আগস্ট ১৪, ২০২৫, ০৪:২৬ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে ঢাকায় আসছেন পাকিস্তানের দুই মন্ত্রী। পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান ২১ আগস্ট চার দিনের সফরে ঢাকায় আসবেন। আর দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসবেন ২৩ আগস্ট। ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ইসহাক দারের দুই দিনের ঢাকা সফর যে ২৩ আগস্ট শুরু হবে, তা অবশ্য আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল। গতকাল বুধবার পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে জানানো হয়, দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান ২১ থেকে ২৪ আগস্ট ঢাকা সফর করবেন। খবর প্রথম আলো।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দুই দেশের নানা পর্যায়ের আলোচনা সক্রিয় করতে উদ্যোগী হয় পাকিস্তান।
দুই দেশের দেড় দশকের শীতল সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে গত এপ্রিলে ঢাকায় এসেছিলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ। এরই ধারাবাহিকতায় ইসহাক দার ঢাকা সফরে আসছেন। তিনি তার সফরে সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের পাশাপাশি রাজনৈতিক স্তরে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারেন।
জাম কামাল খান ও ইসহাক দারের পর পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব ঢাকায় আসতে পারেন বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
আগামী সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে দুই দেশের যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) বৈঠকে অংশ নিতে মুহাম্মদ আওরঙ্গজেবের ঢাকায় আসার কথা। এই বৈঠকে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। দুই দেশের মধ্যে সর্বশেষ জেইসি বৈঠক ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
দুই মন্ত্রীর সফরে যা হতে পারে
পাকিস্তানের দুই মন্ত্রীর সফর, বিশেষ করে ইসহাক দারের ঢাকা আসার রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকের পর সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বার্তা থাকবে ইসহাক দারের সফরে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের আনুষ্ঠানিক বৈঠক ২৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশের সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন কূটনীতিকের সঙ্গে কথা বলে এবং সরকারি নথি পর্যালোচনা করে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় সফর বা বৈঠকের কোনো দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়নি।
দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আসন্ন বৈঠকে সম্পর্ক ও সহযোগিতার নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। বৈঠকের আলোচ্যসূচি নিয়ে এখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তৌহিদ হোসেন-ইসহাক দার আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর একাধিক সমঝোতা স্মারক সইয়ের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে। সইয়ের তালিকায় থাকা সমঝোতাগুলো হলো—দুই দেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়।
গত মাসে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন রাজা নাকভি ঢাকায় এসেছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ সফরের পর দুই দেশের কূটনৈতিক ও সরকারি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসাবিলোপ চুক্তি সইয়ের বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে। দুই দেশ চুক্তির খসড়া বিনিময় করেছে। আগামী সপ্তাহে রাজনৈতিক স্তরে অনুমোদন পেলে ইসহাক দারের সফরের সময়ই এই চুক্তি সইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্যদিকে পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খানের সফরে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য কীভাবে চাঙা করা যায়, সে বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যবিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনে সমঝোতা স্মারক সইয়ের জন্য চূড়ান্ত হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক এগোলে জাম কামাল খানের ঢাকা সফরের সময় এই সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। বাণিজ্যবিষয়ক এই ওয়ার্কিং গ্রুপের নেতৃত্ব দেবেন দুই দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবেরা।
জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা আউট অব দ্য ওয়ে (নিয়মের বাইরে গিয়ে) কিছু করছি না। অন্য অনেক দেশের মতোই আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে একটা স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছি। যেখানে ব্যবসা, বিনিয়োগের পাশাপাশি মানুষের চলাচল সুগম করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। পাকিস্তানের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে বৈরী সম্পর্কের প্রয়োজন নেই। অতীতে অকারণে পাকিস্তানের সঙ্গে বৈরী সম্পর্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। আমরা সেখান থেকে বের হয়ে এসেছি। পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক করার সময় অমীমাংসিত তিন বিষয় আলোচনার টেবিলে থাকছে।’