তিন ধাপে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি, স্থায়ী যুদ্ধ কী শেষ হবে?

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জানুয়ারি ১৬, ২০২৫, ১২:৩৬ পিএম

তিন ধাপে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি, স্থায়ী যুদ্ধ কী শেষ হবে?

ছবি: সংগৃহীত

গাজায় ১৫ মাস ধরে চলা সহিংসতার পর যুদ্ধবিরতি চুক্তি রবিবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে ছয় সপ্তাহের প্রাথমিক যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয় ইসরায়েল ও হামাস।

যুদ্ধবিরতি আলোচনার মধ্যস্থতাকারী কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানি বলেছেন, ইসরায়েলের পার্লামেন্টে অনুমোদন পাওয়ার পর এই চুক্তি কার্যকর হবে। খবর বিবিসি বাংলা।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এই চুক্তির ফলে গাজায় লড়াই বন্ধ হবে, ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক ত্রাণ সহায়তা বাড়বে এবং জিম্মিরা তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যাবে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, চুক্তির অনেক বিষয় চূড়ান্ত করার আগে আরো কাজ বাকি আছে। এই চুক্তিতে জোর দেওয়ার জন্য তিনি জো বাইডেন ও যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান।

হামাস নেতা খলিল আল হাইয়া বলেছেন, ফিলিস্তিনি জনগণের ‘প্রতিরোধের’ ফসল এই চুক্তি।

তিন ধাপের এই চুক্তি গাজায় যুদ্ধবিরতি, সেখান থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার এবং হামাসের হাতে বন্দি জিম্মিদের মুক্তি অন্তর্ভুক্ত।

যদিও এখনও গাজায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। বুধবার যুদ্ধবিরতি চুক্তির ঘোষণা আসার পর ইসরায়েলি বিমান হামলায় ২০ জনেরও বেশি নিহত হওয়ার তথ্য জানিয়েছে হামাসের সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি। 

চুক্তি কার্যকর হবে তিন ধাপে

কাতারের প্রধানমন্ত্রী ইসরায়েল ও হামাস উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, হামাসের হাতে আটক ৩৩ জিম্মির মুক্তির পরিবর্তে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের অনেককে ছেড়ে দেওয়া হবে।

গাজার ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকাগুলো থেকে ইসরায়েলি বাহিনী আরো পূর্ব দিকে সরে যাবে। এল ফলে বাস্তুচ্যূত ফিলিস্তিনিরা তাদের বাড়িতে ফিরতে পারবেন।

এছাড়াও ত্রাণবাহিনী শত শত ট্রাক প্রতিদিন গাজায় প্রবেশের সুযোগ পাবে।

চুক্তির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনায় স্থান পাবে বাকি জিম্মিদের মুক্তি এবং ‘টেকসই শান্তির’ জন্য ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি।

তৃতীয় ও চূড়ান্ত ধাপে আসবে গাজার পুনর্গঠন। এর জন্য অনকে বছর লেগে যেতে পারে। তবে হামাসের হাতে আর কেউ জিম্মি থাকলে তাদের মুক্তির বিষয়টিও আলোচনায় আসবে এই ধাপে।

শেখ মোহাম্মদ আল থানি বলেন, চুক্তির বিষয়গুলো চূড়ান্ত করার পর কয়েকদিনের মধ্যেই এটি সবিস্তারে জানানো হবে।

তিনি আরো জানান, কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও মিসর এই চুক্তি করার বিষয়ে সহায়তা করেছে এবং তারা ইসরায়েল ও হামাস যেন চুক্তির সব শর্ত মেনে চলে সেজন্যও তারা সচেষ্ট থাকবে।  

স্থায়ীভাবে যুদ্ধ শেষ হবে?

বিবিসি নিউজের সাথে কথা বলেছেন হোয়াইট হাউজের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কমিউনিকেশন্স অ্যাডভাইজর জন কিরবি। 

তিনি বলেছেন, যখন জিম্মিদের মুক্তি দেয়া হবে এবং সাহায্য বিতরণ করা হবে, তখন ইসরায়েল ও হামাস তিন ধাপের যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা করবে।

কিরবি জানিয়েছেন, চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ হলো, যে শর্তগুলোর বিষয়ে এখনও একমত হওয়া যায়নি। এর অংশ গবে- সম্ভবত গাজা থেকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রত্যাহার এবং স্থায়ীভাবে যুদ্ধ শেষ করা।

“দ্বিতীয় ধাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। কারণ আপনি যদি সে পর্যন্ত যেতে পারেন, তবে এই যুদ্ধ স্থায়ীভাবে শেষ হওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হবে,” বলেন মি. কিরবি।

এটা করা সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি আমরা পারি। এটা একটা ভালো চুক্তি।”

তিনি আরও বলেন, “এর জন্য প্রয়োজন নেতৃত্ব এবং এর বাস্তবায়ন।”  

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালানোর পর এই সহিংসতার শুরু। হামাস যোদ্ধারা প্রায় ১২০০ ইসরায়েলিকে হত্যা এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়।

এরপর ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক হামলা শুরু করে। তাদের হামলায় এ পর্যন্ত ৪৬ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তির মৃত্যু হয়েছে বলে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

তাদের ২৩ লাখ জনগোষ্ঠির বেশিরভাগই এই যুদ্ধে আশ্রয় হারিয়েছে। গাজায় খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ ও নিরাপদ আশ্রয়ের গভীর সংকট তৈরি হয়েছে।

এদিকে ইসরায়েলের দাবি, হামাসের হাতে এখনও তাদের ৯৪ জন নাগরিক জিম্মি আছেন। এদের মধ্যে ৬০ জন এখনো জীবিত এবং ৩৪ জন মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

Link copied!