ব্রয়লার মাংস নিরাপদ এবং এই মাংস খেতে স্বাস্থ্যগত কোনো ঝুঁকি নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

জানুয়ারি ১২, ২০২৩, ০৯:৪৪ পিএম

ব্রয়লার মাংস নিরাপদ এবং এই মাংস খেতে স্বাস্থ্যগত কোনো ঝুঁকি নেই

ব্রয়লার মুরগির মাংস নিরাপদ এবং খাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরণের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নেই বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। বৃহস্পতিবার রাজধানীর তথ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

ব্রয়লার মুরগির মাংস মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক, হেভি মেটাল ও অন্যান্য উপাদানের উপস্থিতি রয়েছে কি না তা জানতে কৃষি মন্ত্রণালয় একটি গবেষণা পরিচালনা করে। ওই গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের বিষয়ে অবহিত করতে কৃষি মন্ত্রণালয় এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।  

গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে কৃষিমন্ত্রী বলেন, উৎস-নির্বিশেষে ব্রয়লারের মাংসে সর্বোচ্চ সহনশীল মাত্রার অনেক কম পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক এবং ভারী ধাতুর অবশিষ্টাংশ রয়েছে। ফলে ব্রয়লার মাংস একটি নিরাপদ খাদ্য এবং এ ধরনের ব্রয়লার মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্যের জন্য কোনো ঝুঁকি নেই।

অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে মাথাপিছু ব্রয়লার মুরগীর মাংস খাওয়ার পরিমান খুবই কম উল্লেখ করে আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার( FAO) তথ্য অনুযায়ি মাথাপিছু ব্রয়লার মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে ইসরায়েল(৭২ কেজি), দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ক্রিনিদাদ ও টোবাগো (৬৫ কেজি) এবং তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (৫৮ কেজি)। আর বাংলাদেশে মাথাপিছু ব্রয়লার  মুরগীর মাংস খাওয়ার পরিমাণ মাত্র ২৭ কেজি।

কৃষিমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে আরও জানান, ব্রয়লার মুরগির মাংস খাওয়া নিরাপদ কি না এ নিয়ে আমাদের অনেকের মধ্যেই ভ্রান্ত ধারণা বা দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এবং সামাজিক গণমাধ্যমে অনেক প্রচারণায় দেখা যায় যে, ব্রয়লার মাংসে অ্যান্টিবায়োটিক, হেভি মেটাল এবং অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতি রয়েছে, যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের ফলে জনগণের মধ্যে অনেক সময় ব্রয়লার মাংস সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্রয়লার মাংস খাওয়া কমিয়ে দেয়। ফলে ব্রয়লার শিল্পের ওপর একটি বড় ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি তার উদাহরণ আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। ২০২০ সালে শুরু হওয়া কভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের প্রথম দিকে পুষ্টিসমৃদ্ধ ব্রয়লার মাংস খাওয়া অনেক কমে যায়। মুরগির খাবারে বর্জ্য ব্যবহার করা হয় বলে যে ধারণা সৃষ্টি করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ব্রয়লার মুরগীর মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে জনগণের এই ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ও উদ্যোগে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের অধীনে ব্রয়লার মুরগির মাংস নিরাপদ কি না তা জানতে গত বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত একটি গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্রয়লার মুরগির মাংসে, হাড়ে, কম্পোজিটে (কলিজা, কিডনি এবং গিজার্ডের সমন্বয়) এবং মুরগির খাদ্যে কী পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক ও ভারী ধাতু আছে তা নির্ণয় করা।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানা হয়, বাংলাদেশের পাঁচটি জেলা শহরের (ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং বরিশাল) ব্রয়লার খামার (ছোট, মাঝারি এবং বড়) এবং বাজার থেকে ব্রয়লারের মাংস, হাড় ও কম্পোজিট এবং ব্রয়লার খাদ্যের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পাশাপাশি ঢাকা জেলার তিনটি সুপারশপ থেকে ব্রয়লার মুরগির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত প্রায় এক হাজার ২০০টি ব্রয়লার মুরগি এবং ৩০টি ব্রয়লার মুরগির খাদ্য থেকে ৩১৫টি নমুনা প্রস্তুত করে বহুল ব্যবহৃত ১০টি অ্যান্টিবায়োটিক এবং ৩টি ভারী ধাতুর অবশিষ্টাংশের পরিমাণ পরীক্ষা করা হয়েছে।

ড. আব্দুর রাজ্জাক জানান,গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে দেখা যায় যে ব্রয়লার মুরগির মাংসে, হাড়ে এবং কম্পোজিটে মূলত দুটি অ্যান্টিবায়োটিক (অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ও ডক্সিসাইক্লিন) এবং ৩টি হেভি মেটালের (আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম ও লেড) সামান্য উপস্থিতি রয়েছে, যা অস্বাভাবিক নয় এবং তা সর্বোচ্চ সহনশীল সীমার অনেক নিচে। খামার এবং বাজারে প্রাপ্ত ব্রয়লার মাংসের চেয়ে সুপারশপের ব্রয়লার মাংসে অ্যান্টিবায়োটিক এবং হেভি মেটালের পরিমাণ কম রয়েছে বলেও গবেষণায় দেখা গেছে।

গবেষণায় পাওয়া ফলফলের উপসংহার টেনে সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী বলেন, দেখা গেছে মাংসে MRLমাত্রার নিচে এন্টিবায়োটিক এবং ভারী ধাতুর উপস্থিতি রয়েছে। ফলে ব্রয়লার মাংষ একটি নিরাপদ খাদ্য এবং এই ধরণের মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে জনস্বাস্থে্যর জন্য কোনো ঝুঁকি নেই। পাশাপাশি সুস্থ ও মেধাবি জাতি গঠনের ক্ষেত্রে এবং আমিষের চাহিদা পূরণে ব্রয়লাল মাংস খাওয়ার বিষয়ে  প্রচারণা ও জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে  মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব নাহিদ রশীদ ও কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার উপস্থিত ছিলেন।

Link copied!