শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ১৯, ২০২৫, ০৫:০৩ পিএম

শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়

জুমার নামাজের পর, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় এলাকায়  ছিলেন ফ্রিল্যান্স ফটোসাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়। হঠাৎ করে পুলিশের ছোড়া একটি গুলি এসে লাগে তার মাথায়। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন প্রিয়। আর কোনোদিন উঠে দাঁড়াতে পারেননি।

রংপুরের কামালকাচনা গ্রামের সন্তান প্রিয় ছিলেন পরিবারের একমাত্র সন্তান। বাবা আবু হেনা মোস্তাফা জামাল ও মা সামসি আরা জামানের চোখের মণি। 

ছোটবেলা থেকেই তার গভীর আগ্রহ ছিল আলোকচিত্রে। সেই আগ্রহই তাকে নিয়ে আসে ঢাকায়ভর্তি হন ‘পাঠশালাতে। ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন একজন স্বপ্নবাজ ফটোসাংবাদিক।

প্রিয় কাজ করেছেন অনলাইন মাল্টিমিডিয়া পোর্টাল ‘দ্য রিপোর্ট-এ। সাধারণ এক চাকরি, ছোট্ট সংসার, মা ও কন্যা পদ্মপ্রিয় পারমিতাকে ঘিরেই ছিল তার জীবন। কিন্তু ছবির ভাষায় সমাজ বদলানোর এক বড় স্বপ্ন লালন করতেন। হয়তো সেজন্যই ছিলেন নির্ভিকঅন্যায়ের বিরুদ্ধে চোখ তুলে তাকাতেন।

২০২৪ সালের ‘জুলাই আন্দোলনের দিন, বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে ৩টা ৪০ মিনিটের মধ্যে ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়পুলিশের ছোড়া গুলি সরাসরি লাগে তাহির জামান প্রিয়র মাথায়। আশপাশে গুলির আওয়াজে কেউ কাছে যেতে পারেননি, নেয়া যায়নি হাসপাতালে। রাত ১০টার দিকে ঢাকা মেডিকেলে উদ্ধার হয় তার নিথর দেহ।

তার মা সামসি আরা জামান বারবার বলেন, প্রিয় ছবি তুলতে গিয়েছিল, অপরাধ করেনি। আমার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। মামলা করেছি, বিচার চাই। কিন্তু কেউ শুনছে না!”

আজও প্রিয়র ছোট মেয়ে পদ্ম খোঁজে বাবাকে। পথে-ঘাটে পুলিশ দেখলেই বলে

তোমরা আমার বাবাকে মেরেছো। আমার প্রিয় বাবা আমার কাছে আসে না। আমার প্রিয় বাবা আমাকে বেড়াতে নিয়ে যাবে।

সাংবাদিকদের নিরাপত্তা বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের তথ্যমতেগত ১৫ বছরে বাংলাদেশে শহীদ হয়েছেন ৬১ জন সাংবাদিক। ২০২৪ সালের ‘জুলাই আন্দোলনে প্রাণ হারিয়েছেন ৬ জন। তাদের একজন তাহির জামান প্রিয়।

প্রিয় ছিলেন একজন সৎ মানুষ, ছিলেন সাহসী চোখযিনি সমাজের নির্মম বাস্তবতা তুলে ধরতে গিয়ে নিজেই হারিয়ে গেছেন। কিন্তু প্রিয়দের যে স্বপ্ন ছিলএকটি সত্যভিত্তিক, ন্যায়ের বাংলাদেশসেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন কবে হবে?

এই প্রশ্ন এখনো তাড়া করে বেড়ায় অনেককেই।

Link copied!