হাফ ফেস হেলমেটে ঝুঁকিতে জীবন, কড়াকড়ির প্রস্তাব

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ১৪, ২০২২, ০৩:৩২ এএম

হাফ ফেস হেলমেটে ঝুঁকিতে জীবন, কড়াকড়ির প্রস্তাব

দেশে প্রতিবছর দুর্ঘটনায় এক হাজারের বেশি মোটরসাইকেল আরোহী প্রাণ হারান। আর দুর্ঘটনায় আহতদের সংখ্যাও কয়েক হাজার। এই হতাহতের অন্যতম কারণ নিম্নমানের বা হাফ ফেস হেলমেট পরা। তবে হতাহতের সংখ্যা ৭০ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করা যেত যদি আরোহীরা মানসম্পন্ন হেলমেট পরিধান করতো। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সাথে একটি সভায় নিম্নমানের হেলমেট ব্যবহারে কড়াকড়ি আরোপের কথা বলেন ব্রাকের একদল গবেষক।

মান নিয়ে নীতিমালা নেই

মোটরযান আইন অনুযায়ী, মোটরসাইকেলে যাত্রী থাকলে চালকসহ দুজনকেই হেলমেট পরতে হয়। এ নিয়ে কড়াকড়ি আরোপের পর মোটরবাইক রাইডারদের অতিরিক্ত হেলমেট বহন করতে দেখা যায়। তবে প্রশ্ন উঠেছে এই হেলমেটের মান নিয়ে। মূলত দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে এই হেলমেট পরায় বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘নিয়মরক্ষার’।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের নিম্নমানের হেলমেট ব্যবহারে উদ্দেশ্য সাধনতো হচ্ছেই না, বরং এতে ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, আইনে হেলমেটের মান বিষয়ে উল্লেখ না থাকায় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারছেন না তারা।

যাত্রীদের ব্যবহৃত মানহীন হেলমেটের বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় কিনা জানতে চাইলে ট্রাফিকের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার এস এম শামিম দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “হেলমেটের মান নিয়ে যাচায়-বাছাইয়ের কোনও আইনি নির্দেশ নেই। আইনানুযায়ী শুধু মাথায় হেলমেট না থাকলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। কিন্তু কী ধরনের হেলমেট পরতে হবে এরকম কোনও বাধ্যবাধকতা এখনও করা হয়নি। হলে অবশ্যই আমরা বিষয়টা দেখবো। তবে হাফফেস হেলমেট কোন হেলমেটই না।”

নিহতদের ৮৮ ভাগই হেলমেটে উদাসীন

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের( বুয়েট) অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “হেলমেট জীবন রক্ষার জন্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম। হেলমেটের গুণগতমান ঠিক থাকলে আহতের ঝুঁকি ৭০ শতাংশ কমে যায়, আর নিহতের ঝুঁকি প্রায় ৪০ শতাংশ কমে যায়।”

তিনি আরও বলেন, “বিগত বছরগুলোতে আমরা দেখেছি মূলত মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় যারা নিহত হন তাদের প্রায় ৮৮ শতাংশই হেলমেট পারেননি। এতে বোঝা যায় যে হেলমেট একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। বিডিএস এর  ১১৩৬ যেটি বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের ( বি এস টি আই) এর  স্ট্যান্ডার্ড। এই স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী যদি হেলমেট পরা ও বাজারজাত করা হয়, তবে দেখা যাবে, সড়ক দুর্ঘটনা অর্থাৎ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় যে ঝুঁকিগুলো রয়েছে তার অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব “

নিম্নমানের হেলমেটে কড়াকরি আরোপ করা হলে কতটুকু সুফল পাওয়া যাবে এমন প্রশ্নের জবাবে বুয়েটের এই অধ্যাপক আরও বলেন, “নিম্নমানের হেলমেটে বাজার সয়লাভ হয়ে গেছে। হাফ ফেস বা নিম্নমানের যে হেলমেটগুলো আছে সেগুলো অনেকটাই প্লাস্টিকের বাটির মতো। সড়ক দুর্ঘটনায় এগুলো কোনভাবেই উপকারে আসবে না। ফলে সুরক্ষার জন্য গুণগতমান সম্পন্ন হেলমেট ব্যবহার করতে হবে আর আইনের যে বিষয়টি রয়েছে তার সঠিক প্রয়োগ আসলে প্রয়োজন।”

মামলার ভয়ে হেলমেট

বাইকারদের সঙ্গে কথা বলা জানা যায়, নিম্নমানের এই হেলমেটগুলো আড়াইশো থেকে তিনশো টাকার মধ্যে কিনতে পাওয়া যায়। এই হেলমেটের ফিতাগুলো থাকে ঢিলেঢালা, কিছু কিছু হেলমেটে আবার ফিতা আটকানোর ক্লিপও নেই। বেশিরভাগ হেলমেটই যাত্রীদের মাথায় ঠিকমতো বসে না।”

যাত্রীদের জন্য নিম্নমানের হেলমেট কেন?-এমন প্রশ্নের জবাবে রাজধানীর বাংলা মোটরের সামনে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকা বাইকচালক মোস্তাফিজ হোসেন দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “এই হেলমেটগুলো কেনার একটা কারণ কম দামে পাওয়া যায়। আর দ্বিতীয়ত যাত্রীরা গরমের সময় এই হেলমেটগুলি বেশি পছন্দ করেন। শীতে আমরা ফুল ফেস হেলমেট দেই যাত্রীদের।”

সুরক্ষিত হেলমেট (পুরো মুখমণ্ডল ঢাকা) ব্যবহার করতে অনেক যাত্রীও অনীহা প্রকাশ করেন বলে জানান আরেক মোটরবাইক চালক লুৎফর রহমান। তিনি বলেন, “অনেক যাত্রী বড় ধরনের হেলমেট পরতে চায় না। হাতে নিয়ে বসে থাকেন এবং এর জন্য মামলাও খেয়েছি। অনেকে আবার বলে এই হেলমেট পরলে গরম লাগে,  তাই হালকা হেলমেট ব্যবহার করি।”

সার্টিফাইড হেলমেট নিয়ে কথা বলেন বিক্রয়কারী কিছু প্রতিষ্ঠান। তারা জানান, ডট সার্টিফাইড হেলমেট ৩৫০০ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামের আছে। হাফফেস হেলমেট গুণগতমানসম্পন্ন না। একটা সার্টিফাইড হেলমেট নিহতের ঝুঁকি কমায়।

Link copied!