আমরা গাছ লাগাই আর বিএনপি-জামায়াত সেগুলো ধ্বংস করে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ।
শুক্রবার (১৪ জুন) বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে রাজধানীর মুগদায় ‘২৩ ই জুন: আওয়ামী লীগের প্লাটিনামজয়ন্তী’ উপলক্ষে আওয়ামী যুবলীগ আয়োজিত দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই কথা বলেন তিনি।
এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন ও সভাপতিত্ব করেন শেখ ফজলে শামস্ পরশ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। এটি সঞ্চালনা করেন আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
আরও পড়ুন: দেশের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বেশি করে গাছ লাগাতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
শেখ পরশ বলেন, “আপনাদের মনে আছে, ২০১৩ সালে সরকার উৎখাতের নামে বিএনপি-জামায়াত বৃক্ষ নিধন করেছে। শুধু মানুষ আর মানুষের সম্পদ পুড়িয়ে তারা ক্ষ্যান্ত হয়নি, তারা জীব-জন্তু, গরু, ছাগলও পুড়িয়েছে ও লাখ লাখ বৃক্ষও কেটেছে তারা। আমরা গাছ লাগাই আর ওরা সেগুলো ধ্বংস করে। এই তাদের চরিত্র।”
তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগ আত্মকেন্দ্রিক, বর্তমান নির্ভর রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। সুদূরপ্রসারী ও সার্বজনীন রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ বিশ্বাসী। ১৯৭২ সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আয়োজন করেছিলেন। ‘৯৬ সালে সরকার গঠন করে জননেত্রী শেখ হাসিনাও পরিবেশ রক্ষার্থে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখেন। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে নিজেদের পকেট ভারীর রাজনীতিতে গা ভাসিয়ে দিয়ে পরিবেশ রক্ষায় কোনও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি, বরং আমাদের পিছিয়ে দিয়েছে।”
আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে আমাদের সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীতে পরিবেশ রক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে ১৮ অনুচ্ছেদে সংযোজন আনা হয়েছে জ যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, “পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা এখন নাগরিকের জন্য বাধ্যতামূলক। আমরা শুধু আমাদের নিজেদের সুরক্ষা নয়, আন্তর্জাতিকভাবে পরিবেশের সুরক্ষায় বাংলাদেশ ভূমিকা রাখছে। আর প্রকৃতিকে রক্ষা করা সবারই কর্তব্য। কারণ প্রকৃতি থেকে আমরা সবকিছুই পেয়ে থাকি। আমরা বলি, দেশ এবং দেশ মাতৃকাকে রক্ষা করতে আমাদের পূর্বপুরুষরা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছে, প্রাণ দিয়েছে। দেশ যদি মায়ের মতো হয়, তবে প্রকৃতিও আমাদের বড়-মা।”
প্রাকৃতিক দুর্যোগের একটা অন্যতম প্রধান কারণ বৃক্ষ নিধন উল্লেখ করে যুবলীগের এই নেতা বলেন, “নগরায়ণের সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর পরিমাণের বৃক্ষ নিধন হয়ে থাকে, যার কারণে পরিবেশ হয় বিপন্ন ও ভারসাম্যহীন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে দেশ, দেশের জনগণ ও প্রকৃতির সুরক্ষাই সরকারের অন্যতম লক্ষ্য।”
পরিবেশ রক্ষায় বাসা-বাড়ির চারপাশ ও অফিসের ফাঁকা জায়গায় গাছের চারা রোপণের আহ্বান জানিয়ে শেখ পরশ বলেন, “আমাদের সুন্দর জীবন ও সুস্বাস্থ্যের জন্য সুন্দর পরিবেশ দরকার। সেদিকে সবাইকে সচেতন হতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আষাঢ়-শ্রাবণ ও ভাদ্র মাস বৃক্ষরোপণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। তবে এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। কারণ শুধু বৃক্ষরোপণ করলেই চলবে না, বৃক্ষ পরিচর্যাও করতে হবে।”
যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, “আগামী প্রজন্মের টেকসই বাংলাদেশ উন্নয়নের জন্য বৃক্ষরোপণ তথা উন্নত প্রাকৃতিক পরিবেশের কোনও বিকল্প নেই।”
এই নেতা বলেন, “গত ৩ বছরে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে প্রতি বছর কমবেশি এক কোটি বৃক্ষরোপণ করেছি। এবারও আমাদের সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।”
দেশব্যাপী যুবলীগ নেতাদের গাছ লাগানোর নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, “এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেবেন। নামকাওয়াস্তে দায়সারাভাবে গাছ লাগাবেন না, গাছের পরিচর্যাও প্রয়োজন। এমন জায়গায় লাগাবেন না- যেটা মানুষের যাতায়াতের পথে পড়ে।”
অনুষ্ঠানের উদ্বোধক যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, “গাছ শুধু লাগালেই হবে না, গাছ বাঁচাতেও হবে। এই দেশ আমাদের। আজকের জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে, আমাদের সবুজ বাংলাকে আরও সবুজ রঙে আঁকতে হবে। বর্তমান সরকার ২০৩০ সাল নাগাদ দেশের বনভূমি এলাকা বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করতে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছেন। আমাদের জনসচেতনামূলক কাজ করে সরকারের এই লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে হবে।”
জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য অস্তিত্বের সংকট: পরিবেশমন্ত্রী
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, “আমরা কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশের যেসব চ্যালেঞ্জ আছে তাকে বাংলাদেশের জন্য একটা অস্তিত্বের সংকট হিসেবে নিয়েছি। কারণ যেভাবে সমদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, যেভাবে হিমালয়ের বরফ গলছে, তাতে বাংলাদেশের বড় একটা অংশ পানির নিচে তলিয়ে যাবে।”
পরিবেশমন্ত্রী আরও বলেন, “প্রতিদিন নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি হারানো মানুষ ঢাকা শহরে আসছে, একটা পর্যায়ে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হবে। এসব পরিবেশগত বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে হলে বেশি করে গাছ লাগাতে হবে, পাহাড় রক্ষা করতে হবে।”
আওয়ামী যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সভাপতিত্বে ও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিলের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইনদ্দিন রানা ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এইচ এম রেজাউল করিম রেজাসহ যুবলীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এতে মন্ত্রী ও অন্যান্য অতিথিরা গাছের চারা রোপণ এবং বিতরণের মাধ্যমে আওয়ামী যুবলীগের দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।