মাওলানা আকরম খাঁ: আড়ালের সূর্য হয়েই আছেন যিনি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ৭, ২০২৩, ১১:৪১ পিএম

মাওলানা আকরম খাঁ: আড়ালের সূর্য হয়েই আছেন যিনি

বাঙালি মনীষী হিসেবে অবিভক্ত বাংলায় যারা অসামান্য অবদান রেখেছেন— আজ তাদের অনেকেই আড়াল হয়ে গেছেন। জনসাধারণের কাছে তেমন পরিচিত নন। কেন তাদের দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে, তার ঠিকঠাক কোনো যুক্তিও নেই। তেমনি একজন আড়ালের সূর্য মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ। সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক এবং ইসলামী পণ্ডিত।

বাংলা ভাষার ঐতিহাসিক পত্রিকা দৈনিক আজাদের প্রতিষ্ঠাতা এবং মাসিক মোহাম্মদী সম্পাদনা করেছেন মাওলানা আকরম খাঁ। বাঙালি মুসলমানের ভাষা হিসেবে বাংলার পক্ষে আকরম খাঁর ভূমিকা তৎকালীন রক্ষণশীল সমাজের প্রেক্ষিতে ছিল ঐতিহাসিক।

আবদুল গাফফার চৌধুরীর ভাষ্যে ‘কিংবদন্তির রাজা’ আকরম খাঁ ১৯৫২ সালে মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণ এবং সালাম, জব্বার, রফিক, বরকতসহ কয়েকজনকে হত্যার প্রতিবাদে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যপদ ত্যাগ করেন। এবং তিনি প্রথম শহীদ মিনার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।

১৮৬৮ সালে ৭ জুন পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার হাকিমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আকরাম খাঁ। তার লেখালেখির শুরু আকবার-ই-মোহাম্মদী পত্রিকার মাধ্যমে। সাংবাদিকতা শুরু করেন সাপ্তাহিক আহলে হাদীসে। তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কম থাকলেও খুব অল্প বয়সেই তিনি সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হন এবং সফল হন।

পাকিস্তান হওয়ার পর রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের দ্বন্দ্বে মুসলিম লীগের নেতা হওয়ার পরও তিনি রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে ছিলেন। ‘বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য পত্রিকা’য় লেখেন, ‘দুনিয়ায় অনেক রকম অদ্ভুত প্রশ্ন আছে, বাঙালি মুসলমানের মাতৃভাষা কী? উর্দু না বাংলা? এই প্রশ্নটা তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা অদ্ভুত। নারিকেল গাছে নারিকেল ফলবে, না বেল? বঙ্গে মুসলিম ইতিহাসের সূচনা হইতে আজ পর্যন্ত বাংলা ভাষায় তাদের লেখ্য, কথ্য ও মাতৃভাষারূপে ব্যবহৃত হইয়া আসিতেছে এবং ভবিষ্যতেও মাতৃভাষারূপে ব্যবহৃত হইবে।’

১৯১৯ থেকে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত তিনি খেলাফত এবং অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯২০ সালে ঢাকার আহসান মঞ্জিলে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে তিনি নিখিল ভারত খেলাফত আন্দোলন কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। ব্রিটিশবিরোধী আজাদি আন্দোলন, অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলন, কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের সম্মুখ সারির নেতা ছিলেন তিনি।

পল্লীকবি জসিম উদ্দীন তাঁকে ‘জাতির মহান পিতা’ বলে অভিহিত করেছেন। যত দিন বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা- সাহিত্য এবং সংস্কৃতি থাকবে, তত দিন মাওলানা আকরম খাঁও প্রোজ্জ্বল আলোকবর্তিকাস্বরূপ এ সবের আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা থাকবেন।

Link copied!