যাংকগুলো গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী এলসি খুলতে না পেরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ডলার কিনে নেয়া শুরু করে। এতে বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকে। ফেব্রুয়ারী ও মার্চে রপ্তানী ও রেমিট্যান্স আয় বাড়ায় ব্যাংকগুলোতে বৈদেশিক মূদ্রার সরবরাহ বাড়ে। এতে রিজার্ভের উপরও চাপ কিছুটা হ্রাস পায়।

এদিকে, আইএমএফ বলেছে বাংলাদেশকে আগামী ৩০ জুন তারিখে বৈদেশিক মূদ্রার নীট রিজার্ভ রাখতে হবে ২৪.৪ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৪৪০ কোটি ডলার। সে হিসেবে ঘাটতি রয়েছে প্রায় পৌনে তিন বিলিয়ন বা ২৭৫ কোটি ডলার।

বর্তমানে ৩০ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন থেকে এসিইউ পেমেন্ট বাদ দিলে রিজার্ভ নেমে যাবে ৩০ বিলিয়নের নীচে। কারন, এসিইউ'র বাল্ক পেমেন্ট প্রতি তিন মাসে সাধারনত এক বিলিয়ন প্লাস (মার্কিন ডলার) হয়ে থাকে।

এছাড়া, রিজার্ভের অর্থে বিদেশে বিভিন্ন বন্ড, মুদ্রা ও স্বর্ণে বিনিয়োগ; রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল গঠন; বাংলাদেশ বিমানকে উড়োজাহাজ কিনতে সোনালী ব্যাংককে ধার দেয়া; পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের খনন কর্মসূচিতে অর্থ দেওয়া এবং শ্রীলঙ্কাকে অর্থ ধার দেওয়া বাবদ খরচ ৮২০ কোটি ডলার রয়েছে। আইএমএফের মতে, এগুলো বাদ দিলে প্রকৃত ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ দাঁড়ায় ২ হাজার ২০০ কোটি ডলার।

এমন পরিস্থিতি বিবেচনায়, বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন দি রিপোর্ট ডট লাইভ কে মঙ্গলবার রাতে বলেন, ৪ টি প্রকল্প সহায়তা ছাড়া একটি বাজেট সহায়তা আছে যেটির আওতায় ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আসছে জুনের আগে ছাড় দিবে বিশ্বব্যাংক। ঋণের বাকী অংশ কখন ছাড় হবে তা নির্ভর করবে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন অগ্রগতির উপর। সুতরাং আপাতত জুনের আগে যে ৫০০ মিলিয়ন ডলার পাবে তাতে 'কিছুটা রিলিফ' পাওয়া যাবে চলমান বৈদেশিক মূদ্রার সংকট মোকাবেলায়। আর রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নতি বলতে গেলে সেটা নির্ভর করবে জুন নাগাদ সরকার আরও কি পরিমাণ রিসোর্স পাবে তার উপর।

ড. জাহিদ হোসেন বলেন, "তবে, এশিয়ান অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংক ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি থেকে যে এক বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলার পাবার কথা সেটা প্রাপ্তিসাপেক্ষে বিশ্বব্যাংকের ঋণের টাকা যোগ করলে রিজার্ভ পরিস্থিতি কিছুটা স্বস্তিমূলক জায়গায় যেতে পারে।"

বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) এর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, "খুব বেশি আশাবাদী আমি (রিজার্ভ নিয়ে) হতে পারছি না। যৎসামান্য কাজে আসতে পারে।"

তিনি আরও বলেন, "সমস্যাটা হচ্ছে যে বাংলাদেশ ব্যাংক এখনও অনেক ডলার বিক্রি করছে। এবং প্রতিদিনই এর পরিমাণ কমছে। বিক্রি বন্ধ রেখে ডলারের চাহিদা ও সরবরাহ পরিস্থিতি বাজারের উপর ছেড়ে দিলে ব্যাংকগুলো বাজার থেকেই ডলার কিনতো এবং এতে বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ নিয়ে ভাবতে হতো না। এতে হয়তো ডলারের দাম বাড়তো  কিন্ত সরবরাহ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে ভাবতে হতো না। দুঃখজনক হলো বাংলাদেশ ব্যাংক এখনও ডলার বিক্রি করছে এবং দর নিয়ন্ত্রণ করছে।"

তিনি বলেন, "প্রতিবেশী ভারত ডলারের বিনিময় হার বাজারের উপর ছেড়ে দিয়ে ইতিবাচক ফলাফল পাচ্ছে। তারা রিজার্ভ নিয়ে সংকটজনক পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ফেলেছে।"

আইএমএফ গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশের জন্য ৪শ ৭০ কোটি ডলার ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করেছে তার শর্তাবলীর  মধ্যে অন্যতম শর্ত হচ্ছে জুনের মধ্যে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ অন্তত ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলারে উন্নীত করা। জুন মাসে এ শর্ত পুরণ করতে পারবে না বাংলাদেশ এমটাই আইএমএফের আশংকা। 

এদিকে, আগামী সেপ্টেম্বর এমনকি ডিসেম্বরের জন্যও একই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংস্থাটির সফররত প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। 

আইএমএফের মানদণ্ড অনুযায়ী আগামী সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের রিজার্ভ ২ হাজার ৫৩০ ডলার এবং ডিসেম্বরে ২ হাজার ৬৮০ ডলারের নিচে থাকতে পারবে না। 

Link copied!