জুলাই ২৪, ২০২৫, ০৪:৪৫ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা এই রাষ্ট্র আমাদের দেয় নাই। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, একটা ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থা, একটা অযোগ্য স্বাস্থ্য উপদেষ্টা দিয়ে এই স্বাস্থ্যব্যবস্থা পরিচালনা করতে। বাংলাদেশে কি কোনো ডাক্তার ছিল না। অযোগ্যতা, অব্যবস্থাপনার একটা ক্ল্যাসিক এক্সাম্পল (উদাহরণ) সেট করে দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার মধ্য দিয়ে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের জাতীয় বীর আব্দুল কুদ্দুস মাখন পৌর মুক্তমঞ্চ এলাকায় আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জুলাই পদযাত্রার পথসভায় হাসনাত আবদুল্লাহ এসব কথা বলেন।
ঢাকায় উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের অতীতের শাসকেরা ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থা দিয়ে গেছে। আপনি রাস্তায় বের হন, আপনি বাসে চাপা পড়ে মরবেন। আপনি হসপিটালে যান, চিকিৎসার অভাবে মারা যাবেন। আপনি বিমান দুর্ঘটনায় মারা যাবেন, লঞ্চ দুর্ঘটনায় মারা যাবেন। স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা এই রাষ্ট্র আমাদের দেয় নাই। আমরা একটা স্বাভাবকি মৃত্যুর নিশ্চয়তা চাই।’
সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য আমরা যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো দিয়েছি, এই সংস্কার প্রস্তাবের আশু বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। সেটির পূর্বে দৃশ্যমান বিচার ও সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের আপার হাউসে অবশ্যই পিআর নিশ্চিত করতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক হাসনাত বলেন, ‘এই রাষ্ট্রের কাছে, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমরা চেয়েছিলাম একটা পুনর্গঠিত রাষ্ট্রব্যবস্থা। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, আমাদের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন ইংরেজিতে অনার্স। আমাদের বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী হচ্ছে বাংলায় অনার্স। যারা যোগ্য ও দক্ষ মানুষ ছিলেন, তাদের সরকারে বসিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে দেখিয়ে দেওয়া উচিত ছিল, স্বাস্থ্যব্যবস্থা কেমন হওয়া উচিত।’
এনসিপির নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা কথা দিচ্ছি, আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি, তাহলে আমরা ইতিহাস গড়ব। যে জালিমের শাসন রয়েছে, সেটি রুখে দিয়ে আমরা ইনসাফের শাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করব। সবার জন্য আমরা সমান অধিকার, ইনসাফ, ন্যায্যতার বাংলাদেশ আমরা গঠন করব। একটি পুনর্গঠিত বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে এই ব্রাহ্মণবাড়িয়া-কুমিল্লা অবশ্যই বৃহত্তর অবদান রাখবে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশে বিচার ও সংস্কারের দরকার।’
প্রতিটি উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে এনসিপির কমিটিকে সুসংগঠিত করার আহ্বান জানিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা খবর পাচ্ছি, যারা এনসিপিতে যোগ দিতে চান, তাদের বিভিন্নভাবে ভয় দেখানো হয়। ওপরে আল্লাহ, নিচে মাটি; জালিমের শাসন কবর হয়েছে। এনসিপির কোনো নেতা–কর্মীর দিকে চোখ তুলে তাকাবেন না। আমরা গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য একটা রাজনৈতিক দল; আরেকটা রাজনৈতিক দলকে সহযোগিতা করব। কিন্তু পরশ্রীকাতরতা ও হিংসার রাজনীতি বাংলাদেশে পুনর্বাসন হবে না। আমরা একসঙ্গে বাংলাদেশ গড়ব।’
পথসভায় আরও বক্তব্য দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক মো. আতাউল্লাহ প্রমুখ।
এর আগে সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সার্কিট হাউসে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ এবং ২০২১ সালের ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরকে কেন্দ্র করে হওয়া সংঘর্ষে নিহত শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও সংক্ষিপ্ত বৈঠক করেন এসসিপির নেতারা। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে শহরের রেলগেট এলাকা থেকে এনসিপির পদযাত্রা শুরু হয়। এ সময় দলের কেন্দ্রীয় মুখ্য সমন্বয়ক ও চাঁদপুরের বাসিন্দা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য সমন্বয়ক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পদযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জাতীয় বীর আব্দুল কুদ্দুস মাখন পৌর মুক্তমঞ্চে গিয়ে শেষ হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কর্মসূচি শেষে আজ এনসিপির নেতারা বিশ্বরোড মোড় দিয়ে বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা হয়ে হবিগঞ্জে যাবেন।