তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে গেলেও স্যার ক্লাসে আসবেন, এমন বিশ্বাস ছিল শিক্ষার্থীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

মে ২, ২০২৩, ১১:১১ পিএম

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে গেলেও স্যার ক্লাসে আসবেন, এমন বিশ্বাস ছিল শিক্ষার্থীদের

বাংলা সাহিত্য ও শিল্পকলাবিষয়ক গবেষণায় অধ্যাপক ড. সৈয়দ আজিজুল হক পাড়ি দিয়েছেন তিন দশকেরও বেশি সময়। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যের ধরন নিয়ে গবেষণা করে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে অন্যতম শ্রেষ্ঠ মানিকগবেষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। এছাড়াও গবেষণা করেছেন বাঙালির স্বকীয় সাহিত্যধারার প্রাকৃত ও প্রকৃত সাহিত্যরূপ ময়মনসিংহ গীতিকা নিয়ে। বাংলাদেশের শিল্পকলাবিষয়ক গবেষণার ক্ষেত্রেও সৈয়দ আজিজুল হক নাম উঠে আসে শুরুতেই। 

বাংলা সাহিত্য ও শিল্পকলার ক্ষেত্রে সত্যিকার অর্থে ‘গবেষণা’ বলতে কী বোঝায় এবং কীভাবে তা সম্পন্ন করতে হয়, সেটি জানতে হলে দেখতে হবে সৈয়দ আজিজুল হকের গ্রন্থসমূহ। 

গবেষক ও শিক্ষক সৈয়দ আজিজুল হক ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দের ৩০ এপ্রিল বর্তমান পিরোজপুর জেলার সেহাঙ্গল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সৈয়দ নুরুল হক এবং মাতার নাম মোসাম্মৎ হাজেরা খাতুন। শৈশব ও কৈশোর কাটে নিজ গ্রাম সেহাঙ্গলে। সেহাঙ্গল হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক ও বরিশাল বিএম কলেজ থেকে উচ্চ-মাধ্যমিক সম্পন্ন করে তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি অর্জন করেন বিএ অনার্স (১৯৮০), এমএ (১৯৮১), এমফিল (১৯৮৯)। তারপর 'মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোটগল্প: সমাজ চেতনা ও জীবনের রূপায়ণ' শীর্ষক অভিসন্দর্ভ রচনা করে পি. এইচ. ডি. ডিগ্রি অর্জন করেন। 

১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে ‘প্রভাষক’ হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন সৈয়দ আজিজুল হক। সেখানে ‘সহকারী অধ্যাপক’ ও ‘সহযোগী অধ্যাপক’ হিসেবে কর্মরত থাকার পর ২০০০ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ‘অধ্যাপক’ হিসেবে যোগদান করেন তিনি। পরবর্তীতে বিভাগটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। ২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিল বিভাগীয় চেয়ারম্যান হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকজীবনের ইতি টানেন এই গবেষক ও শিক্ষক।

শিক্ষকজীবনের সমাপ্তির সংবাদটি তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের আইডিতে একটি পোস্টে তুলে ধরেন। তিনি লেখেন-

`তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে গেলেও...’

৩০ এপ্রিল ২০২৩। জীবনের একটা অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হলো আমার চাকুরিজীবন। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা কথা মনে পড়ছে। নিজেকে তিনি আখ্যায়িত করেছিলেন ‘কলম-পেষা মজুর’ হিসেবে। তাঁরই ভাবশিষ্য হিসেবে আমারও মনে হয়, গত ৩৬ বছর আমিও কাটিয়েছি ‘কণ্ঠ-পেষা মজুর-এর এক জীবন। এই মজুরের জীবন সম্বন্ধে কিছু বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। প্রথমেই শুরু করি একটা গল্প দিয়ে। কল্পিত কাহিনি নয়, বাস্তব গল্প। শিল্পী সমরজিৎ রায়চৌধুরী (১৯৩৭-২০২২) বলেছিলেন এই গল্প। তার আগে বলি, আমার শিক্ষকতা-জীবনের দুটি ভাগ। এক ভাগ চারুকলায়, তেরো বছরের কিছু বেশি; আরেক ভাগ বাংলা বিভাগে, তেইশ বছরের কিছু কম। 

তখন আমি চারুকলায়, ১৯৯১ সালের ঘটনা। সমরজিৎ স্যারের মেয়ে শর্ব্বরী রায়চৌধুরী তখন চারুকলায়, দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। শর্ব্বরী এখন ইউডায় (ইউনিভার্সিটি অফ ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ) অধ্যাপনা করে। সমরজিৎ স্যার ছিলেন কঠোরভাবে সময়ানুবর্তী ও নিয়মানুবর্তী। তিনি সকাল ঠিক নটায় চারুকলায় আসতেন। শর্ব্বরী তাঁর সঙ্গে আসত। স্যারের বাসা ছিল তখন বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকায়। আমারও ক্লাস থাকত নটায়।

সেদিন সকালে ছিল ঘোর বৃষ্টি; সঙ্গে তীব্র বাতাসও। শর্ব্বরী তাঁর বাবাকে প্রস্তুত হওয়ার তাগিদ দিচ্ছিল। কিন্তু এমন বৃষ্টিতে বের হওয়া প্রায় অসম্ভব ভেবে মেয়ের কথায় তিনি কর্ণপাত করছিলেন না। কিন্তু মেয়ের তাগাদা প্রবল হয়ে-উঠলে তিনি জিজ্ঞেস করেন, ‘এমন দুর্যোগের মধ্যে কেন যাওয়ার জন্য এত উতলা হয়ে উঠেছ?’ শর্ব্বরী জানায়, ‘আজিজ স্যারের ক্লাস আছে।’ সমরজিৎ স্যার বলেন, ‘এমন ঝড়বৃষ্টির মধ্যে তিনি কীভাবে আসবেন?’ শর্ব্বরী বলে, ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে গেলেও স্যার ক্লাসে আসবেন।’ এমন সময় যাত্রী নিয়ে একটি স্কুটার আসে তাঁদের ভবনের সামনে। যাত্রী নামার পর বাবার অনুমতি নিয়ে শর্ব্বরী খালি স্কুটার থামায়। তারপর ঈসাখাঁ রোড থেকে স্কুটারে করে সামান্য রিকশার পথ পার হয়ে বাবা-মেয়ে চারুকলায় আসেন। ক্লাস শেষে ফেরার সময় বাবা মেয়েকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তোর স্যার এসেছিল?’ মেয়ের ইতিবাচক জবাব পেয়ে সমরজিৎ রায়চৌধুরী বিস্মিত হন।

এই বিস্ময় নিয়েই, এর কয়েকদিন পর চারুকলার শিক্ষক লাউঞ্জে আমাকে আমার ছাত্রীর ক্লাসে আসার ব্যাকুলতার এই গল্পটি তিনি শোনান। আমি তখন থাকতাম মিরপুরে। শিক্ষকদের জন্য নির্ধারিত মাইক্রোবাসে সকাল সাড়ে সাতটায় রয়োনা হয়ে আটটা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে যেতাম। সেদিন আমি পৌঁছার পরেই বৃষ্টি-ঝড় শুরু হয়েছিল। সুতরাং সময়মতো ক্লাসে উপস্থিত হতে আমার কোনো অসুবিধা হয়নি।

১৯৮৭ সালের ১১ জুন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় যোগ দেই। যোগদানের সময়েই শিক্ষকতার আদর্শ হিসেবে কতকগুলো করণীয় স্থির করে নিয়েছিলাম। সেগুলো ছিল মনের গভীরে প্রোথিত, সুদৃঢ় প্রতিজ্ঞার মতো; কখনো উচ্চারণ করিনি, আচার-আচরণের মধ্যেই ছিল তার একান্ত প্রকাশ। এই প্রতিজ্ঞাগুলো গত ছত্রিশ বছর আমি অক্ষরে অক্ষরে পালনের চেষ্টা করেছি, অনেকটা ধর্মাচারের মতো। আজ মনে হলো, শিক্ষকতাজীবনের আনুষ্ঠানিক অবসানে সেগুলো প্রকাশ করা হয়ত অন্যায় কিছু হবে না।

এই প্রতিজ্ঞারই প্রথমটি ছিল সময়ানুবর্তিতা ও নিয়মানুবর্তিতা। এক মিনিটও দেরি না-করে ক্লাসে উপস্থিত হওয়া এবং নির্ধারিত সময়ের আগে ক্লাস থেকে বের না-হওয়া। আর ক্লাসে কোনো ব্যক্তিগত আলাপে সময় নষ্ট না-করে পাঠ্যবিষয়ের আলোচনায়ই পুরোপুরি নিবিষ্ট থাকা। আমার শিক্ষক অধ্যাপক আহমদ শরীফ (১৯২১-২০০০), অধ্যাপক আবু হেনা মোস্তফা কামাল (১৯৩৬-১৯৮৯) আর অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেনের (জ. ১৯৪৪) মন্ত্রমুগ্ধ-করা ক্লাস আমরা পেয়েছি। আর কিংবদন্তিতুল্য মুনীর চৌধুরীর (১৯২৫-১৯৭১) ক্লাস-বক্তৃতার কথা তো অনেকের মুখে শুনেছি। আমার মনোভাব ছিল এরকম: সকলের সমান প্রতিভা থাকে না। অনেক কিছু মানুষ জন্মসূত্রে পায়। কিন্তু সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, দায়িত্বশীলতা, কর্তব্যপরায়ণতা- এগুলোর অনুশীলন তো মানুষের সাধ্যের মধ্যে। ফলে ক্লাস-বক্তৃতার ক্ষেত্রে আমি শিক্ষার্থীদের আমার সাধ্য অনুযায়ী দেওয়ার ব্যাপারে এতটুকু কার্পণ্য করিনি। শিক্ষকতার জীবনজুড়ে পূর্ব-রাতে ক্লাসের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার কথা আর নাই-বা বললাম।

আমার দ্বিতীয় প্রতিজ্ঞা ছিল, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা। এই ছত্রিশ বছরে আমি যাদের পড়িয়েছি তাদের উত্তরপত্র মূল্যায়নে একদিনও দেরি করিনি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নম্বর জমা দিয়েছি। কেন এমন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আর কেন তা আক্ষরিকভাবে পালন করেছি, তার কারণ নিশ্চয়ই আছে। পরীক্ষা দেওয়ার পর ফল জানার জন্য শিক্ষার্থীরা কেমন আকুল হয়ে থাকে তা ছাত্রজীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই জানি। ফল প্রকাশের সঙ্গে কর্মজীবনে প্রবেশের প্রশ্নটি অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। আমার নিজের এমফিল পরীক্ষার ফল বের হতে ৭-৮ মাস লেগেছিল; পরীক্ষার্থী ছিলাম ১২-১৩ জন। গত শতকের আশির দশকের মধ্য পর্যায়ের ঘটনা। তখনই মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, কখনো শিক্ষক হতে পারলে শিক্ষার্থীদের এ-ধরনের ভোগান্তির হাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করব। সেটা আমি রক্ষা করতে পেরেছি। এর সঙ্গেই জড়িত যথাসময়ে ফল বের করার বিষয়টি। আমি পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান হলে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি, যতটা সম্ভব অল্প সময়ের মধ্যে ফল প্রকাশের। শুধু একবার একজন পরীক্ষকের অসহযোগিতার কারণে পারিনি। তবে অন্য সময়ে সফল হয়েছি। একবার তো দেড়মাসের মধ্যে ফল প্রকাশ করেছি, যেটা ছিল সময়ের স্বল্পতার দিক থেকে রেকর্ড, যা সাংবাদিকদের সূত্রে জেনেছি।

যথাসময়ে উত্তরপত্র মূল্যায়ন, ফল প্রকাশ, এর সঙ্গেই জড়িত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: যথাযথভাবে বা পক্ষপাতমুক্ত হয়ে উত্তরপত্র মূল্যায়ন। এই প্রতিজ্ঞাটিও আমি পালন করতে পেরেছি। এটি একটি কঠিন কাজ। এক্ষেত্রে আমার বিবেচনা ছিল এরকম: পরীক্ষার ফল একজন শিক্ষার্থীর পরবর্তী জীবনের পরিণাম নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেক্ষেত্রে পরীক্ষককে হতে হয় বিচারকের মতো ন্যায়পরায়ণ। কোনো অনুরাগ-বিরাগের বশবর্তী হয়ে নয়, ন্যায়দণ্ড হাতে নিয়েই উত্তরপত্রে প্রদত্ত লেখার মানের ওপর ভিত্তি করেই মূল্যায়ন করা উচিত। কম বা বেশি নম্বর দেওয়ার কোনোটিই প্রত্যাশিত নয়। আমি ছাত্রজীবনে ছাত্র-রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলাম। শিক্ষকতার আদর্শ বজায় রাখার স্বার্থে আমি শিক্ষকজীবনে রাজনীতিতে সক্রিয় হইনি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকের সম্পর্ককে বিশুদ্ধতা এবং দায়িত্ব ও কর্তব্যপরায়ণতার পরিমাপে বিবেচনার প্রয়াস পেয়েছি। সে-কারণে শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক, আঞ্চলিক, শ্রেণি-সম্প্রদায় কিংবা জাতিগত পরিচয় জানতে আমি কোনো চেষ্টা কখনো করিনি।

এ-ব্যাপারে এক শিক্ষার্থীর স্বল্পাকারের একটি মূল্যায়ন এখানে উপস্থাপন করতে পারি। শিক্ষার্থী মৌমিতা রায় এখন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ডিসিপ্লিনে অধ্যাপনারত। বছর-পাঁচেক আগে প্রদত্ত তার একটি ফেসবুক-পোস্টের ভাষ্য: ‘তাঁকে নিন্দুকেরাও বদনাম দিতে পারে না। পরীক্ষার খাতায় কম নম্বর পেয়েও মনে হয় না “কেন কম দিলেন” মন জানে, “নিশ্চয়ই কোথাও ভুল করেছি!” ক্লাস শুরুর মিনিট বিশেক আগেই শান্ত-ধীর পদক্ষেপে হেঁটে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর নির্ধারিত কক্ষে উপস্থিত, মিনিট-খানেক বাকি থাকতে শ্রেণিকক্ষের সামনে দাঁড়াতেন এই সৌম্য-মূর্তি!..’

চতুর্থ প্রতিজ্ঞাটি ছিল, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পাশাপাশি গবেষক-লেখক হিসেবেও নিজেকে তৈরি করা। একথা আমরা জানি যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দায়িত্ব শুধু জ্ঞানদানেই সীমাবদ্ধ নয়, জ্ঞানসৃষ্টিতেও তা বিস্তৃত। অতএব এই দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনেও আমি বিরামহীনভাবে সচেষ্ট থেকেছি। আমার মনে হয়, লেখক-গবেষক হিসেবে কর্তব্য পালনের বিষয়টি শুধু শিক্ষার্থী বা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এর পরিধি দেশময় বা দেশের বাইরেও বিস্তৃত। আর সময়ের হিসাব করলে শিক্ষকতার কাল-পরিসরেও নয় তা সীমিত। এ এক বিরামহীন প্রক্রিয়া; আমৃত্যু প্রলম্বিত।

অতএব প্রতিজ্ঞা পূরণের তৃপ্তি ও আনন্দ নিয়েই আরেক নতুন জীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছি।

[facebook-post]https://www.facebook.com/100012767972422/posts/pfbid02LSxP52QeJgBYpQTAcqVGtUt73rodh9MySWiT778uhEdokqJynqM1adgX5aqQRpKLl/?mibextid=cr9u03[/facebook-post]

Link copied!