বিএনপি, আওয়ামী লীগের সমঝোতা নিয়ে জানতে চাইল মার্কিন প্রতিনিধি দল

নিজস্ব প্রতিবেদক

অক্টোবর ১০, ২০২৩, ০৫:০৮ এএম

বিএনপি, আওয়ামী লীগের সমঝোতা নিয়ে জানতে চাইল মার্কিন প্রতিনিধি দল

বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত তিনটা রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠক করে মার্কিন প্রতিনিধি। ছবি : দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ।

আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যে সমঝোতার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না আর না থাকলে নির্বাচন কতটা যৌক্তিক হবে এবং পরিস্থিতি কেমন হবে- সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দল। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সাথে বৈঠক শেষে অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও পর্যবেক্ষকদের কাছে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চায় তারা। এছাড়া স্যাংশন নিয়ে বাংলাদেশের জনমত ও ভিসানীতির প্রভাব নিয়েও আলোচনা করেছে তারা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ব পরিস্থিতি যাচাই করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রাক নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দল দেশে আসে। সোমবার সকালে তারা বিএনপি ও দুপুরে আওয়ামী লীগের সাথে বৈঠক করে। এরপর ৩টার সময় জাতীয় পার্টির সাথে বৈঠক করে দলটি। সে সময় তারা নির্বাচনি পরিস্থিতি নিয়ে আলাপ করে।

তবে এরপর বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ, এবি পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণসংহতি আন্দোলন ও নাগরিক ঐক্যের সাথে বৈঠকে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো সমঝোতা হবার সম্ভাবনা আছে কি না সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চায়।

যে চারটি বিষয় জানতে চেয়েছে প্রতিনিধি দল

বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বৈঠকে মার্কিন প্রতিনিধি দল মূলত চারটি বিষয় নিয়ে আলাপ করে। 

এর মধ্যে প্রথমত তারা জানতে চায় যে, বাংলাদেশে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যে সমঝোতার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না ?

এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো জানায় যে এখন পর্যন্ত সমঝোতা হওয়ার কোনো সংকেত দেখা যাচ্ছে না। সাগরে বিপদে পড়লে এক ধরনের সিগন্যাল দিতে হয় কিন্তু দুই দলের কেউই নিজেদের বিবাদ ভুলতে নারাজ, যেহেতু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে সেহেতু আওয়ামী লীগের দিক থেকে সমঝোতার বার্তা আসুক বলে ভাবছেন নেতারা। যেহেতু আসে নাই, সেহেতু এই ধরনের কোনো সম্ভাবনা একেবারেই নেই বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, তারা জানতে চেয়েছে যে নির্বাচন কাঠামো যে অবস্থায় আছে তা নিয়ে আগামী তিন মাসে যদি পরিবর্তন হয় তাহলে কি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব?

এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো জানায় যে, সারাদেশে নির্বাচন করতে ৪৩ হাজার ভোটকেন্দ্র হয়, এইখানে নির্বাচন প্যানেল থেকে শুরু করে পনেরো লক্ষ লোকবল এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে নির্বাচন কাজকর্ম শুরু হয়, যেটা নির্বাচন কমিশনের নেই। তবে এই নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্য সরকার থেকে উদ্যোগ নিতে হয় । নির্বাচন কমিশন একার সাধ্য নেই। ফলে বর্তমান সরকারের প্রভাব থেকে যায় আইন শৃঙ্খলাবাহিনী থেকে শুরু করে জনপ্রশাসনে। ফলে এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন সম্পূর্ণ সুষ্ঠু হবার আশা কম।

তৃতীয়ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে কিনা সেটাও জানতে চেয়েছে।

সে বিষয়ে দলগুলো মত দেয় যে, দেশের বড় দুই দল যদি নির্বাচনে অংশ না নেয় সেখানে পর্যবেক্ষক পাঠিয়ে তো কিছু হবে না আদতেও। তবে অভিজ্ঞতা নিতে চাইলে তারা আসতে পারে বলেও মত দেয় তারা।

সর্বশেষ, দেশে র‌্যাবের স্যাংশন ও ভিসানীতি নিয়ে জনমত কেমন সেটাও জানতে চায় তারা।

এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো মত দেয় যে র‌্যাবের স্যাংশনের পর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। গত দশ বছরে এ ধরনের রাজনৈতিক মিটিং মিছিল করতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। এখন তা অনেকটাই স্বাভাবিক আছে।

তবে ব্যবসায়ীদের ওপর স্যাংশন দিলে সেটা সাধারণ মানুষের ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ পড়বে। সুষ্ঠু নির্বাচন করে যদি দেশের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে যায় তবে সে স্যাংশন কার্যকর হবে না। মার্কিন সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না আজ বা কালকেই কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া। তবে আগামী শুক্রবার নাগাদ যেহেতু আছেন তারা, সবার মতামত নিয়েই একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাবেন।

বিকেল থেকে রাতের মতসভায় নাগরিক ঐক্যর আহ্ববায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে ড. বেলাল নূর আজিজী মন্তব্য করেছেন।

তারা আরও জানান, ২০১৪-১৮ সালের নির্বাচন বিষয়ে মার্কিন সরকার যথেষ্ট অবগত। বিগত বছরের নির্বাচনে বড় দলগুলো অংশগ্রহণ করেনি। দিনের ভোট রাতেই হয়েছে এবং নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি- এ বিষয়ে যথেষ্ট অবগত হয়েই এ মতসভার আয়োজন করা হয়েছে। মার্কিন সরকার উন্নয়ন অংশীদারী হিসেবেই ভেবেছে তৃতীয় নির্বাচন এক পাক্ষিক হতে পারে না,যদি এমন হয় তবে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমা বিশ্বের যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আছে তা নষ্ট হবে এবং বড় একটা প্রভাব পড়বে।

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) যৌথভাবে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রাক-নির্বাচন সমীক্ষা মিশন পরিচালনা করবেন তারা। ৭ সদস্যের প্রতিনিধিদল এবং তাদের সহায়তাকারীরা ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করবেন।

Link copied!