মে ২৭, ২০২৫, ০৭:৫৯ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
দেশের সর্বত্র সামগ্রিক অরাজক পরিস্থিতি ও “৭১’র যুদ্ধাপরাধী” এটিএম আজহারুল ইসলামের বেকসুর খালাস পাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।
মঙ্গলবার, ২৭ মে জোটের এক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীতাকারী, আলবদর, আলসামস বাহিনী গঠন করে হত্যা, খুন, অগ্নিসংযোগ, নারী ধর্ষণসহ মানবতা বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার সাথে জড়িতদের সকলের বিচার এখনও সম্পন্ন হয়নি। দীর্ঘ সময় পরে হলেও যাদের বিচার হয়েছে তাদের সকলের রায় বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্যে কার্যকর করেনি। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার বিগত আমলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা আজহারুল ইসলামের সেই রায় বাতিল করে তাকে বেকসুর খালাস দেওয়ায় দেশবাসীর মনে প্রশ্ন বর্তমান সরকারের সময়েও বিচার বিভাগ কী স্বাধীনভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে?
নেতৃবৃন্দ দেশে গণতন্ত্রের স্বার্থে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার প্রশ্নে ’৭১-এর গণহত্যকারী ও তাদের সহযোগীদের বিচার নিশ্চিত করা এবং ২৪ এর গণহত্যাকারীদের বিচার প্রক্রিয়া দৃশ্যমান করার দাবি জানান।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে ভুলিয়ে দিয়ে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে যে সকল অপশক্তি তৎপর রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য এবং ’৭১-এর গণহত্যাকারী ও ২৪-এর গণহত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হওয়া জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিগত আমলে যেমন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় গণহারে সকলের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। একইভাবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও বেশ কিছু মামলায় সকলকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। এতে করে বিচার ও আইনের শাসন সম্পর্কে জনমনে অনাস্থা, অবিশ্বাস তৈরী হচ্ছে যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তোরণের পথে এক অশনি সংকেত।
বাম জোটের নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশে শাসন ক্ষমতার কেন্দ্র সচিবালয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীরা সমাবেশ বিক্ষোভ করছে, পল্লী বিদ্যুতের কর্মীরা কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা ধর্মঘটে, এনবিআর এর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কলম বিরতি পালন করছে। বিগত ফ্যাসিস্ট শাসনামলে বিচার বিভাগকে দলীয়করণ ও ফরমায়েসী রায়ের দরবারে পরিণত করে জনগণের আস্থাহীনতায় পর্যবসিত করা হয়েছিল। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল দেশে গণতান্ত্রিক আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে। কিন্তু সর্বত্র সার্বিক অরাজক পরিস্থিতি দেখে দেশবাসী এমনিতেই উদ্বিগ্ন ও হতাশাগ্রস্থ এই ভেবে যে, এত রক্তপাত, আত্মত্যাগের পরেও কি গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ন্যায় বিচার অধরাই থেকে যাবে?
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিগত আওয়ামী শাসনামলে যেমন বিচারের নামে প্রহসন হয়েছে, গণগ্রেপ্তার, গায়েবি মামলা, গণহারে আসামি করে ফরমায়েশি রায়ে নাগরিকদের হয়রানি করা হয়েছে, জেলের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে পুরে রাখা হয়েছে, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে গণহত্যার জন্য প্রকৃত দায়ীদের চিহ্নিত করে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে সুনির্দিষ্ট ব্যক্তির নামে মামলা না করে ঢালাও গণহারে মামলা দিয়ে বাস্তবে বিচার প্রক্রিয়াকে দুর্বল বা প্রকৃত অর্থে বিচারকে অস্বীকার করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ঢালাও গণমামলার আসামিদের কাছ থেকে পুলিশ ও কিছু রাজনৈতিক দলের লোকজনকে চাঁদাবাজির সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
বিবৃতি প্রদান করেছেন –বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক কমরেড ইকবাল কবির জাহিদ, সিপিবির সভাপতি কমরেড শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাসদ (মার্কসবাদী)-র সমন্বয়ক কমরেড মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোশরেফা মিশু এবং সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি কমরেড আব্দুল আলী।