বরিশাল নগরীতে বাসা ভাড়া দিয়ে থাকা সম্ভব না হওয়ায় রানা (৪৫) নামে এক শারীরিক প্রতিবন্ধী অসুস্থ শরীরে হামাগুড়ি দিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটি ঘরের জন্য আবেদন করেন। গত ৯ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যেয়ে ঘরের জন্য আবেদন করলে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার।
বরিশালের ডিসি জসীম উদ্দিন হায়দার গণমাধ্যমে বলেন, “ রানার আবেদন তিনি পেয়েছেন। আবেদন যাচাই-বাছাই করে দ্রুত সময়ের মধ্যে রানাকে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের একটি ঘর উপহার দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন।”
মুজিববর্ষে দেশজুড়ে ভূমি ও গৃহহীনদের ঘর উপহার দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথম দফায় জেলায় ১ হাজার ৫৫৬টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় ৫৪৯টি ঘর বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে মেহেন্দিগঞ্জ ও বানারীপাড়া উপজেলায় কিছু ঘরের নির্মাণ কাজ এখনও চলছে। এর মধ্যেই তৃতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে আরও ১ হাজার ৮৫৬টি ঘর বরাদ্দ পাওয়া গেছে বলে জানান জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার।
স্থানীয় সূত্র জানায়, রানার মা হোসনেয়ারার পান-সিগারেট বিক্রির আয় দিয়ে কোনোমতে টিকে আছেন রানা। এ অবস্থায় নিজের একটি ঘর জরুরি হয়ে পড়েছে বলে জানান তিনি।
হোসনেয়ারা নগরীর সদর রোডের বিবিরপুকুর এলাকায় গত চার দশক ধরে পান-সিগারেট বিক্রি করছেন। রানার বয়স যখন ৯, তখন বাবা এনায়েত সিকদার সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। এরপর এই ছোট্ট দোকানের আয় দিয়েই চলছে সংসার। কিছু টাকা জমিয়ে হোসনেয়ারা এক মেয়ে রিতাকে বিয়ে দিয়েছেন। এরপর থেকে রানাকে নিয়েই তার সংসার।
হাতে-পায়ে শক্তি নেই রানার। হামাগুড়ি দিয়ে চলাফেরা করতে পারলেও অন্য কাজের জন্য মা তার একমাত্র ভরসা। দোকানের সামান্য আয়ে কোনোমতে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটে মা-ছেলের। করোনা তাদের আরো সংকটে ফেলেছে। বিশেষ করে নিজের জমি না থাকায় প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকার ভাড়া বাসায় থাকতে হচ্ছে। এই সংকট থেকে উদ্ধার পেতে এক শুভাকাঙ্ক্ষির পরামর্শে রানা গত ৯ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান।
হোসনেয়ারা বলেন, “শুনেছি মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিহীনদের ঘর উপহার দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর উপহার একটা ঘরের আশায় আবেদন করেছি। মৃত্যুর পর প্রতিবন্ধী ছেলেকে কে দেখাশোনা করবে এই দুশ্চিন্তা তো আছেই। একটা মাথা গোজার ঠাঁইও যদি করতে পারি তাহলে মরেও শান্তি পেতাম।”