মার্কিন বোয়িং বাংলাদেশে কী চায়!

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মে ১৩, ২০২৩, ০৩:৪৭ এএম

মার্কিন বোয়িং বাংলাদেশে কী চায়!

বাংলাদেশে প্রতিদ্বন্দ্বী এয়ারবাসের বিক্রি ঠেকিয়ে নিজেদের এয়ারক্রাফট বিক্রি করতে বোয়িংয়ের কর্মকর্তারা এখন ঢাকায়। এয়ারবাস হলো ফরাসী বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে এয়ারবাসের তৈরি এয়ারক্রাফট জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

এদিকে, মার্কিন কোম্পানি বোয়িংয়ের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চল ও ভারতের কমার্শিয়াল মার্কেটিং ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডেভিড শাল্ট ও রিজিওনাল ডিরেক্টর, কমিউনিকেশন (নর্থ ইস্ট এশিয়া কমার্শিয়াল এয়ারপ্লেন বিভাগ) বুধবার ঢাকার একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

এখন প্রশ্ন, মার্কিন আকাশযান নির্মাণ প্রতিষ্ঠান বোয়িং শীর্ষ কর্তারা হঠাৎ কেন বাংলাদেশে? জবাবে ডেভিড শাল্ট বলেছেন, বোয়িং বাংলাদেশে রীতিমতো অফিস খুলে ব্যবসা করতে চায়। বাংলাদেশে তাদের গ্রাহকদের নিবিড় সেবা দিতেই তাদের ঢাকায় অফিস করার সিদ্ধান্ত। 

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে সরকারি এয়ারলাইন্স বিমান বাংলাদেশ ও বেসরকারি ইউএস বাংলা বোয়িংয়ের গ্রাহক। বিমানে বোয়িংয়ের মোট ৮টি ও ইউএস বাংলায় ২টি এয়ারক্রাফট রয়েছে। 

সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষক মহল কিন্তু বলছে ভিন্ন কথা, এদের মতে বিশ্বব্যাপী বোয়িংয়ের একমাত্র দ্রুত বর্ধমান প্রতিযোগী হলো ফ্রান্সের বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস। এরইমধ্যে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বিমান কিনতে ফরাসি কোম্পানি এয়ারবাসের সাথে যোগাযোগ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় ব্যবসা হারানোর ভয় করছে বোয়িং। বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন নতুন করে ১০টি এয়ারবাস ক্রয়ের ব্যাপারে বোয়িং এবং এয়ারবাস দুই পক্ষের সাথেই কথা চলছে।

কর্মকর্তারা বলেছেন, দাম, বিক্রয়োত্তর সেবার সজলভ্যতা ও ভবিষ্যতে বিমানের বর্ধিত চাহিদা মেটানো- এসব বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিবে বাংলাদেশ।

এছাড়া বাংলাদেশে বেসরকারি নভোএয়ারও এয়ারবাসের এয়ারক্রাফট তাদের ফ্লিটে যুক্ত করতে চায় বলে জানা গেছে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং সারা বিশ্বে বাণিজ্যিক ও সামরিক বিমান সরবরাহে দীর্ঘ ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে একাই রাজত্ব করেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক কয়েকটি দুর্ঘটনার কারণে বোয়িংয়ের স্থান ক্রমান্বয়ে পতনমুখী।

গ্রাহকদের কাছে এ সময়ে তুলনামূলকভাবে ভরসা সৃষ্টি হয়েছে এয়ারবাসের প্রতি। কম সময়ে ফরাসি এ কোম্পানি প্রযুক্তি, গুণগত মান ও সেবা দিয়ে নিজেদের স্থান করে নিয়েছে বিমান নির্মাণ ও সরবরাহের এ বিশাল বাজারে।

চলুন দেখে নিই বোয়িং ও এয়ারবাসে দুই কোম্পানির তৈরি এয়ারক্রাফট বা এয়ারবাসে কি কি তুলানমূলক সুবিধা ও অসুবিধা আছে? এছাড়া, প্রযুক্তি ও স্থায়িত্ব বা লাইফটাইম বিবেচনায় কোনটা কেমন?

মূল পার্থক্য যেটা চোখে দেখে পৃথক করা যায় তা হলো- বোয়িংয়ের ল্যান্ডিং গিয়ার এসেম্বলি ফোর হুইল আর এয়ারবাসের টু হুইল। রাতে বোয়িংয়ের লাইট একবার সিঙ্গেল ফ্লাশ প্রজ্বলিত হয় আর এয়ারবাসে তড়িৎ গতিতে ডাবল ফ্লাশ করে। 

এয়ারবাসে নোজ বা সামনের অংশ বা অগ্রভাগ দেখতে অনেকটা গোলাকার ও বোয়িংয়ের নোজ হয় পয়েন্টেড বা নির্দেশনামূলক।

এয়ারবাসের লেজ বা পেছনের অংশ দেখতে বডি থেকে কিছুটা ঢালু হয় বোয়িংয়ের। অপরদিকে এয়ারবাসের লেজ বডি থেকে শেষ পর্যন্ত স্ট্রেইট হয়ে থাকে।

দুটির ইঞ্জিনের নকশায় রয়েছে স্বাতন্ত্র্য। বোয়িং ৭৩৭-এর ইঞ্জিন হয় চিমনির ঢাকনায় থাকা টুপির মতো দেখতে আর এয়ারবাস এ৩২০ গোলাকৃতির এবং দেখতে সন্ন্যাসীর মাথায় পরিহিত পাগড়ির মতো।

এয়ারবাসের উইন্ডশিল্ড হয় খাঁজযুক্ত আর বোয়িংয়ে ভি-শেইপ হয়ে থাকে।

বিমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত অংশ হলো ককপিট। বোয়িং ও এয়ারবাস দুটোরই ককপিট ইয়োক বা 'জোয়াল' এর মতো দেখতে। পাইলটের জন্য বিশ্রাম ও ইমারজেন্সি পরিস্থিতিতে ট্রাবলশ্যুটের সমস্ত আয়োজন থাকে ককপিটে।

বোয়িং এবং এয়ারবাস বিতর্কে কোনোটিকে সুপিরিয়র বলা যাবে না। বিমান নির্মাতারা সবসময় এটিকে ত্রুটিহীন করে নির্মাণ করে থাকেন এবং বাণিজ্যিক বা নিয়মিত ফ্লাইটে এনগেজ করার আগে বারবার পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন করে সমস্ত ত্রুটি সেরে নেন।

বোয়িং মার্কিন কোম্পানি। প্রতিষ্ঠাকাল ১৯১৬। আর এয়ারবাস ফরাসি কোম্পানি। প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৭০। যাত্রীবাহী বিমান হিসেবে দুই কোম্পানিই মার্কেটে প্রভাবশালী। বোয়িং প্রতিষ্ঠার পর ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্বব্যাপী একক বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। আর এয়ারবাস প্রতিষ্ঠার পর মূলত ১৯৯০ সালের দিকে বিশ্বব্যাপী ব্যবসায় এগিয়ে যায়। 

বোয়িং বর্তমানে বাৎসরিক লস পূরণের জন্য স্ট্রাগল করছে। অপরদিকে এয়ারবাস আরামে ব্যবসা ও মুনাফা করছে।

বোয়িং বাংলাদেশ নিয়ে কি বলছে?

বোয়িং বাংলাদেশে বিমান ভ্রমণের ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং সক্ষমতাবিষয়ক তাদের কমার্শিয়াল মার্কেট আউটলুক (সিএমও) প্রকাশ করেছে। এটি বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক বিমানের চাহিদাবিষয়ক একটি বার্ষিক পূর্বাভাস।

সিএমও থেকে প্রক্ষেপণ করা হয় যে বাংলাদেশে বিমান ভ্রমণের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বোয়িংয়ের পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ২০৩২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের বার্ষিক জিডিপি ৫ শতাংশের বেশি হারে বৃদ্ধি পাবে, যা বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির গড়ের দ্বিগুণেরও বেশি। ফলে বিমান ভ্রমণের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার হবে প্রায় ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। 

সিএমও প্রতিবেদন বলছে গত বছর থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা শিথিল করায় বাংলাদেশে বিমানের যাত্রী পরিবহন সক্ষমতা বছরে ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য ও ভারতে আঞ্চলিক ট্রাফিক বিবেচনায় আগামী ১৯ বছরে বাংলাদেশে বিমান দ্বিগুণ হবে জানানো হচ্ছে। 

বোয়িংয়ের ডেভিড শাল্ট বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা দারুণ সুযোগ দেখতে পাচ্ছি, যেখানে বৃদ্ধির জন্য ভবিষ্যতে বিমান বহরের ৮০ শতাংশের বেশি প্রয়োজন হবে। আর বাকি ২০ শতাংশ ব্যবহৃত হবে পুরোনো অকার্যকর বিমান প্রতিস্থাপনের জন্য। 

সিএমওর পূর্বাভাস অনুযায়ী, যাত্রী ভ্রমণ এবং এয়ার কার্গোর জোরালো চাহিদা মেটাতে দক্ষিণ এশিয়ার বাহক বা ক্যারিয়ারদের আগামী ২০ বছরে ২৩০০টির বেশি নতুন বাণিজ্যিক বিমানের প্রয়োজন হবে। 

বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার ইন-সার্ভিস বিমানের সংখ্যা ৭০০টি।

Link copied!