খুলনায় উজ্জল হত্যা মামলায় শিল্পপতিসহ পাঁচজনের যাবজ্জীবন

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

এপ্রিল ৫, ২০২২, ০২:২৪ এএম

খুলনায় উজ্জল হত্যা মামলায় শিল্পপতিসহ পাঁচজনের যাবজ্জীবন

খুলনায় মডার্ন সি ফুডের সাবেক কর্মকর্তা উজ্জল কুমার সাহা হত্যা মামলায় ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাস কারাগারে থাকতে হবে আসামিদের। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে চারজনকে। খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক শহীদুল ইসলাম আজ সোমবার দুপুরে এই রায় ঘোষণা করেন।

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন মডার্ন সি ফুড ও প্রাইম সি ফুডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহেদী হাসান ওরফে স্টারলিং, তার বন্ধু আরিফুল হক, নাহিদ রেজা, ডালিম শিকদার ও সজল মোল্লা। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আলোচিত মামলাটিতে মোট ৪৫ জন সাক্ষী ছিলেন। এর মধ্যে ৪২ জনের সাক্ষ্য নিয়ে বিচারক রায় ঘোষণা করেছেন।

ওই মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন কে এম ইকবাল হোসেন। রায় ঘোষণার পর তিনি বলেন, উজ্জল কুমার সাহা ছিলেন মডার্ন সি ফুডের কর্মকর্তা। ২০১২ সালের ৭ জুন সকালে খুলনা নগরের সামছুর রহমান রোডে মেয়ের স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। এ সময় কয়েকজন সন্ত্রাসী অতর্কিত হামলা চালিয়ে তাকে ব্যাপক মারধর করেন। মারাত্মক আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান উজ্জল কুমার।

ওই ঘটনায় নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই সুমন কুমার সাহা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে খুলনা থানায় হত্যা মামলা করেন। পরে ওই ঘটনায় পুলিশ মেহেদী হাসানসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা আদালতের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

আসামিদের জবানবন্দির বরাতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, চাকরির সুবাদে ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মেহেদী হাসানের বাবার সঙ্গে উজ্জলের ভালো সম্পর্ক ছিল। বিভিন্ন সময় তিনি পরিচালককে মেহেদী সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দিতেন। একপর্যায়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে উজ্জলকে চাকরিচ্যুত করা হয়। পরিচালককে বিভিন্ন তথ্য দেওয়ার জন্য উজ্জলকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করেন মেহেদী হাসান। এ কথা বন্ধুদের জানালে বন্ধুরা সেদিন গিয়ে উজ্জলকে মারধর করেন।

ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খুলনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সোহেল রানা আট আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছিলেন। এতে মেহেদীকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। পরে ওই অভিযোগপত্রে নারাজি দেন বাদী। ২০১৪ সালে ১৩ জানুয়ারি আদালতের নির্দেশে মামলাটির তদন্তভার সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক শেখ শাহাজাহানের ওপর ন্যস্ত করা হয়। তদন্ত শেষে ওই বছরের ১২ অক্টোবর জমা দেওয়া সম্পূরক অভিযোগপত্রে প্রধান আসামি মেহেদী হাসানকে অব্যাহতি দেন।

তখন ওই আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর খুলনার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের আদেশে মামলাটির তদন্তভার পিবিআই হেডকোয়ার্টারের সহকারী পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলামের ওপর ন্যস্ত করা হয়। ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি তিনি আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেন। ওই অভিযোগপত্রে মেহেদীকে প্রধান আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

রায়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে আসামিপক্ষের আইনজীবী এম এম মুজিবুর রহমান বলেন, মামলার রায় সঠিক হয়নি। কারণ, সাক্ষীরা কেউই বলেননি যে আসামিরা দোষী বা তারা ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত। শুধু জবানবন্দির আলোকে এই রায় ঘোষণা করা হয়েছে। রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।

Link copied!