মানুষকে ভালোবেসে পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করতে বিদায়ী রাষ্ট্রপতির আহ্বান

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

এপ্রিল ২৪, ২০২৩, ০৬:৫৩ পিএম

মানুষকে ভালোবেসে পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করতে বিদায়ী রাষ্ট্রপতির আহ্বান

বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে টানা দুই মেয়াদে ১০ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন অ্যাডভোকেট মো. আবদুল হামিদ। বিদায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি রাজনীতিবিদদের প্রতি বলেছেন, মানুষকে ভালোবেসে রাজনীতি করতে পারলেই রাজনীতি পরিচ্ছন্ন থাকবে।

সোমবার (২৪ এপ্রিল) আব্দুল হামিদের দ্বিতীয় মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় তার স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন মো. সাহাবুদ্দিন। আর মেয়াদ শেষ হওয়ায় রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন বঙ্গভবন ছেড়ে যাচ্ছেন আবদুল হামিদ।

বিদায় অনুষ্ঠান শুরুর আগে বঙ্গভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আজ থেকে আমি সাধারণ মানুষ হিসেবে মুক্তভাবে চলাচল করতে পারব। সত্যি বলতে জাতীয় সংসদে আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতাম। এখানে আমি আসতে চাইনি। যাই হোক তবুও ১০ বছরের বেশি কাটিয়ে দিলাম।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে দীর্ঘ দিনের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে মো. আবদুল হামিদ বলেন, এই উপমহাদেশে আমিই প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে একটানা ১০ বছরের বেশি দায়িত্ব পালন করলাম। এর আগে ভারত বা পাকিস্তানেও কেউ এত দিন দায়িত্ব পালন করেনি।  

পরবর্তী জীবনে কী করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে বিদায়ী রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি তো এখন অবসরপ্রাপ্ত মানুষ। আমার তো আর তেমন কিছু করার নেই। কিন্তু সময় পেলে কিছু লেখালিখি করব। 

সংবিধান অনুসারে পরপর দুই মেয়াদের বেশি দায়িত্ব পালনের সুযোগ না থাকায় টানা ১০ বছর রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর অবসরে যাচ্ছেন মো. আবদুল হামিদ। বঙ্গভবনে তার শেষ কার্যদিবস ছিল রোববার (২৩ এপ্রিল)। সোমবার সকালে বঙ্গভবনে শপথ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন তিনি।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পাঁচ বছরের মেয়াদ রোববার শেষ হওয়ায় বঙ্গভবন থেকে তাঁকে বিদায় জানানো হয়। দীর্ঘ ১০ বছরের বেশি সময় ধরে দুই মেয়াদে দেশের সর্বোচ্চ পদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি ভবনে তিনি ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। বঙ্গভবনের ৫২ বছরের ইতিহাসে এটি বিরল দৃষ্টান্ত।

সাবেক রাষ্ট্রপতির পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আবদুল হামিদ বঙ্গভবন থেকে তাঁর মেয়াদ শেষে রাজধানীর নিকুঞ্জে অবস্থিত নিজ বাসা ‘রাষ্ট্রপতি লজে’ থাকবেন। সেখানে পরিবারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও অন্যান্য সামগ্রী স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

১৯৫৯ সালে ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে আবদুল হামিদের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। ১৯৬৯ সালের শেষ দিকে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। আবদুল হামিদ নবম সংসদে স্পিকার নির্বাচিত হন এবং ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি ডেপুটি স্পিকার ছিলেন। আবদুল হামিদ ১৯৭১ সালে দেশের স্বাধীনতার পর থেকে সাতবার সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন।

পরে আবদুল হামিদ ২০১৩ সালের ২২ এপ্রিল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতি হামিদ ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার কামালপুরে জন্মগ্রহণ করেন।

তাঁর বাবার নাম হাজী তায়েব উদ্দিন এবং মা তমিজা খাতুন। পাঁচ ভাই তিন বোনের মধ্যে আবদুল হামিদ তৃতীয়। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ স্কুল জীবন থেকে ছাত্ররাজনীতির সাথে যুক্ত হন। তিনি ১৯৭১ সনের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

একাত্তরের মার্চের উত্তাল দিনগুলোতে তিনি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে কিশোরগঞ্জে স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠনের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৭ মার্চ কিশোরগঞ্জ শহরের রথখোলা মাঠে ছাত্র-জনতার সভায় স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করেন।

সপ্তম জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। পরবর্তীতে তিনি সংসদে স্পিকার ও বিরোধী দলীয় উপনেতার দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়াও নবম জাতীয় সংসদে তিনি কার্য উপদেষ্টা কমিটি, কার্যপ্রণালী বিধি সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং পিটিশন কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

Link copied!