ছবি: সংগৃহীত
গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঘটা সহিংসতায় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে বলে মনে করে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সংস্থাটি জানিয়েছে, রাজনৈতিক সমাবেশে হামলার ঘটনা নাগরিকের সভা সমাবেশের অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করেছে।
শুক্রবার, ২৫ জুলাই গণমাধ্যমে পাঠানো এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে আসক। আসক জানিয়েছে, চলতি জুলাই মাসের ২১ ও ২২ তারিখ চার সদস্য একটি প্রতিনিধিদল সরেজমিন তথ্য সংগ্রহ করে।
তথ্য সংগ্রহের সময় নিহত, আহত, আটক বা গ্রেপ্তার হওয়া নাগরিকদের পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় সাধারণ নাগরিক, পেশাজীবি, কারাগার এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আসক সদস্যরা।
সমাবেশের দিন ঘটনাস্থলে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে আসক জানিয়েছে, ‘এনসিপির নেতৃবৃন্দ স্বল্প সংখ্যক সমর্থকদের উপস্থিতিতে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগকে লক্ষ্য করে কিছু আক্রমণাত্মক মন্তব্য করা হয়। এই মন্তব্যের পরপরই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং পরবর্তীতে সংঘর্ষ ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ‘সাধারণ জনতা’ রাস্তায় নেমে আসে, একপর্যায়ে তিন ঘণ্টাব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।’
আসকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এনসিপির সমাবেশের আগের দিন সমাবেশস্থলের আশপাশের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় স্থানীয় প্রশাসন। সমাবেশের দিনে সকাল থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং তাদের সমর্থকেরা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, তাদের হাতে লাঠি-সোটা ও দেশীয় অস্ত্র ছিল।
আসক জানিয়েছে, ২১ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন মামলায় ১৮ জন শিশুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাদের অনেককে সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ এর আওতায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারের জেল সুপার তানিয়া জামান ও এআইজি (প্রিজন) দেওয়ান মোহাম্মদ তারিকুল ইসলামের বরাতে জানানো হয়েছে, এই ১৮ জনকে আদালতের আদেশে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে আসক দাবি করেছে, গোপালগঞ্জ সদর থানায় তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। গোপালগঞ্জে দায়িত্বরত সেনাবাহিনীর ক্যাম্প কমান্ডার সাকিবের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি বলেও জানায় আসক।
গোপালগঞ্জের এই সহিংসতায় এখনও পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এরা হলেন—দীপ্ত সাহা (২৫), রমজান কাজী (১৮), ইমন তালুকদার (১৭), সোহেল মোল্লা (৩২) ও রমজান মুন্সী। নিহতদের প্রত্যেকেই গুলিতে নিহত হয়েছেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।