জুলাই ২৮, ২০২৪, ১১:০০ পিএম
অধিকৃত গোলান মালভূমির একটি ফুটবল মাঠে রকেট হামলাকে কেন্দ্র করে ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যেকার কূটনৈতিক সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
শনিবার (২৭ জুলাই) করা এই হামলায় ১২ জন শিশু-কিশোর প্রাণ হারায়। তেল আবিব এই হামলার দায় লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর ওপর চাপালেও গোষ্ঠীটি। এই অভিযোগে হিজবুল্লাহর বেশ কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুতে হামলাও করেছে তেল আবিব। যদিও এই হামলার সঙ্গে কোন ধরনের সম্পৃক্ততা নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে হিজবুল্লাহ। তারপরেও এই উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে প্রায় ১৯ বছর পর আবারও সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা বাড়ছে।
গোলান মালভূমিতে হামলা ইস্যুতে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, “অধিকৃত এলাকায় রকেট হামলার ঘটনায় হিজবুল্লাহর জড়িতের প্রমাণ রয়েছে। নাগরিকদের রক্ষায় ইসরায়েলের অধিকারের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র পাশে থাকবে। গাজায় যুদ্ধবিরতি ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে স্থায়ী শান্তি ফেরানোর একটি সুযোগও।”
ওয়াশিংটনে সফররত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে তিনি কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে সংঘাতে না জড়িয়ে উভয়পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ বু হাবিব বিবিসিকে বলেন, “আমি বিশ্বাস করি না, জঘন্য হামলা এই হিজবুল্লাহ চালিয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে ‘ভয়াবহ বিপর্যয়’। একে কেন্দ্র করে আরও হত্যাকাণ্ডের বৈধতা দেওয়া হবে না।
সর্বাত্মক যুদ্ধের ইঙ্গিত দিয়ে ইসরায়েলের শিক্ষামন্ত্রী ইয়োভ কিশ বলেন, “সর্বশক্তি দিয়ে ঘৃণ্য রকেট হামলার জবাব দেবে ইসরায়েলি বাহিনী। এমনকি যদি এর অর্থ লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু বোঝায়, তাহলেও পিছপা হবে না তেল আবিব।”
ইসরায়েল থেকে অনেক দূরবর্তী স্থানেও হামলা করতে সক্ষম জানিয়ে দেশটির সেনাপ্রধান হার্জি হালেভি বলেন, “গোলান মালভূমিতে রকেট হামলার পর হিজবুল্লাহর সঙ্গে লড়াইয়ের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে সশস্ত্র বাহিনী। ইসরায়েল থেকে অনেক দূরবর্তী স্থানেও আমরা হামলা করতে সক্ষম। সেখানে অনেক চালেঞ্জ আছে। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
ইসরায়েল ও লেবানন- দু’পক্ষ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে কয়েকগুণ বেশি ক্ষয়ক্ষতি হবে উল্লেখ করে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বিশ্লেষণে বলা হয়, গত দুই দশকে হিজবুল্লাহর অস্ত্রাগার অনেক সমৃদ্ধ হয়েছে। তাদের রকেট অনেক বেশি আধুনিক ও ক্ষেপণাস্ত্র নিখুঁতভাবে লক্ষ্যভেদী হয়েছে। গোষ্ঠীটির ক্ষেপণাস্ত্রসহ সব ধরনের রকেট তেল আবিবসহ ইসরায়েলের সব জায়গায় এখন আঘাত হানতে সক্ষম। তাই ধারণা করা হচ্ছে এবার দুই পক্ষ সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে কয়েকগুণ বেশি ক্ষয়ক্ষতি হবে।
এর আগে একাধিকবার সরাসরি যুদ্ধে জড়ানোর ইতিহাস রয়েছে ইসরায়েল ও লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। ১৯৮২ সালে ইসরায়েলি বাহিনী সশস্ত্র গোষ্ঠীটি নির্মূলে ভয়াবহ হামলা চালায় ও রাজধানী বৈরুতের একেবারেই কাছে পৌঁছে যায়।
২০০৬ সালে হিজবুল্লাহর সঙ্গে সবশেষ বড় আকারের সংঘাতে লিপ্ত হয় ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনীর ভয়াবহ হামলায় ১০ লাখ বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়। বৈরুত বিমানবন্দর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সেতু, মহাসড়কসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এই সংঘাতে হিজবুল্লাহর রকেট হামলায় ইসরায়েলে ২ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ধ্বংস হয় ও ৩ লাখের বেশি বাসিন্দা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান।