সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫, ০৬:৫৯ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে ছাত্রলীগের পদপদবি নিয়ে তারা ছাত্রদল ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন। পরিচয় গোপনের সেই ধারা এখনো তারা অব্যাহত রেখে নারী নিপীড়নের ঘটনা ঘটাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্রদলের নেতারা। তাদের অভিযোগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের এই গুপ্তরাজনীতি চালিয়ে যাওয়ার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে।
ডাকসু নির্বাচন ঘিরে আদালতে রিট আবেদনকারী ছাত্রীকে গণধর্ষণের হুমকির প্রতিবাদে আজ বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান ফটকে এক মানববন্ধনে এ কথাগুলো বলেছেন ছাত্রদলের নেতারা। সেখানে সংগঠনটির নারী নেত্রীরাও বক্তব্য দেন। তাঁরা ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা–কর্মীদের সাইবার বুলিংয়ের শিকার হওয়ার অভিযোগ করে বলেন, রাজনীতিতে আরও সক্রিয় হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও এসব ঘটনার জন্য পারছেন না।
মানববন্ধনে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রশিবির তাদের এই গুপ্তচরবৃত্তির মাধ্যমে অনেক কিছু বাস্তবায়ন করতে চায়, তারা বিগত সাড়ে ১৫ বছর গুপ্তরাজনীতি করেছে, এখনো যদি লজ্জা পায় নারীদের মতো, আমি তাদেরকে আহ্বান জানাই, তারা যেন বোরকা পরিহত হয় এবং চুড়ি পরে এই রাজনীতি করে। ছাত্ররাজনীতি করবে তারাই, যারা সাহসী, বিবেকবান।’
শিবির বিগত সাড়ে ১৫ বছর ছাত্রলীগের পতাকাতলে আশ্রয়ে–প্রশ্রয়ে থেকে আজ ৫ আগস্ট–পরবর্তী বাস্তবতায় বিভিন্ন বয়ান তৈরি করে সাহসিকতার গল্প শোনায় বলে মন্তব্য করেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘তারা নাকি আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পায় না। অথচ আমরা দেখেছি, সাড়ে ১৫ বছর আল্লাহ থেকেও তারা খুনি হাসিনাকে বেশি ভয় পেয়েছে। তারা খুনি হাসিনার বিরুদ্ধে একটি স্ট্যাটাস দেওয়ার পর্যন্ত সাহস রাখেনি। তারা সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের পদ–পদবি নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী এবং ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের ওপর হামলার সাথে সরাসরি জড়িত।’
পরিচয় গুপ্ত থাকার কারণে নিপীড়নকারী ইসলামী ছাত্রশিবিরের ওই সব নেতার বিরুদ্ধে একটি জিডি পর্যন্তও হয়নি বলে উল্লেখ করেন ছাত্রদলের সভাপতি। গুপ্তরাজনীতিকারীদের মুখোশ উন্মোচনের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে, রাজপথে—যেখানেই তারা গুপ্তরাজনীতি করবে, সেখানেই তাদের প্রতিহত করা হবে।’
বক্তব্যে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া শিবিরের এক নেতা ছাত্রলীগের সাথে জড়িত থাকার কারণে আমাদের এক বামপন্থী বোন একটি রিট দায়ের করেছিল শুধু, সে অপরাধে গুপ্ত সংগঠন ছাত্রশিবিরের একজন গুপ্তশিবির যেভাবে আমাদের সেই সহযোদ্ধা বোনকে পদযাত্রা করে গণধর্ষণের হুমকি দিয়েছিল, তার প্রতিবাদ এবং সারা বাংলাদেশে সমস্ত রাজনৈতিক নারী কর্মীদেরকে অব্যাহতভাবে গুপ্ত সংগঠনের নেতা–কর্মীদের সাইবার বুলিং এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে নারীদের শারীরিকভাবে আঘাতের প্রতিবাদে আমাদের এই মানববন্ধন।’
গণ–অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের নারীদের ওপর সাইবার বুলিং, আক্রমণ ও হেয় করা এবং গণধর্ষণের হুমকি দেওয়ার প্রতিটি ঘটনায় ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতা–কর্মীরা জড়িত বলে অভিযোগ করেন নাছিরউদ্দিন। তারা বারবার বলার চেষ্টা করেছেন, কোনো শিক্ষার্থী যদি রাজনীতি করতে চায়, সে রাজনীতি হতে হবে প্রকাশ্যে গণতান্ত্রিক রাজনীতি, উল্লেখ করে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘কিন্তু বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, বিশেষ করে ভাইস চ্যান্সেলর এবং প্রক্টরের পৃষ্ঠপোষকতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে গুপ্তরাজনীতি চলমান রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোথায় গুপ্তরাজনীতি চলছে, কোথায় প্রকাশ্য রাজনীতি চলছে, এটি কেউ জানুক আর না জানুক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর ঠিকই জানেন যে ছাত্রশিবির কোথায় কোথায় রাজনীতি করে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন কোনো গুপ্তরাজনীতি না থাকে, সেই ঘোষণা দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রতি দাবি জানান ছাত্রদলের এই নেতা। নাছির বলেন, ‘নতুবা আপনারা দেখেছেন যে গুপ্ত সংগঠনের নেতা আলী হুসেন যেভাবে আমার বোনকে পদযাত্রা করে গণধর্ষণের হুমকি দিয়েছে, এ রকম ঘটনা আরও ঘটতে থাকবে। কিন্তু যতই ঘটতে থাকবে ছাত্রশিবির গুপ্তরাজনীতি করার কারণে, তারা তাদের কমিটি প্রকাশ না করার কারণে, যখন প্রকাশিত হবে তারা তখন ঘোষণা দেবে যে সে ব্যক্তি তাদের ছাত্ররাজনীতির সাথে কোনোভাবে সম্পৃক্ত না।’
ছাত্রশিবিরের কোনো পর্যায়ের কোনো প্যানেলকে নির্বাচিত না করার আহ্বান জানিয়ে নাছির উদ্দিন বলেন, ‘যে বোনের প্রতি পদযাত্রা করে গণধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছিল, আমরা তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি। একই সাথে নারীদের প্রতি যেভাবে সাইবার বুলিং হচ্ছে, গুপ্ত সংগঠন ছাত্রশিবির যেভাবে নারীদেরকে হেনস্তা করছে, সে জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সকল নারী শিক্ষার্থী রয়েছে, তাদের প্রতি আমাদের উদাত্ত আহ্বান থাকবে যে, ৯ তারিখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে আপনারা গুপ্ত সংগঠন ছাত্রশিবিরের কোনো পর্যায়ের কোনো প্যানেলকে আপনারা নির্বাচিত করবেন না।’
মানববন্ধনে ছাত্রদল নেত্রী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুপন্তী রত্না বলেন, ‘আমরা নারী শিক্ষার্থীরা রাজনীতিতে সক্রিয় হতে চাই, কিন্তু গুপ্ত সংগঠনের ভয়ভীতি আমাদের প্রতিদিন পিছু টেনে ধরে। বাংলাদেশের মোট ভোটারের ৫২ শতাংশ নারী। অথচ রাজনীতিতে আমরা বারবার বাধার মুখে পড়ি। কারণ, যারা প্রকাশ্যে রাজনীতি করে না, তারা আড়ালে থেকে আমাদের হেয় করে, আমাদের গালাগালি করে, আমাদের হুমকি দেয়।’
রুপন্তী রত্না বলেন, ‘এখন সময় এসেছে এই গুপ্তরাজনীতি বন্ধ করার। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও রাষ্ট্র এসব অপরাধীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিক। নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাসকে নিরাপদ করতে হবে। অন্যথায় আমরা নারীরা নীরব থাকব না।’
ছাত্রদলের সহসভাপতি রেহানা আক্তার শিরিন বলেন, ‘৭১–এর পরাজিত শক্তি আর ’২৪-এর পরাজিত শক্তি এক হয়ে আজ নারীদের নিপীড়ন করছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে বিদায় করা হয়েছিল গণতন্ত্রের জন্য, কিন্তু এখনো রাজাকার-আলবদরের উত্তরসূরিরা সক্রিয়। আমরা চাই শিবিরকর্মী আলী হুসেন, যে প্রকাশ্যে ধর্ষণের হুমকি দিয়েছে, তার সর্বোচ্চ শাস্তি হোক। একই সাথে যারা সাইবার বুলিং করছে, যারা নারীদের হেয় করছে, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’
ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির শিক্ষার্থী সাদিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমরা দেখছি নারীদের সোশ্যাল মিডিয়ায় সাইবাল বুলিং ও হেনস্তা করা হলেও সরকার এই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমাদের অভিজ্ঞতা হলো, অভিযোগ করলে কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দেয় না। অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। সরকারের কাছে দাবি জানাই, নারীদের হেনস্তাকারী যে–ই হোক, তার বিরুদ্ধে যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
মানববন্ধনটি সঞ্চালনা করেন ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মানসুরা আলম। এতে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের নারী নেতা–কর্মীরা।