আগস্ট ৯, ২০২৫, ০৬:১১ পিএম
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন ঘটলেও দেশের শাসনব্যবস্থায় কোনো মৌলিক পরিবর্তন আসেনি বলে মন্তব্য করেছেন সাতটি বাম দলের সমন্বয়ে গঠিত ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার নেতারা।
তাঁরা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগের সমালোচনা করে বলেন, ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না থাকা সত্ত্বেও বুর্জোয়া শক্তি ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী প্রভাবের কারণে তাঁকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছে।
শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবীর মিলনায়তনে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব মন্তব্য করা হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাম মোর্চার সমন্বয়ক ও গণমুক্তি ইউনিয়নের সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন আহম্মদ নাসু এবং সঞ্চালনা করেন বাসদ (মাহবুব) কেন্দ্রীয় সদস্য মহিউদ্দিন চৌধুরী লিটন।
বক্তারা অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়ে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতা ধরে রাখার কৌশল নিয়েছে। দেশের প্রতি চারজন নাগরিকের একজন চরম দারিদ্র্যের মধ্যে রয়েছে। কৃষি ও শিল্প খাতে বাণিজ্যিক চুক্তি করে স্থানীয় অর্থনীতি ধ্বংস করা হচ্ছে। সরকার সিন্ডিকেট বাণিজ্য, ঘুষ-দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, নারী-শিশু নির্যাতন ও মৌলবাদী সন্ত্রাস দমনে ব্যর্থ হয়েছে।
তাঁরা আরও অভিযোগ করেন, চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়া, রাখাইনে মানবিক করিডর অনুমোদন এবং বিদেশি সামরিক সরঞ্জাম কারখানা স্থাপনের মতো সিদ্ধান্ত দেশকে সাম্রাজ্যবাদী সংঘাতে জড়াচ্ছে, যা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের রক্তের দাগ শুকানোর আগেই জনগণের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে। শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন ছাড়া মুক্তি সম্ভব নয়।”
জাতীয় গণফ্রন্টের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রজত হুদা বলেন, “গণ-অভ্যুত্থানে জনগণ যে বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন দেখেছিল, তা পূরণ হয়নি।”
বাম মোর্চার নেতারা সব বামপন্থী দলকে গণবিরোধী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চালিয়ে একটি গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন ও সাম্যভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
সভায় উপস্থিত ছিলেন বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাসদ (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের আহ্বায়ক মাসুদ খান, ইউপিডিএফের সংগঠক সুনয়ন চাকমা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের আহ্বায়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান লালটু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির কার্যকরী সভাপতি আবদুল আলী প্রমুখ।