এত শীতেও কেন বাংলাদেশে তুষার পড়ে না?

ফাহিম রেজা শোভন

জানুয়ারি ২৩, ২০২৪, ১০:৪৮ এএম

এত শীতেও কেন বাংলাদেশে তুষার পড়ে না?

সংগৃহীত ছবি

ঊন বর্ষায় দুনো শীত– একটি প্রাচীন বচন।

এর অর্থ, যে বছর বৃষ্টি কম হয়, সে বছরে শীত পড়ে বেশি।

জ্যোতিষশাস্ত্রে নিপুণা ও বচন রচয়িতা বিদুষী নারী খনার বচন এটি।

খনা সেই সহস্র সালের আশে পাশে আবির্ভূত হয়ে তার কৃষি দর্শনের মাধ্যমে ভারতীয় উপমাহাদেশের ল্যান্ডস্কেপ পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন। খনার বচন আজও প্রযোজ্য।

বাংলাদেশে বর্ষাকালে অর্থাৎ আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে গড়ে প্রায় ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।

৫ বছর আগে ১৪২৫ বঙ্গাব্দে বাংলাদেশে ইতিহাসের সবচেয়ে কম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় হিমালয় সংলগ্ন তেঁতুলিয়ায় ২.৬ ডিগ্রি (জানুয়ারি ২০১৮) । একই সনে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ২২৯ মিলিমিটার। স্বাভাবিকের চেয়ে অর্ধেকেরও কম।

১৪২৯ মৌসুমে বা ২০২২ সালে মাত্র ২১১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল।

বর্ষাকালে এত কম বৃষ্টির মধ্যেও সেই বছর শেষে দেখা গেছে শীতকাল যখন আসে তখন তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেছে।

১৪৩০ বঙ্গাব্দ চলছে। এই মৌসুমের বর্ষাকালে দেশের কিছু এলাকায় রেকর্ড বৃষ্টি হলেও সারাদেশের সর্বমোট গড় বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ২০-৩০ বছরেরর মধ্যে সবচেয়ে কম।

আবার খনার বচনের মত শীতে এমন কাঁপুনি দিচ্ছে যে ঢাকাতেও রুম হিটার কেনার হিড়িক পড়ে গেছে। যেন তুষারপাতের মত ঠাণ্ডা।

বর্ষাকালে শিলাবৃষ্টি তো দেখেছেন অনেকেই। অনেকের মনেই কৌতূহল, তুষারপাত হবে কিনা বাংলাদেশে। আসলে তুষারপাত কিভাবে হয়?

সহজ ভাষায়, বৃষ্টি যে প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে হয়, তুষারপাতও একইভাবেই হয়।

সূর্যের তাপে জলাশয় পানি জলীয় বাষ্প আকারে বায়ুমণ্ডলের ওপরে উঠে যায়। এই জলীয়বাষ্প থেকে যেমন সৃষ্টি হয় মেঘ ঠিক তেমনি তুষারকণাও।

বাষ্প যত ওপরে উঠতে থাকে, তাপমাত্রা কমতে থাকে।

জলীয়বাষ্প তখন বাতাসের সঙ্গে থাকা ধূলিকণা ও ধূম্রকণাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে ঘনীভূত হয়ে তাপমাত্রা কমতে কমতে একপর্যায়ে তুষারে পরিণত হয়।

একসময় বাতাস তাদের আর ধরে রাখতে পারে না কারণ ওপরের দিকে উঠতে উঠতে বাতাসে এদের ধারণ ক্ষমতা কমতে থাকে।

তখন তুষার কণাগুলো পতিত হয় পাহাড় কিংবা মাটিতে।

মোটাদাগে বলা যায়, শীতকালে তাপমাত্রা শুন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে মেঘ থেকে তুষার পতিত হয়, একে বলা হয় তুষারপাত। মেঘ থেকে নিসৃত পানি বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে নিম্ন তাপমাত্রায় জমে বরফে পরিণত হয়, সেটাই ভূমিতে ঝরে তুষাররূপে।

তুষার কণাগুলো যখন অপেক্ষাকৃত উষ্ণ অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হয় তখন সেগুলো গলে বৃষ্টির রূপ নেয় এবং মাটিতে ঝরে পড়ে। তবে পর্বতের উপরের তাপমাত্রা কম থাকায় সেগুলো জমে বরফ হয়ে থাকে।

তুষারপাত হতে ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের-এর নিচে তাপমাত্রা হতে হয়; যা বাংলাদেশে হয়না। রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে আসা বরফ শীতল বাতাস এসে হিমালয় পর্বতমালায় আটকে যায়। ফলে যতটুকু বাতাস আসে তাতে হাড় কাঁপুনে শীত পড়লেও তাপমাত্রা শূন্যের নিচে নামে না, তাই তুষারপাতও হয় না। আরেকটা কারণ ক্রান্তীয় আবহাওয়া যার কারণে শীতে বাংলাদেশের বাতাস অনেক শুষ্ক থাকে।

Link copied!