জুন ২, ২০২৫, ১০:০৩ পিএম
বাজেট নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার ঝড়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলছে এটি বাস্তবতানির্ভর ও বিনিয়োগবান্ধব বাজেট—কিন্তু বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ভাষায়, এই বাজেট একদিকে ঋণনির্ভর, অন্যদিকে দেশীয় শিল্প ও সাধারণ মানুষের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। বাজেটের মৌলিক কাঠামোতে কোনও পরিবর্তন নেই, বরং এতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং স্থানীয় শিল্প খাতে তৈরি হয়েছে নতুন সংকট।
জামায়েত ইসলামী বাংলাদেশ বলেছে, বাজেটে বিভিন্ন ধরনের পরোক্ষ কর বৃদ্ধির মাধ্যমে রাজস্ব বৃদ্ধির উদ্যোগ দেখা গেলেও প্রত্যক্ষ কর বৃদ্ধির তেমন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। পরোক্ষ কর বৃদ্ধির কারণে দেশের সাধারণ মানুষকে এর ভার বহন করতে হবে। রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য ভ্যাট ও আমদানি শুল্কখাতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে।
এছাড়া স্থানীয় শিল্পের কর অবকাশ ও ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা সংকুচিত করা হয়েছে। এতে দেশীয় পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে। পাশাপাশি এসি, ফ্রিজ, মোবাইল ফোন এবং এলইডির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোক্তার খরচ বৃদ্ধি পাবে। অপরদিকে সুতার আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করায় আরএমজি সেক্টরে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। ফলে তৈরী পোশাক শিল্পের রপ্তানীর উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবতা বিবর্জিত এবং এতে গুণগত কিংবা কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন নেই। বনানীর হোটেল সেরিনায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এই বাজেটে রাজস্ব আয়ের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। ব্যাংক হতে সরকার যদি লোন নেয়, তখন প্রাইভেট সেক্টরে বিনিয়োগ হয় না। রাজস্ব আয়ের পুরোটাই পরিচালনা ব্যয়ে চলে যাবে।
তিনি আরও বলেন, রাজস্ব আয়ের ওপর ভিত্তি করে বাজেট করা উচিত। বাজেটের মৌলিক দিক নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করে আমির খসরু বলেন, এই বাজেটে মৌলিক জায়গায় দূরত্ব রয়ে গেছে।
তিনি বলেন, গুনগত দিক থেকে আমরা কোন পরিবর্তন দেখি না। কাঠামোগত কিন্তু আগেরটাই রয়ে গেছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্মমহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজটের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন,এই বাজেটের চরিত্র ও ধরণ দেখে একে গতানুগতিক ধারার রক্ষণশীল বাজেট বলেই প্রতিয়মান হচ্ছে। বাজেটে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখা, সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির প্রস্তাব রাখা, শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়ন খাতের ওপরে গণযোগাযোগ ও জ্বালানীখাতকে প্রধান্য দেয়ার মতো অতিতের ধারা অব্যহত রাখায় এই বাজেটকে গতানুগতিক বলেই মনে হচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানের ফলে গঠিত সরকারের কাছে আরো সুচিন্তিত ও বৈপ্লবিক বাজেট প্রত্যাশা করা হয়েছিলো; এই বাজেট সেই প্রত্যাশাকে আঘাত করেছে।
খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ঋণনির্ভর এ বিশাল ঘাটতি বাজেটে জনগণের অর্থনৈতিক বৈষম্য তেমন কমছে না। সরকারি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও বাজেট ঘাটতি কমানোর ওপর জোর দেয়া হলেও রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা গত বছরের চেয়ে বাড়িয়ে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। এতে জনগণের উপর করের বোঝা আরো বাড়াবে।