মার্চ ১১, ২০২৩, ১১:০৬ এএম
বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে। ভাগ্যে বউ জুটছে না। তাই একশো কিলোমিটার পদযাত্রা শেষে মন্দিরে গিয়ে ভাগ্যে যাতে বউ জোটে তার জন্য প্রার্থণা করেছেন একদল অবিবাহিত কৃষক। শুরুতে দলে ত্রিশ জন থাকলে পথে আরও ত্রিশজন ওই পদযাত্রা ও প্রার্থণায় যোগ দেন।
ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকের মান্ডি জেলার একদল কৃষকের এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা ও হাস্যরসের জন্ম দিলেও অধিকারকর্মীরা বলছেন, এতে করে ওই অঞ্চলের আর্থ সামাজিক সংকটের একটি চিত্রও ফুটে উঠেছে।
অবিবাহিতদের পদযাত্রা বা ব্রক্ষ্মচারিগালু পদযাত্রা হিসেবে পরিচিত এই পদযাত্রায় যারা অংশ নিয়েছেন তাদের মধ্যে একজন হলেন মাল্লেশা ডিপি। তারা গিয়েছিলেন মহাদ্বেশাওয়ারা মন্দিরে। ভক্তরা বিশ্বাস করেন এই মন্দিরে প্রার্থণা করলে তাদের প্রত্যাশা পূরণ হবে। একারনেই কৃষকদল একশো কিলোমিটার দূরের ওই মন্দিরে পৌঁছতে পায়ে হেঁটে যাত্রা করে।
মান্ডি জেলায় নারী-পুরুষের অনুপাতের পার্থক্য কয়েক দশক ধরে বেড়ে চলেছে। শেষ পাওয়া আদমশুমারির পরিসংখ্যান অনুসারে— মান্ডার এই অনুপাত ২০০১ সালে ৯৭১:১০০০ থেকে ২০১১ সালে ৯৬০:১০০০ ( নারী : পুরুষ) পৌঁছেছিল।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা বিবিসি’র বাংলা প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রচারকারীরা বলছেন, এর কারণে অনেক পুরুষের বিয়ে করা কঠিন হয়ে গেছে। এ ছাড়া খামারের আয় কমে যাওয়া, নারীদের ক্ষেত্রে পছন্দ নিজ গোত্র থেকে অন্য গোত্রের দিকে যাওয়া এমনকি তাদের পুরুষবিদ্বেষী মনোভাবের কারণেও বিয়ে করতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারী মালেশা ডিপি বিবিসিকে বলেন, গত কয়েক বছরে প্রায় ৩০ জন মহিলা তাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। যখন আমার প্রেমে পড়া উচিত ছিল, আমি কাজে ব্যস্ত ছিলাম। আমি অর্থ উপার্জন করেছি।
তিনি আরও বলেন, এখন যেহেতু আমার জীবনের সব কিছু আছে আমি বিয়ে করার জন্য একটি পাত্রী খুঁজে পাচ্ছি না। আমার বয়স মাত্র ৩৩। কিন্তু মনে হচ্ছে ইতোমধ্যে এলাকায় বিয়ের জন্য আদর্শ বয়স পার করে ফেলেছি আমি।
পদযাত্রার অন্যতম আয়োজক শিবপ্রসাদ কেএম বলেন, পদযাত্রার জন্য দুই শতাধিক পুরুষ অংশ নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করলেও স্থানীয় মিডিয়া এটি নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করায় অনেকেই পিছিয়ে পড়েন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এলাকায় জমির পরিমাণ কম এবং উপার্জন খুব বেশি নয়। তাই কৃষি ছাড়া যাদের ব্যবসার মতো অন্য আয়ের উৎস আছে, তারা পাত্রী পেতে কিছুটা এগিয়ে রয়েছেন।
কৃষ্ণা (৩১) নামে আরেক অংশগ্রহণকারী বলেন, মান্ডি একটি উর্বর ভালো সেচযুক্ত অঞ্চল। এখানে আখ প্রধান ফসলগুলোর মধ্যে একটি। কিন্তু সম্প্রতি খামারের আয় কমে যাওয়ায় এই পেশাটিকে মর্যাদাহীন করে তুলেছে। পাত্রীর পরিবারের লোকেরা মনে করেন, কৃষক পরিবারের যুবকদের আয় অনিশ্চিত।