রাজনৈতিক সরকার না থাকলে কী সমস্যা হয়, প্রধান উপদেষ্টাকে বললেন মির্জা ফখরুল

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ২৩, ২০২৫, ০৪:৫৮ পিএম

রাজনৈতিক সরকার না থাকলে কী সমস্যা হয়, প্রধান উপদেষ্টাকে বললেন মির্জা ফখরুল

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের ওপর জঙ্গি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনার পর যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ, সহিংসতার প্রকাশ ঘটেছে, তাকে ‘প্রশাসনিক জটিলতা এবং আইন-শৃঙ্খলার সমস্যার’ ফল হিসেবে দেখছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেছেন, মঙ্গলবার রাতে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকেও এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সেখানে তারা দলীয় অবস্থান তুলে ধরেছেন।

“রাজনৈতিক সরকার না থাকলে এই সমস্যাগুলো আরও বৃদ্ধি পায় সেজন্য আমরা সেটাই (প্রধান উপদেষ্টাকে) বলেছি,” বলেন ফখরুল।

বুধবার, ২৩ জুলাই দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের এক বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন, মাইলস্টোনের বিমান বিধস্ত হওয়ার ব্ষিয়টিকে তারা দুর্ঘটনা হিসেবেই দেখছেন, অন্য কিছু নয়। তবে মঙ্গলবার সচিবালয়ে বিশৃঙ্খলার পেছনে ‘রাজনৈতিক সমস্যা’ এবং ‘নির্বাচন বানচালের চেষ্টা’ দেখছেন তিনি।

ফখরুলের ভাষায়, ক্ষমতায় থাকা অন্তর্বর্তী সরকারে ‘অনভিজ্ঞ লোকরাই’ সংখ্যায় বেশি; কারো কারো মধ্যে আবার ‘ইগো’ কাজ করে। তারপরও বিএনপি আগের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সরকারকে ‘সর্বাত্মক সহযোগিতা’ করে যাচ্ছে।

বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতের শোকের মধ্যে মঙ্গলবার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে দিনভর শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলে, সেখানে দুই উপদেষ্টাকে কার্যত অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।

এদিকে মঙ্গলবারের এইচএসসি পরীক্ষা পেছাতে দেরি হওয়ায় শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিতে কয়েকশ শিক্ষার্থী সচিবালয়ে ঢুকে পড়ে ভাঙচুর চালায়। সেখানে পুলিশের সঙ্গে তাদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।

ওই পরিস্থিতিতে রাতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলাম, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক করেন ইউনূস। সেখানে তিনি দলগুলো ঐক্য এবং সমর্থন চান। অন্যদিকে দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থনি দিয়ে যাওয়ার কথা বললেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের তাগিদ দেয়।

‘ঘন ঘন মতবিনিময় হওয়া উচিত’

মির্জা ফখরুল বলেন, “ক্রাইসিস সৃষ্টি হলে প্রধান উপদেষ্টা আমাদের ডাকেন, আমি যাই। তবে আমি মনে করি, এটা ঘন ঘন হলে আরও ভালো হত, তাহলে হয়ত সমস্যাগুলো তৈরি হত না।”

আগের দিনের বৈঠকের কারণ নিয়ে তিনি বলেন, “গতকাল উদ্ভূত যেটা সমস্যা হয়েছে মূলত মাইলস্টোনে দুইজন উপদেষ্টা এবং প্রেস সচিবকে তারা (শিক্ষার্থীরা) অবরুদ্ধ করে রেখেছিল এবং সচিবালয়ে পরীক্ষা সংক্রান্ত জটিলতায় ছাত্ররা ভেতরে ঢুকে পড়ে। যেটা আমার কাছে মনে হয়েছে, সকলের কাছে মনে হয়েছে যে, এটা একটা প্রশাসনিক একটা জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে এবং একটা ল অ্যান্ড অর্ডার সিচ্যুয়েশন তৈরি হয়েছিল আপনারা দেখেছে সবাই।”

গোপালগঞ্জের ঘটনা নিয়ে ফখরুল বলেন, “কিছুদিন আগে আপনারা দেখেছেন যে, গোপালগঞ্জে আপনার আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট শক্তিরা যা করেছিল, আমরা মনে করি যে, গণতন্ত্র উত্তরণের আমাদের যে প্রক্রিয়া চলছে, জুলাই-অগাস্টে কর্মসূচি চালানোর মধ্য দিয়ে যে পরিবর্তন নিয়ে আসা হয়েছে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শক্তিকে পরাজিত করা হয়েছে সেটা এই জুলাই আগস্ট মাসেই ওই শক্তির আবার উত্থানের একটা নমুনা দেখার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে।

“এটার জন্যই প্রধান উপদেষ্টা সম্ভবত আমাদেরকে যারা ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে এই সভা ডেকেছিলেন। আমরা আমাদের পূর্বের যে কমিটমেন্ট সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা সেটা বলেছি।”

ঐক্য ‘অটুট আছে’

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কথা দিয়ে ঘায়েল করার চেষ্টা বা বাকবিতণ্ডডাকে স্বাভাবিক আখ্যা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গণতন্ত্র মানে সবাইকে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে, কথা শুনতেও হবে।

এছাড়া ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য ‘অটুট আছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, এই সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হচ্ছে দ্রুত নির্বাচন দেওয়া।

বুধবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “ঐক্য অবশ্যই অটুট আছে। আপনারা মিডিয়াতে যেটা দেখেন বা আসে বা আপনারা দেখান যে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কথার ছড়াছড়ি। এদিকে কখনো পক্ষে কথা, কখনো কখনো বিপক্ষে কথা, বকাবকি। এগুলো রাজনীতিতে থাকবেই।

“রাজনীতির মানেই হচ্ছে প্রতিপক্ষকে কথা দিয়ে ঘায়েল করার চেষ্টা করা, নিজেরাটাকে স্টাবলিস করার চেষ্টা করা, সেটা নিয়ে আমরা চিন্তিত না কারণ রাজনীতির নিয়মটাই তাই। সুতরাং এই ধারা থাকবে, সেটা থেকেই রাজনীতি এগুবে। রাজনীতি থাকলেই দেশের জন্য মঙ্গল এই কথাবার্তার মধ্য দিয়ে।”

ফখরুলের কথায়, “গণতন্ত্র মানেই হচ্ছে শত ফুল ফুটতে দিতে হবে আপনাকে, গণতন্ত্র মানেই হচ্ছে সকলকে কথা বলতে দিতে হবে, গণতন্ত্র মানেই হচ্ছে প্রত্যেকের কথা শুনতে হবে। এটা হলেই শত ফুল ফুটবে, ভালো সৌরভের সুবাতাস বয়ে আসবে।”

রোজার আগে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে বলে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে যে বার্তা এসেছে, সে ব্যাপারে কোনো অস্পষ্টতা চাইছে না বিএনপি।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে দলের এই প্রত্যাশা ফের তুলে ধরা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল। আর প্রতিশ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস্ও আশ্বাস দিয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় মঙ্গলবার রাতের বৈঠকে মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোকে ডেকেছিলেন, আমরা আলোচনা করেছি, আমরা পূর্বের যে কমিটমেন্ট এই সরকারকে সহযোগিতা করার ব্যাপারে, সেটা বলেছি।

“একই সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে দ্রুত করা, তরান্বিত করা এবং উনার (প্রধান উপদেষ্টা) যে প্রতিশ্রুত ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেওয়া আমরা মনে করি অতিদ্রুত সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। এ ব্যাপারে ঘোষণা দিয়ে আর যেন কোনো অস্পষ্টতা না থাকে সেই ব্যবস্থাটা নেওয়া উচিত, দলের তরফ থেকে আমরা সেটা উনাকে বলে এসেছি। এটুকু বলেছেন যে, তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) সেই ব্যবস্থাটা নেবেন।”

ফেব্রয়ারিতে নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে সরকার আগাচ্ছে কি না প্রশ্নে ফখরুল বলেন, ‘‘আমি তো দেখছি, এগুচ্ছে।”

‘নিছক দুর্ঘটনা’

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা এটাকে দর্ঘটনা হিসেবে দেখছি, তারাও (সরকার) দূর্ঘটনা হিসেবে দেখছে। এটা দূর্ঘটনা ছাড়া আর কিছু হতে পারে না।”

“কারণ আমি যতদূর শুনেছি, আমি বিশারদ নই, বিশেষজ্ঞ নই, আমি শুনেছি যে, এই উড়োজাহাজ ওদের ট্রেনিংয়ের জন্য। অনেকে বলেছে, আগেও নাকি দুর্ঘটনা ঘটেছ, আমি জানিনা হতে পারে। কিন্তু এটা পাইলটের ট্রেনিংয়ের শেষ পর্যায়ে তাকে একা ফ্লাইটটা নিতে হবে। এখানে সামথিং ওয়াজ রং হতেই পারে। কিন্তু এয়ারক্রাফটটাকে সেইফ জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করেছেন যাকে স্কুলের উপরে না পড়ে। কিন্তু সে সেটা পারেনি।”

এই দুর্ঘটনার পরে সরকারের পদক্ষেপগুলো সঠিক ছিল কী না প্রশ্নে তিনি বলেন, “না কিছু কিছু জায়গায় হয়ত তাদের অভিজ্ঞতার কারণে কিছু ল্যাপস ছিল,এটা আমি মনে করি সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতার ব্যাপার।”

“অনভিজ্ঞ লোকেরাই বেশি আছেন, তাদের অভিজ্ঞতার অভাব আছে। আর কিছু কিছু মানুষের মধ্যে একটা সমস্যা হচ্ছে যে ইগো কাজ করে। রাজনৈতিক দলগুলোর যে অভিজ্ঞতা আছে বিশেষ করে যারা সরকারে ছিল যেমন আমরা, আমাদের সঙ্গে কথা বলা, পরামর্শ নেওয়া, মাঝে মধ্যে কথা বলা এই বিষয়গুলোতে তারা (অন্তবর্তীকালীন সরকার) একটু পিছিয়ে। আমি মনে করি এটা তাদের অভিজ্ঞতার অভাবের কারণে।”

বিশৃঙ্খলার পেছনে কী

মির্জা ফখরুল বলেন, “কিছু কিছু বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। এটাও হতে পারে যে, ডেফিনেটলি সেই ঘটনা গোপালগঞ্জের ঘটনা এটা রাজনীতি জড়িত। নির্বাচনকে বানচাল করার একটা চক্রান্ত অবশ্যই আছে। আর সচিবালয়ে ঢুকে পড়া সেখানেও কয়েকজন ফ্যাসিস্টদের লোকজনকে আটক করা এবং তাদেরকে সেখানে দেখা, বোঝা যাচ্ছে যে, তাদের কিছু কিছু সমস্যা তৈরি করার চেষ্টা সেখানে আছে।

“এটা কখনই সফল হবে না। এই ব্যাপারে বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত সজাগ ও সচেতন আছে, তারা সমস্ত প্রচেষ্টাকে সমস্ত চক্রান্তকে জনগণ নস্যাৎ করে দেবে।”

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী দলের নেতাদের সাথে বিএনপি মহাসচিবের এই বৈঠক হয়। আগামী ৩০ অগাস্টে ময়মনসিংহে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সমাবেশ উপলক্ষ্যে এই বৈঠক হয়।

বৈঠকে জাতীয়তাবাদী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী দলের সভাপতি মৃগেন হাগিদের নেতৃত্ব্ ২০ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হিন্দু বৌদ্ধ খ্র্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয়তাবাদী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী দলটি ২০০৭ সালে ১৮ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে।

Link copied!