নতুন নির্বাচন কমিশনকে টিআইবির ৭ পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্চ ২৩, ২০২২, ০৫:২০ এএম

নতুন নির্বাচন কমিশনকে টিআইবির ৭ পরামর্শ

বিশিষ্টজনের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সংলাপে অংশ নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সংস্থাটির দীর্ঘদিনের গবেষণা ও অধিপরামর্শমূলক কার্যক্রম পরিচালনার অভিজ্ঞতার আলোকে নিম্নলিখিত সুপারিশসমূহ তুলে ধরেছেন। 

ক. আজকের আয়োজনটি যেনো কেবল আনুষ্ঠানিকতা না হয়ে, একটি প্রক্রিয়ার প্রথম পদক্ষেপ হয়। যে সকল প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন ও নির্বাচনী প্রক্রিয়াসংশ্লিষ্ট বিষয়ে ধারাবাহিক গবেষণা ও অধিপরামর্শমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তাদেরকে পর্যায়ক্রমে আরো ঘনিষ্টভাবে সম্পৃক্ত করে কমিশনের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সাফল্যের সাথে পালনের জন্য স্বল্প ও মধ্যম মেয়াদি কৌশল ও সুনির্দিষ্ট পথরেখা প্রণয়ন করা উচিত; 

খ. নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক মর্যাদা পুনরুদ্ধার ও জনআস্থা অর্জনে অন্যতম পরিমাপক হবে কমিশনের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সরকারি আনুগত্য ও প্রভাবের ঊর্ধ্বে থেকে তার অবস্থান ও কর্মকাণ্ডে নিজেকে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়, বরং একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে কতটুকু প্রমাণ করতে পারবে। এক্ষেত্রে, সরকারি আনুগত্যমূলক মনস্তাত্ত্বিক অবস্থান পরিহার করে রাষ্ট্রীয় আনুগত্যের চর্চা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে; 

গ. কমিশনের দায়িত্ব পালনে যে আইন ও বিধিমালা রয়েছে, তা পর্যাপ্ত কি-না, তা বস্তুনিষ্ঠভাবে বিশ্লেষণ করে নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার এবং অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কারের প্রস্তাব করুন এবং যথাযথ অধিপরামর্শমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। এক্ষেত্রে, এমন প্রস্তাব বিবেচিত হতে পারে যেনো নির্বাচনকালীন সরকার, জনপ্রতিনিধি হিসেবে অধিষ্ঠিত থেকে নির্বাচন করা, এ ধরনের বিতর্কিত বিষয়ে সমঝোতা অর্জন সম্ভব হয়;

ঘ. নির্বাচন কমিশন এককভাবে নির্বাচন আয়োজন করে না। এক্ষেত্রে, নির্বাচনকালীন সরকার, প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন অংশীজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে, যেহেতু আইনগতভাবে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে এ সকল প্রতিষ্ঠান নির্বাচনকালে সুনির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত, সেজন্য কমিশনকেই সৎসাহসের সাথে যথাযথভাবে তাঁদের কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করতে হবে;

ঙ. নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আগ্রহী সকল দেশি-বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাকে অবাধে অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে;

চ. বিগত নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা ও এমনকি আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি বরাবর কমিশনের অপসারণের যে আবেদন উত্থাপিত হয়েছিল, তার পূর্বাপর বিশ্লেষণ করে এ ধরনের পরিস্থিতি যেনো পুনরায় উদ্ভব না-হয়, তা নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করুন;

ছ. জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নির্ভরযোগ্য সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত ও বিশ্লেষণ উপেক্ষা করে ঢালাওভাবে ব্যাপকবিতর্কিত নির্বাচনকে ‘নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পেরেছি’। এরূপ অবাস্তব দাবি করা ও বিব্রতকর অস্বীকারের চর্চা পরিহার করতে হবে। নিজেকে আয়নার মুখোমুখি করে, ব্যর্থতার ক্ষেত্রে দায় স্বীকারের সৎসাহসের পরিচয় দিতে হবে।

এর আগে প্রথম দফা সংলাপে ৩০ জন শিক্ষাবিদকে আমন্ত্রণ জানায় নির্বাচন কমিশন। তবে মাত্র ১৩ জন সংলাপে অংশ নেন। মঙ্গলবার বিশিষ্টজনদের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপেও আমন্ত্রিত ৩৯ জনের মধ্যে অর্ধেকের বেশি সংলাপে যোগ দেননি।  

Link copied!