তিন মাসে পাগলা মসজিদের দানবাক্সে ৬ কোটি টাকা!

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ডিসেম্বর ৯, ২০২৩, ০৬:২৫ পিএম

তিন মাসে পাগলা মসজিদের দানবাক্সে ৬ কোটি টাকা!

দুই শতা‌ধিক মানুষের সব টাকা গুনতে লাগে প্রায় ১৫ ঘণ্টা সময়। সংগৃহীত ছবি

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এ যাবতকালের সবচেয়ে বেশি টাকা পাওয়া গেল গত তিন মাসের হিসাবে। ৩ মাস ২০ দিন পর খুলে ৯টি দানবাক্সে পাওয়া গেল ২৩ বস্তা টাকা। যা গুনে দেখা গেল ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা। এছাড়াও দানবাক্সে পাওয়া গেছে বৈদেশিক মুদ্রা ও সোনার গহনা। ২৩ বস্তা টাকা গুনতে সময় লেগেছে ১৫ ঘণ্টা।

শনিবার (৯ ডিসেম্বর) সকা‌ল সা‌ড়ে ৭টার দি‌কে পাগলা মস‌জি‌দের নিচতলায় বি‌ভিন্ন স্থা‌নে থাকা দান‌ সিন্দুকগু‌লো একে একে খোলা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পু‌লিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

প্লাস্টিকের বস্তায় টাকা ভরে মস‌জি‌দের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে মে‌ঝে‌তে ঢে‌লে সকাল ৯টায় টাকা গণনা শুরু হয়। শেষ হয় রাত ১০টায়। 

টাকা গণনার কাজে অংশ নেন পাগলা মস‌জিদ নূরানী কুরআন হা‌ফি‌জিয়া মাদ্রাসার ১৪০ জন শিক্ষার্থী, রূপালী ব‌্যাং‌কের ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচা‌রীসহ দুই শতা‌ধিক মানুষ। ২৩ বস্তা টাকা গুনতে লাগে প্রায় ১৫ ঘণ্টা সময়।

মসজিদটিতে মোট আটটি দানবাক্স থাকলেও দানের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এবার আরও একটি দানবাক্স বাড়ানো হয়েছে। এখন পাগলা মসজিদের দানবাক্সের সংখ্যা নয়টি।

মস‌জি‌দের না‌মে খোলা ব‌্যাং‌ক একাউন্টে দানের টাকা জমা রাখা হয়। দা‌নের টাকা‌ দি‌য়ে মস‌জিদ ও মাদরাসার খরচ চা‌লি‌য়ে বা‌কি টাকা ব্যাংকে রাখা হয়। এর আয় থে‌কে জেলার বি‌ভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠা‌নে অনুদান দেয়া ছাড়াও জ‌টিল রো‌গে আক্রান্ত অসহায় মানুষ‌কে সহ‌যো‌গিতা দেয়া হয়।

এর আগে ১৯ আগস্ট সব‌শেষ মস‌জি‌দের ৮‌টি সিন্দুক থে‌কে পাওয়া যায় ৫‌ কো‌টি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৫২৫ টাকা।

আরও পড়ুন: পাগলা মসজিদ দানবাক্সে এবার মিললো ২৩ বস্তা টাকা

প্রসঙ্গত, কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত মসজিদটিকে পাগলা মসজিদ ইসলামী কমপ্লেক্স নামকরণ করা হয়েছে। এ মসজিদের আয় দিয়ে কমপ্লেক্সের বিশাল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।

প্রায় দেড়শ বছর আগে কিশোরগঞ্জ শহ‌রের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তী‌রে পাগলা মস‌জি‌দটি নির্মিত হয়।

জনশ্রুতি রয়েছে, একসময় এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বাস ছিল কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত নরসুন্দা নদীর মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা চ‌রে। ওই পাগল সাধকের মৃত‌্যুর পর নি‌র্মিত মস‌জিদ‌টি পাগলা মসজিদ হিসেবে প‌রি‌চি‌তি পায়। পাগলা মসজিদে মানত করলে মনের আশা পূর্ণ হয়। এমন ধারণা থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অসংখ‌্য মানুষ এ মসজিদে দান করে থাকেন। বি‌শেষ ক‌রে প্রতি শুক্রবার এখা‌নে হাজার হাজার মানু‌ষের ঢল না‌মে।

মুসলমানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন এ মসজিদে দান করে থাকেন। তাদের বিশ্বাস, এখানে দান করলে মনোবাসনা পূরণ হয়। তাই ছুটে আসেন পাগলা মসজিদে। দান করেন মোটা অঙ্কের টাকা। টাকার সাথে সোনা-রূপার অলঙ্কারসহ থাকে বিদেশি মুদ্রাও। 

তাছাড়া প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি, ফলফলাদি, মোমবাতি ও ধর্মীয় বই দান করে লোকজন। এছাড়া, দানবাক্সে চিঠিপত্রও পাওয়া যায়। এসব চিঠিতে লোকজন তাদের জীবনে পাওয়ার আনন্দ, না-পাওয়ার বেদনা, মামলা থেকে মুক্তি, চাকরি প্রত্যাশা, পরকীয়া থেকে ফিরিয়ে আনা, রোগব্যাধি থেকে মুক্তিসহ নানা আকুতি প্রকাশ করেন।

Link copied!