অনেক সময় আমরা একটা কথা আওড়ে থাকি, ‘শাশুড়ি খুশি তো সংসার সুখী’। বউ-শাশুড়ির সম্পর্ক নিয়ে এমন বিভিন্ন রকমের নেতিবাচক গল্প থাকলেও সবার জন্য সেটা সত্য নয়। অনেক মেয়েই চান বিয়ের পরে শাশুড়ির সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে। এতে জীবনে অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতার থেকে বাঁচা যায়। তবে একদিক থেকে চাইলে কখনওই কোনো সম্পর্ক ভালো রাখা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন শাশুড়ির কিছুটা সহযোগিতা। আর দুই দিক থেকে যখন শাশুড়ি ও পুত্রবধূ সমানভাবে সম্পর্ক সুন্দর রাখার চেষ্টা করেন তখনই সংসার জীবন সুন্দর হয়ে ওঠে।
কাজেই শাশুড়ি কিসে খুশি থাকবেন, সেটা যদি পুত্রবধূরা জেনে নেন, তবে সংসার সুখের করে তোলা তাদের জন্য সহজ হবে। চলুন জেনে আসা যাক, শাশুড়িকে খুশি রাখার সহজ কৌশল-
তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে ছেলের বিয়ের পর বেশির ভাগ মা ‘ছেলে পর হয়ে যাবে’- এমন অমূলক আশঙ্কায় ভুগতে থাকেন। মনে করতে থাকেন, এবার আর হয়তো ছেলে তার কথা শুনবে না। অথচ মায়ের জায়গা কখনোই বদলায় না। ছেলের বিষয়ে এই অমূলক আশঙ্কা থেকেই পুত্রবধূর সঙ্গে শাশুড়ির দেখা দেয় দূরত্ব। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে বিয়ের প্রথম দিন থেকেই শাশুড়িকে ‘মা’ বলে ডাকা যেতে পারে। এতে পুত্রবধূকেও নিজের মেয়ের মতো করে ভাববেন শাশুড়ি।
বিয়ের পর বেশির ভাগ সময় পুত্রবধূরা একটি ভুল করে থাকেন। আর সেই ভুল হলো শ্বশুর, স্বামী কিংবা শ্বশুর বাড়ির অন্য কারও সঙ্গে শাশুড়িকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করা। শাশুড়িকে খাটো করা কিংবা তাকে নিয়ে বিদ্রুপ করা হলে তা সংসারের চিরস্থায়ী শান্তি বিনষ্ট করে। যদি একান্তই এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে যান, তবে শ্বশুর বাড়িকে সমর্থন করতে থাকাটাই বুদ্ধিমতীর কাজ।
সব ছেলেই মনে করে, তার মায়ের মতো আর কেউ নেই। তাই স্বামীর সামনে নিজের শাশুড়ির প্রশংসা করতে ভুলবেন না। এতে শাশুড়ি যেমন খুশি হবেন, তেমনই স্বামীকেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সমর্থ হবেন। মাঝেমধ্যে শাশুড়ির পছন্দের খাবার রান্না করতে পারেন। স্বামীর পছন্দের খাবার নিয়ে শাশুড়ির সঙ্গে খোলামেলা আলাপ করলেও মন্দ হবে না। এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো শাশুড়ি ও স্বামীকে সব ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যখন একটি মেয়ে শ্বশুর বাড়িতে যায়, তখন তার উচিত হবে নিজের সম্পর্কে অন্যদের ইতিবাচক পরিচিতি তুলে ধরা। পরিবারের সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে হবে। বিশেষ করে শাশুড়িকে কোনোভাবেই কষ্ট দেওয়া যাবে না। শাশুড়িকে খুশি রাখার জন্য তাকে সঙ্গে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যান। সিনেমা হলে সিনেমা দেখে আসুন। কিংবা রেস্তোরাঁয় নিয়ে যান শাশুড়িকে। এতে আপনি হয়ে উঠবেন আপনার শাশুড়ির ভরসাস্থল।
নারায়ণগঞ্জ কলেজ অ্যান্ড ইউনিভার্সিটির হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সামিয়া হোসেনের বিয়ে ২০২২ সালে হয়েছিল জুয়েলারি ব্যবসায়ী সাজ্জাদ হোসেনের সঙ্গে। দুই বছর সংসার করার অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার শাশুড়ি আমাকে পূর্ণমাত্রায় ভরসা করেন। আমি তাকে মাঝেমধ্যে ঘুরতে নিয়ে যাই। তার সঙ্গে প্রায়ই সেলফি, ছবি তুলি। সেসব ছবি ফেসবুকে আপলোড দিই। আমার শাশুড়িরও ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছি। আমি আমার শাশুড়িকে ভালোবাসি।’
সরকারি সংগীত কলেজের শিক্ষার্থী কোরেশা আজমেরী বেসরকারি চাকরিজীবী আবীর মাসুদকে ২০২৩ সালে ভালোবেসে বিয়ে করেন। বিয়ের পর শ্বশুর বাড়ির অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেখতে দেখতে সময় চলে যাচ্ছে। আমার শাশুড়ি মা অনেক সুইট। আমি তাকে অনেক ভালোবাসি। শাশুড়ি মাকে নিয়ে আমি প্রায়ই শপিংয়ে যাই।’
মনোযোগ দিয়ে শাশুড়ির কথা শোনা সংসারকে শান্তিময় করে তোলে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই শাশুড়িকে গুরুত্ব দেবেন। যেকোনো কাজ করার আগে স্বামী ও শাশুড়ির অনুমতি নেবেন। এতে সংসারের শ্রীবৃদ্ধি হবে। এছাড়া শাশুড়ি কোনো কথা বা কাজ পছন্দ না হলে অভিযোগ করবেন না। মনে রাখবেন, অভিযোগে তিক্ততা বাড়ে। প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। আজ আপনি শাশুড়ির সঙ্গে সদাচরণ করবেন। আগামীতে আপনার পুত্রবধূ আপনার সঙ্গেও সদাচরণ করবেন।