মারা গেলেন কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়। অন্ত্রের অস্ত্রোপচারের পর হৃদরোগে আক্রান্ত হন প্রবীণ এই শিল্পী। শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতির কারণে সোমবার রাতে তাঁকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। দীর্ঘ লড়াই শেষে শনিবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। ভারতের একাধিক গণমাধ্যম তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।
প্রতুল মুখোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪২ সালের ২৫ জুন, অবিভক্ত বাংলার বরিশালে। তাঁর বাবা প্রভাতচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন একজন সরকারি স্কুলশিক্ষক। দেশভাগের পর প্রতুলের মা বাণী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁরা পশ্চিমবঙ্গে চলে যান এবং চুঁচুড়ায় বসবাস শুরু করেন। ছোটবেলা থেকেই কবিতায় সুর দেওয়ার প্রতি আগ্রহী ছিলেন তিনি। কবি মঙ্গলচরণ চট্টোপাধ্যায়ের লেখা **‘আমি ধান কাটার গান গাই’** কবিতায় সুর দেওয়ার মাধ্যমে তাঁর সংগীতজীবনের সূচনা হয়। নিজেও গান লিখতেন, যদিও কখনও প্রথাগত সংগীতশিক্ষা নেননি। হৃদয়ের গভীর আবেগকেই তিনি সুর ও কথার মোহনায় বেঁধে রাখতেন।
হাসপাতালের শয্যায় শুয়েও চিকিৎসকদের গেয়ে শুনিয়েছেন তাঁর কালজয়ী সৃষ্টি **‘আমি বাংলায় গান গাই’**। গানের সেই কথার মতো ‘এই বাংলার মায়াভরা পথে’ তিনি আর হাঁটতে পারবেন না, কিন্তু তাঁর সৃষ্টি অমর হয়ে থাকবে। শুধু এই গানই নয়, প্রতুল মুখোপাধ্যায় তাঁর সংগীতজীবনে অসংখ্য অনবদ্য গান উপহার দিয়েছেন। বাংলা আধুনিক সংগীত থেকে জাপানি গান, এমনকি হিন্দি চলচ্চিত্রের সুর থেকেও অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি সৃষ্টি করেছেন অসংখ্য গান।
প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের প্রথম অ্যালবাম ‘পাথরে পাথরে নাচে আগুন’প্রকাশিত হয় ১৯৮৮ সালে, যদিও সেটি ছিল যৌথ অ্যালবাম। ১৯৯৪ সালে আসে তাঁর প্রথম একক অ্যালবাম ‘যেতে হবে’। আর ২০২২ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর শেষ অ্যালবাম ‘ভোর’, যেখানে সংকলিত হয়েছিল অপ্রকাশিত গানগুলো।
তাঁর জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে ‘আমি বাংলায় গান গাই’, ‘আলু বেচো’, ‘ছোকরা চাঁদ’, ‘তোমার কি কোনও তুলনা হয়’, ‘সেই মেয়েটি’, ‘ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ’-এর মতো গান, যা শ্রোতাদের মন জয় করেছে বারবার। তবে নিজের গানে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহারকে তিনি কখনোই প্রাধান্য দেননি, বরং কণ্ঠের শক্তিতেই তিনি প্রকাশ করেছেন তাঁর আবেগ ও সুরের অনন্যতা।